ভারতীয় সফট ড্রিংক বাজারে আবারও শোরগোল ফেলে দিয়েছে ক্যাম্পা কোলা (Campa Cola)। ৯০-এর দশকে দেশের প্রতিটি গলিতে জনপ্রিয় এই ব্র্যান্ড একসময় হারিয়ে গিয়েছিল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মুখে। কিন্তু ২০২৩ সালের মার্চ মাসে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এই নস্টালজিক ব্র্যান্ডটিকে আবার ফিরিয়ে এনে নতুন উদ্যমে বাজার কাঁপাতে শুরু করেছে। আর এবার ৮ হাজার কোটি টাকার বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে মুকেশ আম্বানি ভারতীয় বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রির রঙ বদলাতে চলেছেন।
ক্যাম্পার ফেরা: নস্টালজিয়া আর স্ট্র্যাটেজির মিশেল
১৯৭৭ সালে ভারতে কোকাকোলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশীয় বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল ক্যাম্পা কোলা। তখন দেশের মানুষের কাছে ক্যাম্পা মানেই ছিল সফট ড্রিংকের সমার্থক। কিন্তু ১৯৯১ সালের লিবেরালাইজেশনের ঢেউয়ে মনমোহন সিংয়ের হাত ধরে আবার দেশে ফিরে আসে আন্তর্জাতিক বেভারেজ জায়ান্ট কোকাকোলা ও পেপসিকো। এরপর থেকেই ক্যাম্পা ধীরে ধীরে বাজার থেকে হারিয়ে যেতে থাকে।
কিন্তু রিলায়েন্সের হাত ধরে ২০২৩ সালে ব্র্যান্ডটি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে তৈরি হয় উত্তেজনা। আম্বানি কৌশলগতভাবে কোক-পেপসির তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে ক্যাম্পা কোলা বাজারে নিয়ে আসেন। ফলে কম দামে বেশি পরিমাণে সফট ড্রিংক পাওয়ার সুযোগ পেয়ে গ্রামাঞ্চল থেকে শহর—সব জায়গাতেই জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে ক্যাম্পা।
৮ হাজার কোটির মাস্টারপ্ল্যান
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে, ক্যাম্পা কোলার সম্প্রসারণের জন্য তারা ৮ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করছে। এই বিপুল অর্থ মূলত ব্যবহার হবে অত্যাধুনিক বেভারেজ ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট তৈরি, সাপ্লাই চেইন শক্তিশালীকরণ এবং প্যান-ইন্ডিয়া ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে। রিলায়েন্স রিটেল-এর তরফে জানানো হয়েছে, শুধু শহর নয়, গ্রামাঞ্চল ও আধা শহর এলাকাতেও ক্যাম্পা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রতিযোগিতার বাজারে নতুন মাত্রা
ভারতে সফট ড্রিংকের বাজার ২০২5 সালের মধ্যে প্রায় ₹৬৫,০০০ কোটির ছোঁয়া পাবে বলে অনুমান। এই বাজারে এখনও পর্যন্ত কোকাকোলা ও পেপসিকোর একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে। কিন্তু ক্যাম্পার আগমন এবং রিলায়েন্সের বিপুল বিনিয়োগ সেই পরিস্থিতিতে বড়সড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। কোক বা পেপসি যেখানে ₹২০-২৫ টাকায় একটি বটল বিক্রি করে, ক্যাম্পা সেখানে ₹১০-১২ টাকায় একই ভলিউম দিচ্ছে। ফলে বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের মধ্যে ক্যাম্পার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
ক্যাম্পার ভবিষ্যৎ
বিশেষজ্ঞদের মতে, রিলায়েন্স কেবলমাত্র ক্যাম্পা কোলার মাধ্যমেই থেমে থাকবে না। তারা আরও নতুন ধরনের ফ্লেভার, এনার্জি ড্রিংক এবং স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি, তারা দেশীয় কৃষকদের কাছ থেকে ফলমূল সংগ্রহ করে জুস-ভিত্তিক ড্রিংকও তৈরি করতে চায়। এর ফলে একদিকে যেমন ভারতীয় কৃষক উপকৃত হবেন, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলির মুখোমুখি হতে সক্ষম হবে এক পূর্ণাঙ্গ দেশীয় ব্র্যান্ড।
মুকেশ আম্বানির ৮ হাজার কোটির ক্যাম্পা মাস্টারপ্ল্যান কেবলমাত্র একটি বেভারেজ রিব্র্যান্ডিং নয়, বরং এটি ভারতের আত্মনির্ভরতা ও দেশীয় ব্র্যান্ডের পুনর্জাগরণের প্রতীক। আর সেই পরিকল্পনাই কোক-পেপসিকে চাপে ফেলেছে এখনই। আগামী দিনে এই লড়াই আরও জমে উঠবে—তা বলাই যায়।