Atmanirbhar Bharat Triumph: সোমবার ইস্ট ইন্ডিয়া টাইমে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ভারতের প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভারত সরকারের একটি জানানোর মতে, দেশে বিক্রি হওয়া মোবাইল ফোনের ৯৯.২ শতাংশই এখন ভারতেই তৈরি হচ্ছে। এই বিস্ময়কর পরিসংখ্যানটি “আত্মনির্ভর ভারত” উদ্যোগের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও প্রযুক্তি খাতে স্বাবলম্বনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি প্রমাণ। এই খবরটি প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে @IndianTechGuide-এর পোস্টের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যা দ্রুত দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রূপ নিয়েছে।
আত্মনির্ভর ভারতের সাফল্যের পথ
“আত্মনির্ভর ভারত” উদ্যোগটি ২০২০ সালে শুরু হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল দেশের উৎপাদন ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেশীয় প্রযুক্তি ও শিল্পের উন্নয়ন। মোবাইল ফোন উৎপাদন খাতে এই উদ্যোগটি বিশেষভাবে সফল হয়েছে। ২০১৪ সালে যখন ভারতে মোবাইল ফোন উৎপাদন প্রায় নগণ্য ছিল, তখন থেকে এখন পর্যন্ত এই খাতে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে ভারতের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী वैष्णव-এর বরাত দিয়ে জানা গেছে যে, ২০১৪ সালে মাত্র ২টি মোবাইল উৎপাদন ইউনিট থেকে এখন ৩০০ এর বেশি ইউনিট সক্রিয় রয়েছে। এই উন্নয়নের পেছনে সরকারের “মেক ইন ইন্ডিয়া” এবং উৎপাদন-সংযুক্ত উদ্দীপনা (PLI) স্কিমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ডেটা কর্পোরেশন (IDC) এর সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ভারতের স্মার্টফোন বাজারে ৬৯ মিলিয়ন ইউনিট পণ্য শিপ করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে। এটি পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, ভারতের স্থানীয় বাজারের চাহিদা এখন বেশিরভাগই দেশীয় উৎপাদন দ্বারা পূরণ করা হচ্ছে। বিশ্বের বড় ব্র্যান্ডগুলো, যেমন স্যামসাং, অ্যাপল, ভিভো, ওপিও এবং শাওমি, তাদের উৎপাদন কারখানা ভারতে স্থাপন করেছে, যা কাজের সুযোগ সৃষ্টি করছে এবং দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করছে।
সমালোচনা ও বিতর্ক
তবে, এই ৯৯.২ শতাংশের পরিসংখ্যান নিয়ে কিছু প্রশ্নও উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহারকারীরা এই তথ্যকে “তৈরি” (Made in India) নয়, বরং “অ্যাসেম্বলড ইন ইন্ডিয়া” (Assembled in India) হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাদের মতে, মোবাইল ফোনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেমন সেমিকনডাক্টর এবং প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট, এখনও আমদানি করা হয়, বিশেষ করে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। জার্নাল অফ ক্লিনার প্রোডাকশন (২০২২) এর একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে যে, ভারতের মোবাইল উৎপাদন খাতে স্থানীয় সরবরাহ শৃঙ্খলা এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে গড়ে উঠেনি, যা আমদানির উপর নির্ভরশীলতাকে বাড়িয়ে তুলেছে।
এই সমালোচনার মুখে সরকারের সমর্থকরা জানিয়েছেন যে, অ্যাসেম্বলিংই প্রথম ধাপ, যা পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারা উদাহরণ দিয়েছেন যে, চীনও একসময় অ্যাসেমবলিং থেকে শুরু করে বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তাই, ভারতের জন্য এটি একটি গর্বের বিষয় হওয়ার কথা, কারণ এটি দেশের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও শিল্পের উন্নতির প্রতীক।
অর্থনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
মোবাইল ফোন উৎপাদনের এই বৃদ্ধি ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ইন্ডিয়া সেলুলার এবং ইলেকট্রনিক্স অ্যাসোসিয়েশন (ICEA) এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ১০ বছরে মোবাইল উৎপাদনের মূল্য ২১ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪.১ লক্ষ কোটি টাকা ছুঁইয়েছে। এছাড়া, মোবাইল ফোন এখন ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম রপ্তানি পণ্য হিসেবে গণ্য হচ্ছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সহায়তা করছে।
ভবিষ্যতে, সরকারের উদ্যোগে স্থানীয় সরবরাহ শৃঙ্খলা গড়ে তোলার জন্য আরও বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। স্যামসাং-এর নোইডায় বিশ্বের বৃহত্তম মোবাইল উৎপাদন কারখানা এবং অ্যাপলের তামিলনাড়ুতে আইফোন উৎপাদন শুরু করা এই দিকে একটি ইঙ্গিত। তবে, প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন এবং আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে হলে ভারতকে সেমিকনডাক্টর উৎপাদনের মতো ক্ষেত্রে আরও উন্নতি করতে হবে।
৯৯.২ শতাংশ মোবাইল ফোন ভারতেই তৈরির বিজ্ঞপ্তিটি দেশের জনগণের জন্য গর্বের বিষয় হলেও, এটি একটি শুরু মাত্র। “আত্মনির্ভর ভারত” উদ্যোগটি সফল হতে গেলে সরকার, শিল্পক্ষেত্র এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানদের সমন্বয়ে কাজ করা জরুরি। এই পথে এগিয়ে গেলে ভারত শুধুমাত্র মোবাইল ফোনের বাজারে নয়, বিশ্বের প্রযুক্তি ম্যাপে একটি শক্তিশালী অবস্থান দখল করতে পারবে।