অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা কিনে মিলল ২০০% লাভ

অক্ষয় তৃতীয়ার (Akshaya Tritiya) শুভ দিনে ভারতীয় পরিবারগুলোর মধ্যে সোনা কেনার ঐতিহ্য বহু যুগ ধরে চলে আসছে। এই দিনে সোনা কেনা শুধুমাত্র সম্পদের প্রতীকই নয়,…

Akshaya Tritiya 2025: Gold Gives 200% Return in 10 Years, Outlook Bullish

অক্ষয় তৃতীয়ার (Akshaya Tritiya) শুভ দিনে ভারতীয় পরিবারগুলোর মধ্যে সোনা কেনার ঐতিহ্য বহু যুগ ধরে চলে আসছে। এই দিনে সোনা কেনা শুধুমাত্র সম্পদের প্রতীকই নয়, বরং আর্থিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি হিসেবেও বিবেচিত হয়। ২০২৫ সালের অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা গত দশকে ২০০% এর বেশি রিটার্ন দিয়েছে। ইকোনমিক টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভেনচুরা সিকিউরিটিজের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের অক্ষয় তৃতীয়ায় ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ১০ গ্রামে ৭৩,২৪০ টাকা, যা ২০২৫ সালে বেড়ে ৯৪,০০০ থেকে ৯৫,০০০ টাকার মধ্যে পৌঁছেছে। গত এক বছরে সোনা ৩০% রিটার্ন দিয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে।

গত দশকের সোনার অসাধারণ পারফরম্যান্স

২০১৪ সালের অক্ষয় তৃতীয়ায় ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ১০ গ্রামে ৩০,১৮২ টাকা। গত দশকে এই দাম ২১৮% বেড়ে ২০২৫ সালে ৯৫,৯০০ টাকায় পৌঁছেছে। এই সময়ে সোনা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ সম্পদ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, বিশেষ করে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়। অ্যাক্সিস সিকিউরিটিজের সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট দেবেয়া গাগলানি জানিয়েছেন, গত তিন বছরে মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (এমসিএক্স) সোনার দাম দ্বি-অঙ্কের রিটার্ন দিয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে সোনার দাম প্রায় ২৫% বেড়েছে, যা গত এক দশকের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী শুরুগুলোর একটি।

   

গত অক্ষয় তৃতীয়ায় যারা সোনায় বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা ৩১% এর বেশি রিটার্ন পেয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্কযুদ্ধের কারণে আর্থিক বাজারে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সোনা একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। গাগলানি আরও জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলোর সোনা ক্রয়, ডলার সূচকের সংশোধন এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সোনার দামের ঊর্ধ্বগতির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।

সোনার দামের ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস

বিশেষজ্ঞরা সোনার দামের দীর্ঘমেয়াদি ঊর্ধ্বগতির সম্ভাবনার বিষয়ে আশাবাদী। গাগলানি বলেন, যদি সোনার দাম ১,০০,০০০ টাকার উপরে স্থিতিশীল থাকে, তবে ২০২৬ সালের অক্ষয় তৃতীয়ার মধ্যে এটি ১,১০,০০০ টাকায় পৌঁছাতে পারে। তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, বর্তমানে দাম রেকর্ড উচ্চতায় থাকায় ঝুঁকি-প্রতিফল অনুপাত অনুকূল নয়। তিনি বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়েছেন, দাম ৫-১০% সংশোধন হলে ধাপে ধাপে সোনা কেনার কথা বিবেচনা করতে। তিনি আরও বলেন, দাম নিচে নেমে ৮৭,০০০ টাকার কাছাকাছি স্থিতিশীল হতে পারে।

কোটাক মাহিন্দ্রা এএমসি-র ফান্ড ম্যানেজার সতীশ দোন্দাপতি জানিয়েছেন, সম্প্রতি মুনাফা তুলে নেওয়া এবং মার্কিন ডলারের প্রতি নতুন করে আগ্রহের কারণে সোনার দাম কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, স্বল্প মেয়াদে সোনার আকর্ষণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতি এবং কর্মসংস্থানের তথ্যের উপর নির্ভর করবে, যা ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার সম্পর্কিত সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে। তবে, দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে সোনার সম্ভাবনা ইতিবাচক রয়েছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলোর শক্তিশালী ক্রয় এবং ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দ্বারা সমর্থিত।

রুপোর সম্ভাবনাও উজ্জ্বল

সোনার পাশাপাশি রুপোও বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় সম্পদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। শিল্প চাহিদা, নিম্ন সুদের হারের প্রত্যাশা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে রুপোর দামও ঊর্ধ্বমুখী। দোন্দাপতি জানান, রুপোর দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা ইতিবাচক, এবং এটি নিরাপদ বিনিয়োগের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে এমসিএক্স-এ রুপোর মে ফিউচার ৯৫,৮০০ টাকা প্রতি কেজিতে লেনদেন হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।

Advertisements

অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা কেনার তাৎপর্য

অক্ষয় তৃতীয়া, যাকে আখা তিজ বা আক্তি বলা হয়, হিন্দু ও জৈন সম্প্রদায়ের জন্য একটি অত্যন্ত শুভ দিন। ‘অক্ষয়’ শব্দের অর্থ ‘চিরন্তন’ বা ‘যা কখনো কমে না’, এবং এই দিনে সোনা কেনা সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। ভারতে, সোনা শুধুমাত্র একটি বিনিয়োগ নয়, বরং সংস্কৃতি, ধর্মীয় আচার এবং বিবাহের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা কেনার এই ঐতিহ্য ভারতীয়দের মধ্যে আবেগগত এবং আর্থিক মূল্যের সমন্বয় ঘটায়।

বিনিয়োগের কৌশল

বিশেষজ্ঞরা বর্তমান উচ্চ দামের পরিপ্রেক্ষিতে সতর্ক বিনিয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন। গাগলানি বলেন, “যেহেতু সোনার দাম অতিরিক্ত কেনার মাত্রায় পৌঁছেছে, তাই বিনিয়োগকারীদের ধাপে ধাপে কেনার কথা বিবেচনা করা উচিত।” তিনি দামের সংশোধনের সুযোগে কেনার পরামর্শ দিয়েছেন। মোতিলাল ওসওয়াল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের মানব মোদি পরামর্শ দিয়েছেন, বিনিয়োগকারীরা ‘বাই অন ডিপস’ কৌশল অনুসরণ করতে পারেন, যেখানে ৯০,০০০-৯১,০০০ টাকার সমর্থন মাত্রায় সোনা জমা করা যেতে পারে, লক্ষ্য রেখে ১,০৬,০০০ টাকা।

বিনিয়োগকারীরা শারীরিক সোনার পাশাপাশি সোভারেন গোল্ড বন্ড (এসজিবি), গোল্ড ইটিএফ, ডিজিটাল গোল্ড এবং বার ও কয়েনের মাধ্যমে বিনিয়োগের বিকল্পগুলো বিবেচনা করতে পারেন। এসজিবি বিনিয়োগকারীদের সোনার দামের বৃদ্ধির সুবিধা দেয় এবং বার্ষিক ২.৫% সুদ প্রদান করে, যা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয়।

বাজারের প্রভাবকারী কারণ

সোনার দামের ঊর্ধ্বগতি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। মার্কিন-চীন শুল্কযুদ্ধ, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলোর সোনা ক্রয়, এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সোনার দামের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সম্প্রতি পাহাড়গামে সন্ত্রাসী হামলার মতো ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাগুলোও সোনার নিরাপদ সম্পদ হিসেবে চাহিদা বাড়িয়েছে।

২০২৫ সালের অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা তার ঐতিহ্যগত ও আর্থিক গুরুত্ব ধরে রেখে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে রয়েছে। গত দশকে ২০০% এর বেশি এবং গত এক বছরে ৩০% রিটার্ন সোনার শক্তিশালী সম্ভাবনার প্রমাণ দেয়। তবে, বর্তমান উচ্চ দামের কারণে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন। ধাপে ধাপে কেনা, দামের সংশোধনের সুযোগ গ্রহণ এবং বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগের বিকল্পগুলো বিবেচনা করা বিনিয়োগকারীদের জন্য বুদ্ধিমান কৌশল হতে পারে। অক্ষয় তৃতীয়ার এই শুভ দিনে সোনা কেনার ঐতিহ্য শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক তাৎপর্যই বহন করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতিশীলতার পথও প্রশস্ত করে।