অটল পেনশন যোজনা (Atal Pension Yojana) অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য একটি অবসরকালীন সঞ্চয় প্রকল্প, অসাধারণ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৭.৬৫ কোটির বেশি গ্রাহক নথিভুক্ত হয়েছেন। পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (পিএফআরডিএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পের মোট সম্পদ ব্যবস্থাপনা ৪৫,৯৭৪.৬৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ২০১৫ সালের জুন মাসে চালু হওয়া এই প্রকল্পটি অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের অবসরকালীন আর্থিক নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে নিয়ে কাজ করছে। পিএফআরডিএ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই প্রকল্পটি জাতীয় পেনশন সিস্টেম (এনপিএস)-এর কাঠামোর অধীনে পরিচালিত হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই প্রকল্পে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে মোট গ্রাহকের ৪৮% নারী। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নতুন নথিভুক্তির ৫৫% এর বেশি নারী গ্রাহক। এই প্রবৃদ্ধি অটল পেনশন যোজনার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং এর সামাজিক প্রভাবের প্রমাণ বহন করে।
অটল পেনশন যোজনা: সুবিধাসমূহ
অটল পেনশন যোজনা তার গ্রাহকদের ৬০ বছর বয়সে পৌঁছানোর পর একটি নির্দিষ্ট মাসিক পেনশন প্রদানের নিশ্চয়তা দেয়। গ্রাহকরা তাদের অবদানের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে ১,০০০ টাকা, ২,০০০ টাকা, ৩,০০০ টাকা, ৪,০০০ টাকা বা ৫,০০০ টাকা মাসিক পেনশন পেতে পারেন। এই প্রকল্পে ন্যূনতম ২০ বছরের জন্য অবদান রাখতে হয়। অবদানের পরিমাণ নির্ভর করে গ্রাহকের বয়স এবং তারা যে পেনশনের পরিমাণ বেছে নিয়েছেন তার উপর। যারা অল্প বয়সে এই প্রকল্পে যোগ দেন, তাদের অবদানের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৮ বছর বয়সে যোগদানকারী একজন গ্রাহকের মাসিক অবদান ৪২ টাকা থেকে শুরু হতে পারে, যেখানে ৪০ বছর বয়সে যোগদানকারীদের অবদান অনেক বেশি হতে পারে।
এই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো সরকার কর্তৃক পেনশনের নিশ্চয়তা। যদি অবদানের উপর প্রাপ্ত বিনিয়োগের রিটার্ন প্রত্যাশিত ন্যূনতম পেনশনের জন্য অপর্যাপ্ত হয়, তবে সরকার সেই ঘাটতি পূরণ করবে। অপরদিকে, যদি বিনিয়োগের রিটার্ন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হয়, তবে গ্রাহকরা উন্নত পেনশন সুবিধা পাবেন।
এছাড়াও, গ্রাহকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার স্ত্রী/স্বামী একই পেনশন পাওয়ার যোগ্য হবেন। যদি গ্রাহক এবং তার স্ত্রী/স্বামী উভয়েরই মৃত্যু হয়, তবে মনোনীত ব্যক্তি ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত জমাকৃত পেনশন কর্পাস পাবেন।
অটল পেনশন যোজনা: যোগ্যতার মানদণ্ড
অটল পেনশন যোজনায় নথিভুক্তির জন্য নিম্নলিখিত যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে হবে:
• গ্রাহককে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
• বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
• একটি সঞ্চয়ী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে, যা আধার নম্বরের সাথে সংযুক্ত।
• একটি বৈধ মোবাইল নম্বর থাকতে হবে।
• ন্যূনতম ২০ বছরের জন্য অবদানের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
তবে, ২০২২ সালের ১ অক্টোবর থেকে, আয়কর প্রদানকারী ব্যক্তিরা এই প্রকল্পে নথিভুক্তির জন্য যোগ্য নন। এছাড়াও, যারা অন্য কোনো সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের সুবিধাভোগী, তারাও এই প্রকল্পের জন্য যোগ্য নন।
অটল পেনশন যোজনা: নথিভুক্তির প্রক্রিয়া
অটল পেনশন যোজনায় নথিভুক্তি দুটি পদ্ধতিতে করা যায়: অনলাইন এবং অফলাইন।
অনলাইন পদ্ধতি:
• আপনার ব্যাঙ্কের ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন, যদি এই সুবিধা উপলব্ধ থাকে।
• লগইন করার পর এপিওয়াই বিভাগে গিয়ে নথিভুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।
• নথিভুক্তির সময় আপনি অটো-ডেবিট সুবিধা বেছে নিতে পারেন, যার মাধ্যমে অবদান মাসিক, ত্রৈমাসিক বা অর্ধবার্ষিক ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হবে।
• অবদানের জন্য পর্যাপ্ত ব্যালেন্স থাকা নিশ্চিত করুন, অন্যথায় পেমেন্ট মিস বা ডিফল্ট হতে পারে।
অফলাইন পদ্ধতি:
• আপনার ব্যাঙ্ক শাখা বা পোস্ট অফিস থেকে এপিওয়াই আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করুন।
• ফর্মটি পূরণ করুন এবং আধার কার্ডের ফটোকপি সংযুক্ত করুন।
• ব্যাঙ্ক শাখা বা পোস্ট অফিসে নথি জমা দিন।
• আবেদন অনুমোদিত হলে, আপনার নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে একটি নিশ্চিতকরণ বার্তা পাবেন।
অটল পেনশন যোজনা: অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া
অটল পেনশন যোজনা অ্যাকাউন্ট খুলতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন:
• আপনার সঞ্চয়ী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে যান। প্রয়োজনে একটি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলুন।
• ব্যাঙ্ক কর্মীদের সহায়তায় এপিওয়াই নথিভুক্তি ফর্ম পূরণ করুন।
• আধার আইডি এবং মোবাইল নম্বর প্রদান করুন।
• স্বয়ংক্রিয় অবদান কাটার জন্য অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত তহবিল রাখুন।
• অবদান মাসিক, ত্রৈমাসিক বা অর্ধবার্ষিক ভিত্তিতে কাটা হবে, যা আপনার পছন্দের উপর নির্ভর করে।
অটল পেনশন যোজনা: অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য
প্রাথমিকভাবে, ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত নথিভুক্ত গ্রাহকদের জন্য সরকার ৫০% অবদান বা বার্ষিক ১,০০০ টাকা (যেটি কম হয়) সহ-অবদান প্রদান করেছিল। তবে, বর্তমানে এই সুবিধা নতুন গ্রাহকদের জন্য উপলব্ধ নয়।
গ্রাহকরা তাদের পেনশনের পরিমাণ বছরে একবার (এপ্রিল মাসে) বাড়াতে বা কমাতে পারেন। এছাড়াও, এই প্রকল্পে মনোনয়ন বাধ্যতামূলক। বিবাহিত গ্রাহকদের ক্ষেত্রে স্ত্রী/স্বামী ডিফল্ট মনোনীত ব্যক্তি হন, এবং অবিবাহিত গ্রাহকরা অন্য কাউকে মনোনীত করতে পারেন। প্রকল্প থেকে ৬০ বছর বয়সের আগে প্রস্থান করা সম্ভব, তবে এই ক্ষেত্রে সরকারি সহ-অবদান (যদি পাওয়া থাকে) ফেরত দেওয়া হবে না।
অটল পেনশন যোজনা অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক নিরাপত্তা জাল প্রদান করে। ৭.৬৫ কোটি গ্রাহক এবং ৪৫,৯৭৪.৬৭ কোটি টাকার পেনশন কর্পাসের সাথে, এই প্রকল্পটি ভারতের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করছে। নারীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ এই প্রকল্পের সম্প্রসারণ এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির প্রতিফলন। সঠিক পরিকল্পনা এবং নিয়মিত অবদানের মাধ্যমে, গ্রাহকরা তাদের অবসরকালীন জীবনকে আর্থিকভাবে নিরাপদ করতে পারেন। আপনি যদি এই প্রকল্পে যোগ দিতে চান, তবে আজই আপনার নিকটস্থ ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে যোগাযোগ করুন এবং একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়ান।