RBI-র নির্দেশে আজ থেকে বাড়তি ATM চার্জ, কত টাকা দিতে হবে এখন থেকে?

ATM Pin

আজ, ১ মে ২০২৫ থেকে, ঘন ঘন এটিএম ব্যবহারকারীদের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের নতুন অধ্যায় শুরু হলো। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (RBI) এবং ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (NPCI)-এর সুপারিশ অনুযায়ী, এ দিন থেকে এটিএম লেনদেনের পরবর্তী চার্জ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। এর ফলে, এখন থেকে ফ্রি লেনদেনের সীমা অতিক্রম করলেই প্রতি অতিরিক্ত লেনদেনে গ্রাহকদের দিতে হবে ২৩ টাকা, যেখানে আগে এই চার্জ ছিল ২১ টাকা।

Advertisements

কোন পরিবর্তন হল?
এই নতুন চার্জ শুধুমাত্র তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন কোনও গ্রাহক নির্ধারিত ফ্রি লেনদেনের সীমা ছাড়িয়ে যাবেন। বর্তমানে, নিজের ব্যাংকের এটিএম থেকে মাসে ৫টি লেনদেন এবং অন্য ব্যাংকের এটিএম থেকে মেট্রো শহরে ৩টি ও নন-মেট্রো শহরে ৫টি লেনদেন ফ্রি থাকে। এই সীমার মধ্যে থাকলে গ্রাহকদের কোনও অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে না। তবে এই সীমা অতিক্রম করলেই গুনতে হবে ২৩ টাকা করে।

কেন বাড়ান হল চার্জ?
RBI জানিয়েছে, এই চার্জ বৃদ্ধির মূল কারণ হলো এটিএম স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্রমবর্ধমান খরচ। এছাড়াও, অন্যান্য ব্যাংকের গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত খরচ পড়ছে। White-label এটিএম অপারেটর ও কিছু ছোট ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরেই এই চার্জ বাড়ানোর দাবিতে ছিল। অবশেষে RBI এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে।

ছোট ব্যাংকের ওপর প্রভাব
এই চার্জ বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে ছোট ব্যাংকগুলির ওপর। বড় ব্যাংকের এটিএম সংখ্যায় বেশি থাকায় তাদের গ্রাহকরা সহজেই নিজের ব্যাংকের এটিএম খুঁজে পান। কিন্তু ছোট ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের অন্য ব্যাংকের এটিএম ব্যবহারের উপর নির্ভর করতে হয়। এর ফলে তাদের ফ্রি লেনদেন সীমা দ্রুত অতিক্রম হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত চার্জ গুনতে হয়।

গ্রাহকদের জন্য কী বার্তা?
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, গ্রাহকদের এখন আরও সতর্কভাবে এটিএম ব্যবহার করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ক্যাশ উইথড্রয়াল বা ব্যালেন্স চেক না করাই ভালো, কারণ ব্যালেন্স চেক করলেও কিছু ক্ষেত্রে চার্জ কাটা হতে পারে যদি ফ্রি সীমা ছাড়িয়ে যায়।
এছাড়াও, ডিজিটাল পেমেন্ট বা ইউপিআই লেনদেনের দিকে ঝুঁকতে হতে পারে অনেককেই, কারণ এটিই এখন তুলনামূলকভাবে কম খরচসাপেক্ষ এবং সুবিধাজনক।

Advertisements

এক নজরে — নতুন এটিএম নিয়ম:

  • নিজের ব্যাংকের এটিএম: মাসে ৫টি ফ্রি লেনদেন
  • অন্য ব্যাংকের এটিএম (মেট্রো শহর): মাসে ৩টি ফ্রি লেনদেন
  • অন্য ব্যাংকের এটিএম (নন-মেট্রো শহর): মাসে ৫টি ফ্রি লেনদেন
  • ফ্রি সীমা অতিক্রমের পর চার্জ: প্রতি লেনদেনে ২৩ টাকা (আগে ছিল ২১ টাকা)
  • চার্জে যুক্ত খরচ: ক্যাশ উইথড্রয়াল, ব্যালেন্স চেক ইত্যাদি

গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া
বেশ কিছু গ্রাহক ইতিমধ্যেই এই পরিবর্তনে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলছেন, যেসব এলাকায় ব্যাংকের শাখা বা এটিএমের সংখ্যা কম, সেখানে ফ্রি লেনদেন সীমা অতিক্রম করা খুবই সাধারণ। ফলে তাদের জন্য এটি একপ্রকার “শাস্তিমূলক চার্জ” হয়ে দাঁড়াবে।
একজন গ্রাহক বলেন, “আমি একটি ছোট শহরে থাকি, আমার ব্যাংকের এটিএম ১০ কিমি দূরে। প্রায়ই বাধ্য হয়েই অন্য ব্যাংকের এটিএম ব্যবহার করতে হয়। এই চার্জ আমার ওপর অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।”

ভবিষ্যৎ প্রেক্ষিত
এই চার্জ বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে ব্যাংকিং পরিষেবায় আরও ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নগদ উত্তোলনের বদলে UPI, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ওয়ালেট বা কার্ড-ভিত্তিক পেমেন্টের ব্যবহার আগামী দিনে বাড়বে।
তবে, যাদের ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে দক্ষতা কম বা যেসব অঞ্চলে এখনও ডিজিটাল পরিষেবা দুর্বল, তাদের জন্য এই নতুন চার্জ একরকম প্রতিকূলতার কারণ হতে পারে।

মোট কথা, আজ থেকে এটিএম চার্জে নতুন অধ্যায় শুরু হলো। এই পরিবর্তন হয়তো অনেকে ভালোভাবে নেবেন না, তবে ডিজিটাল লেনদেনের দিকে সরে যাওয়া এবং খরচ বাঁচানোর দিকেই এখন নজর দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।