ভারতের ওপর ট্রাম্পের ‘শুল্ক-শাস্তি’ নিয়ে বিস্ফোরক আসাদুদ্দিন ওয়াইসি

বৃহস্পতিবার সকালে অখিল ভারত মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) এর প্রধান ও লোকসভার সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি (Asaduddin Owaisi) তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে একটি বিস্ফোরক পোস্ট শেয়ার করেছেন,…

Asaduddin Owaisi Slams Trump

বৃহস্পতিবার সকালে অখিল ভারত মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) এর প্রধান ও লোকসভার সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি (Asaduddin Owaisi) তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে একটি বিস্ফোরক পোস্ট শেয়ার করেছেন, যেখানে তিনি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের রপ্তানি উপর ২৫% শুল্ক ও রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যের জন্য আরও একটি অস্পষ্ট “দণ্ড” আরোপের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছেন। ওয়াইসির এই পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে এবং ভারতীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৃত্তে তুফান তুলে দিয়েছে। তিনি এই শুল্ককে ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক অবস্থানের উপর একটি “স্পষ্ট ও সচেতন আক্রমণ” হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীরবতাকে কটাক্ষ করেছেন।

ট্রাম্পের শুল্ক ও এর প্রভাব
ওয়াইসি তাদের পোস্টে উল্লেখ করেছেন যে, ট্রাম্পের এই ২৫% শুল্ক ভারতের ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই), প্রস্তুতকারক, আইটি কোম্পানি, পরিষেবা প্রদানকারী এবং কৃষকদের উপর গভীর আঘাত হানবে। তিনি বলেন, “এই শুল্ক রপ্তানি কমিয়ে দেবে, বিদেশি সরকারি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমাবে এবং চাকরির সুযোগ নষ্ট করবে।” বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, উন্নতশীল অর্থনৈতিক দেশগুলোর জন্য শুল্কের প্রভাবে এফডিআই ১০-১৫% কমতে পারে, যা ভারতের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেছেন যে জাপানের জন্য শুল্ক ১৫%, ভিয়েতনামের জন্য ২০% এবং ইন্দোনেশিয়ার জন্য ১৯% হবে, যা ভারতের মার্কিন রপ্তানির প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা নষ্ট করবে।

   

এই শুল্কের সঙ্গে রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যের জন্য আরেকটি “দণ্ড” আরোপের ঘোষণা ভারতের জন্য আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য $68.7 বিলিয়ন ছিল, যা তার জ্বালানি ও প্রযুক্তি সংযোগের উপর নির্ভরশীলতার পরিচয় দেয়। ওয়াইসি এই দণ্ডকে ভারতের সার্বভৌমত্বের উপর একটি প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখেছেন এবং জিজ্ঞাসা করেছেন, “আমরা কি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, নাকি আমেরিকার আদালতে সালামি দেওয়া একটি অধীন রাষ্ট্র?”

মোদির নীরবতা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ওয়াইসি তাদের পোস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীরবতার উপর তীব্র কটাক্ষ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “এটি কি সেই ‘৫৬ ইঞ্চি বুক’ যা আমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল? নাকি আমরা এটি তখনই দেখব যখন ট্রাম্প ৫৬% শুল্ক আরোপ করবেন?” এই মন্তব্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের উৎস হয়ে উঠেছে, যেখানে কিছু ব্যবহারকারী মোদির নীরবতাকে কূটনৈতিক রণনীতির অংশ হিসেবে দেখছেন, অন্যরা তাকে দুর্বলতার প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করছেন।

এআইএমআইএম নেতার এই পোস্টের পর সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু ব্যবহারকারী, যেমন ডক্টর জৈন, মন্তব্য করেছেন, “তিনি (মোদি) এমন সাহস রাখেন না যা আপনি বলেছেন। আমাদের দেশ একটি দুর্বল প্রধানমন্ত্রীর কারণে ভোগা পড়েছে।” অন্যদিকে, কিছু ব্যবহারকারী, যেমন দীক্ষা কান্দপাল, মনে করেন যে নীরবতাই ট্রাম্পের মতো “অহংকারী” ব্যক্তির প্রতি উত্তর দেওয়ার সর্বোত্তম উপায়।

Advertisements

ট্রাম্পের ভারত-বিরোধী রণনীতি
ওয়াইসির পোস্টে উল্লেখিত ঘটনার পটভূমিতে, ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে একটি সাক্ষাতে বাণিজ্য বৈষম্য নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, তবে তা এই শুল্ক বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আল জাজিরার রিপোর্ট অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তটি ভারতের সাথে বাণিজ্যীয় উত্তেজনার একটি দীর্ঘ ইতিহাসের অংশ, যা তার “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির একটি প্রকাশ। এছাড়া, ট্রাম্পের পাকিস্তানের সাথে তেল রিজার্ভ উন্নয়নের চুক্তি এই শুল্কের সাথে সময়ান্তরে ঘোষণা করা হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার ভারত-বিরোধী রণনীতির একটি ইঙ্গিত। এই পদক্ষেপটি এনডিটিভির লাইভ আপডেটে প্রতিফলিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এই পরিস্থিতিতে বিফল হয়েছে।

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ
ভারতের জন্য এই শুল্কের প্রভাব অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুতর। যেহেতু আমেরিকা ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি গ্রাহক, ২০২৪ সালে বাণিজ্যের মোট মূল্য $129.2 বিলিয়ন ছিল, যার মধ্যে ভারতের রপ্তানি $87.4 বিলিয়ন। এই শুল্ক এই রপ্তানির উপর প্রভাব ফেলে এবং স্থানীয় শিল্পের জন্য উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ভারতকে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং যুক্ত আরব আমিরাতের মতো বাজারে রপ্তানি বিস্তার করতে হবে।

ওয়াইসি তাদের পোস্টে বলেছেন যে, তিনি বছরের পর বছর সংসদে ভারতের বিরুদ্ধে বাড়তি বাণিজ্যিক প্রতিকূলতার বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, ভারতের সরকারকে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, নতুবা এটি দেশের অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আসাদুদ্দিন ওয়াইসির এই বিস্ফোরক পোস্ট ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক ও ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি গভীর আলোচনা শুরু করেছে। তিনি যেমন ট্রাম্পের শুল্ককে ভারতের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছেন, তেমনি মোদির নীরবতাকে প্রশ্নের মুখে রেখেছেন। এই পরিস্থিতিতে ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা বাকি দেশবাসীর জন্য একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়ে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ ও সংসদে আলোচনা ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।