অয়ন দে, উত্তরবঙ্গ: আজ থেকে ডুয়ার্সের সমস্ত জাতীয় উদ্যান ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ (Duars National Parks) এলাকা পর্যটকদের জন্য তিন মাসের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, চিলাপাতা, জয়ন্তী এবং জলপাইগুড়ি জেলার গরুমারা জাতীয় উদ্যান সহ অন্যান্য বনাঞ্চলও ১৬ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে এই সময়কালে বন বিভাগ বন্যপ্রাণীদের প্রজনন ও জঙ্গলের পুনর্জননের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়। এই তিন মাস পর্যটকদের জঙ্গলে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে, এবং জঙ্গল সাফারি ও হাতি সাফারির মতো কার্যক্রমও বন্ধ রাখা হবে।
Read Hindi: डुआर्स के राष्ट्रीय उद्यान तीन महीने के लिए बंद, वन्यजीव संरक्षण पर जोर
বর্ষার সময় জঙ্গলের রাস্তাঘাট পিচ্ছিল ও বিপজ্জনক হয়ে পড়ে, যা পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও, বন্যপ্রাণীদের প্রজননকাল এই সময়ে শীর্ষে থাকে। বন বিভাগের মতে, এই সময়কালে বন্যপ্রাণীদের নিরবচ্ছিন্ন জীবনচক্র বজায় রাখা এবং তাদের প্রজনন প্রক্রিয়ায় কোনও বাধা না দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বর্ষার জলে জঙ্গলের খাল, বিল, নদী-নালা ভরে যায়, যা বন্যপ্রাণীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও জলের উৎস সরবরাহ করে। এই সময় জঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড, নতুন ফল-ফুল ও গাছপালা সতেজ হয়ে ওঠে, যা বন্যপ্রাণীদের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।
গতকাল, জঙ্গল বন্ধ হওয়ার আগের দিন, ডুয়ার্সের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ভিড় ছিল উল্লেখযোগ্য। জলদাপাড়া, চিলাপাতা, জয়ন্তী, গরুমারা সহ বিভিন্ন জঙ্গল-সংলগ্ন এলাকায় পর্যটকদের ঢল নেমেছিল। স্থানীয় হোটেল, রিসর্ট ও হোমস্টেগুলো গত সপ্তাহ জুড়ে পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত ছিল। তবে, আজ থেকে এই এলাকাগুলো শান্ত হয়ে পড়বে, কারণ পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, “বর্ষার সময় জঙ্গলের পুনর্জনন এবং বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এই তিন মাসে জঙ্গলের পরিবেশ পুনরুদ্ধার হয় এবং বন্যপ্রাণীরা নিরাপদে প্রজনন করতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “এই সময়ে বন্যপ্রাণীদের জন্য জঙ্গল একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে, যা তাদের জীবনচক্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এই বন্ধের ফলে স্থানীয় পর্যটন শিল্পে কিছুটা প্রভাব পড়লেও, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য এই পদক্ষেপকে সবাই সমর্থন করছেন। পর্যটকদের অনুরোধ করা হয়েছে, ১৫ সেপ্টেম্বরের পর জঙ্গল পুনরায় খুললে নিয়ম মেনে ভ্রমণ করতে। এই সময়ে পর্যটকরা ডুয়ার্সের অন্যান্য আকর্ষণ, যেমন চা বাগান বা সাংস্কৃতিক গ্রামগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। ডুয়ার্সের জঙ্গল আবার পর্যটকদের জন্য খুলবে ১৬ সেপ্টেম্বর, যখন বর্ষার পর জঙ্গল তার সবুজ রূপে ফিরে আসবে।