ভারতে বিক্রিত টু-হুইলার নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের। এবার সমস্ত দু’চাকার গাড়িতে অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম (এবিএস বা ABS) বাধ্যতামূলক হচ্ছে। হ্যাঁ, ঠিকই দেখেছেন। দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ভারতের সড়ক পরিবহণ ও হাইওয়ে মন্ত্রক (MoRTH) ঘোষণা করেছে যে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশের প্রতিটি নতুন টু-হুইলার, অর্থাৎ বাইক এবং স্কুটারে, এবিএস অত্যাবশ্যক করা হবে।
জানিয়ে রাখি, বর্তমানে ১২৫ সিসির বেশি ইঞ্জিন যুক্ত টু-হুইলারে এবিএস (ABS) থাকা বাধ্যতামূলক, কিন্তু এবার তা সব ধরনের ইঞ্জিন ক্যাপাসিটিতে চালু হতে চলেছে। এই সিদ্ধান্ত সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা বাড়াতে বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিদ্যমান টু-হুইলারগুলির জন্য কী নিয়ম
সরকার শুধুমাত্র নতুন মোটরসাইকেল বা স্কুটারের জন্যই নয়, বরং বর্তমান বাজারে থাকা মডেলগুলির জন্যও নির্দেশ দিয়েছে। কোম্পানিগুলিকে সময় দেওয়া হয়েছে ২০২৬ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত যাতে তারা তাদের পুরনো মডেলগুলিকে এবিএস প্রযুক্তি সহ আপডেট করতে পারে। বর্তমানে ১২৫ সিসির নিচের টু-হুইলারগুলিতে কম্বি ব্রেকিং সিস্টেম (CBS) ব্যবহার হয়, যেখানে সামনের ও পিছনের ব্রেক একসঙ্গে কাজ করায় ভারসাম্য বজায় রাখে।
তেজস্বী যাদবের লেখায় শাহনওয়াজের কটাক্ষ, নীতীশের নেতৃত্বে ভরসা!
মূল্যে প্রভাব
এই নতুন নিয়ম চালু হলে টু-হুইলারের দাম কিছুটা বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে এন্ট্রি-লেভেল বাইকে যেখানে এখনো ABS প্রযুক্তি নেই, সেখানে দাম ₹৫,০০০ থেকে ₹৭,০০০ পর্যন্ত বাড়তে পারে। যদিও এর ফলে বাইক চালানোর নিরাপত্তা অনেকটাই বাড়বে, বিশেষ করে নতুন চালকদের জন্য।
ABS কীভাবে কাজ করে
ABS বা অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম এমন একটি প্রযুক্তি যা জরুরি অবস্থায় হঠাৎ ব্রেক করার সময় চাকার লক হয়ে যাওয়া রোধ করে। এতে ব্রেক বারবার চাপা হয় কিন্তু চাকা আটকে যায় না, ফলে নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে। বিশেষ করে ভেজা বা পিচ্ছিল রাস্তার ওপর এটি আরও কার্যকর। বেশিরভাগ বাইকে বর্তমানে সিঙ্গল-চ্যানেল এবিএস থাকে যা কেবল সামনের চাকার জন্য কাজ করে, কিন্তু বড় ইঞ্জিনযুক্ত বাইকে ডুয়াল-চ্যানেল এবিএস দেওয়া হয়, যা সামনের ও পিছনের উভয় চাকায় কাজ করে।
ভারতে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, তার প্রায় ৪৪ শতাংশ টু-হুইলার দুর্ঘটনা। আবার দেশের মোট টু-হুইলার বিক্রির প্রায় ৪৫ শতাংশই ১২৫ সিসির নিচে। পরিসংখ্যান বলছে, এবিএস প্রযুক্তি থাকলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ৩৫-৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। তাই সরকারের এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা বৃদ্ধির দিকেই ইঙ্গিত করছে।
প্রসঙ্গত, সরকার আরও ভাবছে নতুন টু-হুইলার কেনার সময় সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে দুটি হেলমেট দেওয়ার বিষয়টিও কার্যকর করার। এটি সওয়ারির পাশাপাশি পেছনে বসা ব্যক্তির নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে।
অন্যদিকে, MoRTH এর broader সড়ক নিরাপত্তা স্ট্র্যাটেজির অংশ হিসেবে, শুধু টু-হুইলার নয়, প্যাসেঞ্জার ভেহিকেলেও অ্যাডভান্স ড্রাইভার অ্যাসিস্ট্যান্ট সিস্টেম (ADAS) বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এর মধ্যে থাকবে অ্যাডভান্সড এমার্জেন্সি ব্রেকিং, ড্রাইভার ড্রাউজিনেস ডিটেকশন, লেন ডিপার্চার ওয়ার্নিং-এর মতো আধুনিক সুরক্ষা প্রযুক্তি। যাই হোক, সরকারের এই একের পর এক পদক্ষেপ ভবিষ্যতে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে ভারতের রোড সেফটি মানচিত্রে এক ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলেই আশা করা হচ্ছে।