EV Insurance in India: বর্তমানে ভারতের অটোমোটিভ খাত এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলেছে। বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং সেইসঙ্গে বিকাশ পাচ্ছে ইভি-নির্ভর বীমা শিল্পও। বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ইভি বিমার চাহিদাও বাড়ছে, কারণ ভোক্তারা বিশেষায়িত বিমা কাভারেজের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন।
২০২৪ সালে ভারতের ইভি বিমা বাজারের মূল্য দাঁড়িয়েছে ১১.৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন যে, ২০৩৪ সালের মধ্যে এই বাজারের আকার ১,০৫৩.১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যার বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৫৭.৩ শতাংশ। এই দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পে ভুল-ত্রুটির সম্ভাবনা থাকাটাই স্বাভাবিক, যার থেকে শিক্ষা নিচ্ছে sowohl বিমা সংস্থাগুলি, তেমনি ভোক্তারাও।
এই শিল্প এখনও তার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, ফলে অনেক ভোক্তার মাঝেই কিছু ভুল ধারণা কাজ করছে। নিচে তুলে ধরা হলো এমনই কিছু প্রচলিত মিথ এবং তার বাস্তবতা:
মিথ: ইভি বিমার প্রিমিয়াম খরচ অত্যধিক বেশি
বাস্তবতা: বর্তমানে ইভি বিমার খরচ ঐতিহ্যবাহী অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন (ICE) গাড়ির তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও ধীরে ধীরে এই ব্যবধান কমছে। এর মূল কারণ হচ্ছে ব্যাটারির উচ্চ মূল্য, বিশেষজ্ঞ টেকনিশিয়ানের প্রয়োজন এবং কিছু অঞ্চলে ইভির যন্ত্রাংশের সীমিত প্রাপ্যতা। তবে EV এর পরিকাঠামো দ্রুত বাড়ছে, যার ফলে বিমা কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম কমাতে শুরু করেছে। অনেক সংস্থা ইভি বিমায় ছাড় দিচ্ছে, কারণ তারা বুঝছে যে এই যানবাহনগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম এবং জ্বালানি খরচ একেবারেই নেই। উপরন্তু, সরকারের পক্ষ থেকেও নানা ধরনের প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে ইভি ব্যবহারে উৎসাহ জাগাতে।
মিথ: ইভি বিমায় ব্যাটারির ক্ষতির কোনো নিরাপত্তা নেই
বাস্তবতা: আসলে, বেশিরভাগ ইভি বিমা পরিকল্পনায় ব্যাটারি সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতি কভার করা হয়। দুর্ঘটনা, চুরি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো পরিস্থিতিতে ব্যাটারির ক্ষয়ক্ষতির জন্য অর্থ প্রদান করা হয়। কম্প্রিহেনসিভ এবং কোলিশন কাভারেজের মধ্যে ব্যাটারির মেরামত বা পরিবর্তনের খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে। চুরির বিমায় পুরো গাড়ির পাশাপাশি ব্যাটারিও কভার করা হয়। এমনকি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, ঝড় বা অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রেও ব্যাটারিসহ ইভির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের নিরাপত্তা প্রদান করা হয়।
মিথ: উন্নত নিরাপত্তা ফিচারের কারণে ইভি গাড়ি দুর্ঘটনাবিহীন, তাই বিমার প্রয়োজন হয় না
বাস্তবতা: ইভি গাড়িগুলোতে সত্যিই অটোমেটিক ব্রেকিং, লেন কিপিং এবং অ্যাডাপটিভ ক্রুজ কন্ট্রোলের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। তবে এগুলো দুর্ঘটনা পুরোপুরি ঠেকাতে পারে না। অনেক সময় ধীরগতিতে চলা ইভির শব্দ কম থাকার কারণে পথচারী বা সাইক্লিস্টরা এগুলো টের পান না, ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি, উচ্চ টর্কের কারণে হঠাৎ করে গতি বেড়ে যাওয়ার ফলে নতুন চালকদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। বিমা কোম্পানিগুলো এই বিশেষ পরিস্থিতিগুলোর কথা মাথায় রেখে ইভি বিমায় মোটর লাইবিলিটি, পার্সোনাল ইনজুরি এবং যানবাহন ক্ষতির মতো ঐতিহ্যবাহী কভারেজের পাশাপাশি চার্জিং সংক্রান্ত সমস্যা এবং সফটওয়্যারের ত্রুটি নিয়েও কভারেজ প্রদান করছে।
ইভি বিমায় কী কী সুবিধা পাওয়া যায়?
একটি পরিপূর্ণ ইভি বিমা পরিকল্পনায় সাধারণত নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো থাকে:
- নিজস্ব ক্ষতির বিমা (Own Damage Cover): দুর্ঘটনা, চুরি, আগুন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষতির জন্য কভার।
- তৃতীয় পক্ষের দায় (Third-Party Liability): অন্য কারো গাড়ি বা সম্পত্তিতে ক্ষতির জন্য আইনি খরচের কভার।
- ব্যাটারি কভারেজ: ব্যাটারির চুরি বা ক্ষয়ক্ষতির ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা।
- চার্জিং যন্ত্রপাতি কভারেজ: বাড়িতে চার্জার স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির জন্য বিমা।
- রোডসাইড সহায়তা: জরুরি পরিস্থিতিতে গাড়ি টোয়িং, দ্রুত চার্জিং বা ছোটখাটো মেরামতের জন্য সহায়তা।
চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ইভির উচ্চ দাম, সীমিত চার্জিং পরিকাঠামো এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ পাওয়ার সিস্টেমের অভাব বিমা কোম্পানির জন্য এখনো চ্যালেঞ্জ। তবুও, তারা নতুন ধরনের বিমা পরিকল্পনা চালু করছে, যার মধ্যে ব্যাটারির জীবনকাল গ্যারান্টি, আলাদা রোডসাইড সহায়তা এবং সরকারের ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত। ব্যাটারির উন্নতি এবং চার্জিং প্রযুক্তির বিকাশ ভবিষ্যতে বিমার খরচ কমাতে সাহায্য করবে।
এইভাবে ইভি বিমা বাজার শুধু বাড়ছেই না, বরং এক নতুন দিশাও তৈরি করছে ভারতের অটোমোটিভ এবং বিমা শিল্পের জন্য।