চিলাপাতায় গুপ্ত যুগের নল রাজার গড়ে রক্ষণাবেক্ষণ

অয়ন দে, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ার জেলার চিলাপাতা জঙ্গলের গভীরে অবস্থিত নল রাজার গড় (Nal Raja’s Fort Alipurduar), যা গুপ্ত যুগের স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত,…

Nal Raja’s Fort Alipurduar

অয়ন দে, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ার জেলার চিলাপাতা জঙ্গলের গভীরে অবস্থিত নল রাজার গড় (Nal Raja’s Fort Alipurduar), যা গুপ্ত যুগের স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত, এখন পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে চলেছে। এই সুপ্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন ইতিহাসের এক গভীর গল্প। এই ঐতিহ্যকে জনসমক্ষে তুলে ধরতে এবং এর সংরক্ষণে কোমর বেঁধেছে আলিপুরদুয়ার হেরিটেজ সোসাইটি এবং জলদাপাড়া বন বিভাগ। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নল রাজার গড়কে পর্যটনের একটি অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে।

নল রাজার গড়ের ঐতিহাসিক তাৎপর্য
ঐতিহাসিকদের মতে, নল রাজার গড় গুপ্ত যুগের (৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দী) স্থাপত্যের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এই দুর্গ ডুয়ার্স অঞ্চলের প্রাচীন সভ্যতা ও শাসন ব্যবস্থার সাক্ষ্য বহন করে। চিলাপাতা জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত এই গড়ের ধ্বংসাবশেষে পাওয়া স্থাপত্যের নমুনাগুলো গুপ্ত যুগের শিল্পকলা ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের ইঙ্গিত দেয়। তবে, দীর্ঘ সময় ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই ঐতিহাসিক স্থানটি প্রায় অবহেলিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে এবং গড়টিকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে আলিপুরদুয়ার হেরিটেজ সোসাইটি।

   

হেরিটেজ সোসাইটির উদ্যোগ
আলিপুরদুয়ার হেরিটেজ সোসাইটির সদস্য সুমন কাঞ্জিলাল জানিয়েছেন, “নল রাজার গড় আমাদের ঐতিহ্যের একটি অমূল্য সম্পদ। এটি শুধু ঐতিহাসিক নয়, পর্যটনের দিক থেকেও এর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা জলদাপাড়া বন বিভাগের সহযোগিতায় গড়টি পরিষ্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করেছি। আমাদের লক্ষ্য এই গড়ের ইতিহাস পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীদের কাছে তুলে ধরা।” তিনি আরও জানান, আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে গড়ের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা হবে। এই গবেষণার মাধ্যমে গড়ের প্রাচীনত্ব এবং গুপ্ত যুগের সঙ্গে এর সম্পর্ক আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হবে।

জলদাপাড়া বন বিভাগের ভূমিকা
জলদাপাড়া বন বিভাগের ডিএফও প্রবীণ কাশওয়ান বলেন, “চিলাপাতা জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত নল রাজার গড় একটি ঐতিহাসিক ধন। আমরা চাই এটি পর্যটনের একটি কেন্দ্র হয়ে উঠুক। এর জন্য আমরা হেরিটেজ সোসাইটির সঙ্গে কাজ করছি।” তিনি জানান, বন বিভাগ গড়ের পরিবেশ রক্ষা করার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করছে। চিলাপাতা জঙ্গল ইতিমধ্যেই পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়, এবং নল রাজার গড়কে এই পর্যটন সার্কিটের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

Advertisements

পর্যটনের সম্ভাবনা
চিলাপাতা জঙ্গল তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বন্যপ্রাণীদের জন্য বিখ্যাত। এই অঞ্চলে হাতি, গণ্ডার এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। নল রাজার গড়কে পর্যটনের অংশ হিসেবে গড়ে তুললে এটি ইতিহাসপ্রেমী এবং প্রকৃতিপ্রেমী উভয়ের কাছেই আকর্ষণীয় হবে। বন বিভাগ এবং হেরিটেজ সোসাইটি পর্যটকদের জন্য তথ্য কেন্দ্র এবং গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া, গড়ের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারের কাজও শুরু হবে।

নল রাজার গড় আলিপুরদুয়ারের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গুপ্ত যুগের স্থাপত্যের এই নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও প্রচারের মাধ্যমে এটিকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা সম্ভব। আলিপুরদুয়ার হেরিটেজ সোসাইটি এবং জলদাপাড়া বন বিভাগের এই যৌথ উদ্যোগ শুধু ঐতিহাসিক গবেষণার ক্ষেত্রেই নয়, বরং স্থানীয় পর্যটন শিল্পের বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রচেষ্টা সফল হলে নল রাজার গড় উত্তরবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।