গাড়ি ও যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ভারত এবং EU-এর যৌথ বিনিয়োগের ডাক

নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত অটোমোটিভ কম্পোনেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (ACMA)-এর 65তম বার্ষিক অধিবেশনে অংশ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) ট্রেড কমিশনার মারোস সেফকোভিচ শুক্রবার বলেন, ভারত ও…

PLI Scheme to Boost Auto & EV Sector

নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত অটোমোটিভ কম্পোনেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (ACMA)-এর 65তম বার্ষিক অধিবেশনে অংশ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) ট্রেড কমিশনার মারোস সেফকোভিচ শুক্রবার বলেন, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অংশীদারিত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা উচিত অটোমোটিভ খাত।

তিনি বলেন, “ইউরোপের প্রকৌশল দক্ষতা ও সবুজ প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা ভারতের ক্রমবর্ধমান বাজার ও উৎপাদন সক্ষমতার সঙ্গে মিলিত হলে তা উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে, কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং দুই অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।”

   

বিনিয়োগের মাধ্যমেও ভারত-EU সম্পর্ক শক্তিশালী হচ্ছে

সেফকোভিচ উল্লেখ করেন, শুধুমাত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই নয়, বরং উচ্চমূল্য সংযোজন করা বিনিয়োগের মাধ্যমেও ভারত-EU সম্পর্ক শক্তিশালী হচ্ছে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “ভারতের গাড়ি শিল্প যেমন পুনেতে ভলকসওয়াগেন ও মার্সিডিজ বেঞ্জ কারখানায় কর্মসংস্থান তৈরি করছে, তেমনিভাবে ইউরোপীয় বিনিয়োগ আরও হাজার হাজার চাকরির সুযোগ তৈরি করবে।”

এই সংক্রান্ত আরও খবর: Kawasaki-র এই বাইকে চলছে ২০,০০০ টাকা ডিসকাউন্ট, অফার সীমিত সময়ের

তিনি আরও জানান, এই সম্পর্ক কেবল গাড়ি নয় বরং পুরো ইকোসিস্টেমকে ঘিরে—গাড়ির যন্ত্রাংশ, সরঞ্জাম, সফটওয়্যার থেকে শুরু করে গবেষণা ও উন্নয়ন, উৎপাদন মান নির্ধারণ, এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাতেও যৌথ ভূমিকা রাখতে হবে।

ভারত-EU মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA):

সেফকোভিচ জোর দিয়ে বলেন, ভারত-EU মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) সম্পূর্ণ হলে তা দুই অঞ্চলের গাড়ি শিল্পের জন্য যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, “আমার লক্ষ্য হচ্ছে, ট্যারিফ লিবারালাইজেশনের মাধ্যমে ইঞ্জিন থেকে শুরু করে ব্রেক পর্যন্ত প্রতিটি উপাদানের জন্য দুইমুখী বাণিজ্য প্রবাহ সহজ করা। এতে ভারতের বাজারে নতুন প্রযুক্তি দ্রুত প্রবেশ করবে এবং যৌথভাবে আমরা উন্নত কম্বাস্টশন ইঞ্জিন, ইলেকট্রিক ভেহিকল, আধুনিক ব্যাটারি প্রযুক্তি ও স্মার্ট মোবিলিটি সমাধান তৈরি করতে পারব।”

Advertisements

তিনি জানান, ভারত ও EU ২০২৫ সালের শেষের আগেই এফটিএ চূড়ান্ত করার পথে এগোচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে হওয়া চুক্তির ভিত্তিতেই আলোচনাগুলো দ্রুত এগোচ্ছে। সেফকোভিচ আশ্বাস দিয়ে বলেন, “দুই পক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকায় নির্ধারিত সময়ে চুক্তি সম্পন্ন হবে বলে আমি আত্মবিশ্বাসী।”

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা:

বর্তমান বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বাণিজ্য বিঘ্নতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমাদের নতুন বাস্তবতায় সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে এবং ঝুঁকির বিরুদ্ধে নিজেদের সুরক্ষিত করতে হবে। এজন্যই আমরা এমন একটি চুক্তির দিকে এগোচ্ছি যা বিনিয়োগ উন্মুক্ত করবে, প্রতিবন্ধকতা কমাবে, বাজার প্রবেশাধিকার বাড়াবে এবং সাপ্লাই চেইনকে শক্তিশালী করবে।”

ভারত-EU বাণিজ্যের বর্তমান অবস্থা:

ইউরোপীয় ট্রেড কমিশনারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকেও পিছনে ফেলেছে। বর্তমানে ভারতে কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রায় ৬,০০০ ইউরোপীয় কোম্পানি, আর ২০২৩ সালে দুই অঞ্চলের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক পণ্যের বাণিজ্য দাঁড়িয়েছিল ১৪০ বিলিয়ন ইউরোতে।

সার্বিকভাবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিতে ভারতের দ্রুত বিকাশমান অটোমোটিভ খাত কেবল বাণিজ্য নয়, টেকসই উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, উদ্ভাবন এবং বৈশ্বিক প্রযুক্তি নেতৃত্বের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বের ভিত্তি তৈরি করছে।