ভেস্তে গেল টাটা-এয়ারটেল ডিটিএইচ সংযুক্তির সম্ভাব্য চুক্তি

ভারতী এয়ারটেল (Airtel ) এবং টাটা গ্রুপ তাদের ডাইরেক্ট-টু-হোম (Tata DTH) ব্যবসা, ভারতী টেলিমিডিয়া এবং টাটা প্লে-এর একীভূতকরণ নিয়ে আলোচনা বন্ধ করেছে। শনিবার বোম্বে স্টক…

Airtel-Tata DTH Merger Talks End

ভারতী এয়ারটেল (Airtel ) এবং টাটা গ্রুপ তাদের ডাইরেক্ট-টু-হোম (Tata DTH) ব্যবসা, ভারতী টেলিমিডিয়া এবং টাটা প্লে-এর একীভূতকরণ নিয়ে আলোচনা বন্ধ করেছে। শনিবার বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে (বিএসই) দাখিল করা একটি বিবৃতি অনুযায়ী, উভয় পক্ষই পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য কোনো সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ঘোষণা ভারতের ডিটিএইচ শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন, কারণ এই একীভূতকরণ হলে এটি ২০১৬ সালে ডিশ টিভি এবং ভিডিওকন ডি২এইচ একীভূতকরণের পর এই খাতে দ্বিতীয় বড় একীভূতকরণ হতো।

আলোচনা বন্ধের ঘোষণা

বিএসই-তে দাখিল করা বিবৃতিতে ভারতী এয়ারটেল জানিয়েছে, “এটি ২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখের আমাদের পূর্ববর্তী বিবৃতির উল্লেখে, যেখানে কোম্পানি জানিয়েছিল যে এটি টাটা গ্রুপের সঙ্গে টাটা প্লে লিমিটেডের অধীনে থাকা টাটা গ্রুপের ডাইরেক্ট-টু-হোম (ডিটিএইচ) ব্যবসাকে কোম্পানির সহায়ক সংস্থা ভারতী টেলিমিডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে একীভূত করার সম্ভাবনা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় রয়েছে।”

   

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “এই বিষয়ে আমরা জানাতে চাই যে, সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছাতে না পারায় উভয় পক্ষ পারস্পরিকভাবে আলোচনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” এই ঘোষণার মাধ্যমে ভারতী এয়ারটেল এবং টাটা গ্রুপের মধ্যে সম্ভাব্য একীভূতকরণের সম্ভাবনা বর্তমানে শেষ হয়েছে।

আলোচনার পটভূমি

২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সুনীল মিত্তলের নেতৃত্বাধীন ভারতী এয়ারটেল ঘোষণা করেছিল যে তারা তাদের লোকসানে চলা ডিটিএইচ ব্যবসা, ভারতী টেলিমিডিয়াকে টাটা গ্রুপের টাটা প্লে-এর সঙ্গে একীভূত করার জন্য আলোচনা করছে। এই আলোচনার লক্ষ্য ছিল তাদের কেবল এবং স্যাটেলাইট টিভি পরিষেবাগুলোকে একীভূত করা। একটি নিয়ন্ত্রক ফাইলিংয়ে বলা হয়েছিল, “আমরা জানাতে চাই যে ভারতী এয়ারটেল এবং টাটা গ্রুপ টাটা গ্রুপের ডিটিএইচ ব্যবসা, যা টাটা প্লে লিমিটেডের অধীনে রয়েছে, তাকে ভারতী এয়ারটেলের সহায়ক সংস্থা ভারতী টেলিমিডিয়ার সঙ্গে একীভূত করার জন্য একটি সম্ভাব্য লেনদেন নিয়ে আলোচনা করছে, যা সব পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে।”

তখন নির্দিষ্ট বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি। এই একীভূতকরণ সফল হলে এটি ভারতের ডিটিএইচ শিল্পে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হতো। বিশেষ করে, এটি ডিশ টিভি এবং ভিডিওকন ডি২এইচ একীভূতকরণের পর এই খাতে দ্বিতীয় বড় একীভূতকরণ হিসেবে বিবেচিত হতো। এই একীভূতকরণের মাধ্যমে ভারতী এয়ারটেল প্রায় ১.৯ কোটি টাটা প্লে গ্রাহকের অ্যাক্সেস পেত এবং টেলিকম, ব্রডব্যান্ড এবং ডিটিএইচ পরিষেবাগুলো একত্রে অফার করতে পারত। এছাড়া, একীভূত সংস্থার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩.৫ কোটিতে পৌঁছাত।

কেন বন্ধ হল আলোচনা?

আলোচনা বন্ধের মূল কারণ ছিল উভয় পক্ষের মধ্যে সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছাতে না পারা। যদিও নির্দিষ্ট কারণগুলো প্রকাশ করা হয়নি, তবে এটি অনুমান করা যায় যে আর্থিক মূল্যায়ন, শেয়ার বিনিময় কাঠামো, বা পরিচালনার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মতপার্থক্য এই সিদ্ধান্তের কারণ হতে পারে। ডিটিএইচ শিল্প বর্তমানে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যার মধ্যে রয়েছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম এবং প্রসার ভারতীর ফ্রি-টু-এয়ার প্ল্যাটফর্ম ডিডি ফ্রি ডিশের ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ডিটিএইচ গ্রাহক সংখ্যা ৬.৪১ কোটি থেকে কমে ৫.৯৯ কোটিতে দাঁড়িয়েছে, যা এই শিল্পের পতনের ইঙ্গিত দেয়।

উভয় কোম্পানির ডিটিএইচ ব্যবসাই লোকসানে চলছে। ২০২৪ অর্থবছরে টাটা প্লে ৪৩০০ কোটি টাকা আয় করলেও ৩৫০ কোটি টাকার নিট লোকসান রেকর্ড করেছে। অন্যদিকে, এয়ারটেল ডিজিটাল টিভি ৩০০০ কোটি টাকা আয় করেছে এবং ২৭০ কোটি টাকার ইবিআইটি রিপোর্ট করেছে। এই আর্থিক চাপ সম্ভবত একীভূতকরণের আলোচনাকে জটিল করে তুলেছে।

ডিটিএইচ শিল্পের প্রেক্ষাপট

ভারতের ডিটিএইচ শিল্পে টাটা প্লে ৩১.৯৯% বাজার হিস্যা নিয়ে শীর্ষে রয়েছে, এবং ভারতী টেলিমিডিয়া ২৯.৩৮% হিস্যা নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে। ডিশ টিভি এবং সান ডিরেক্ট টিভি যথাক্রমে ১৯.৫৩% এবং ১৯.১০% বাজার হিস্যা ধরে রেখেছে। তবে, সামগ্রিকভাবে ডিটিএইচ গ্রাহক সংখ্যা কমছে, কারণ গ্রাহকরা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং ফ্রি-টু-এয়ার পরিষেবার দিকে ঝুঁকছেন।

এই একীভূতকরণ সফল হলে এয়ারটেল তার অ-মোবাইল আয় বাড়াতে পারত এবং প্রায় ২ কোটি প্রিমিয়াম গ্রাহকের বাজারে প্রবেশ করতে পারত। এছাড়া, এটি এয়ারটেলকে তার ৫জি বিনিয়োগ থেকে আরও ভালো রিটার্ন পেতে এবং রিলায়েন্স জিও-এর মতো প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সহায়তা করত।

প্রভাব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

এই আলোচনা বন্ধ হওয়ায় এয়ারটেল এবং টাটা গ্রুপকে তাদের ডিটিএইচ ব্যবসার লোকসান মোকাবিলার জন্য নতুন কৌশল খুঁজতে হবে। শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিটিএইচ শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ওটিটি পরিষেবার সঙ্গে একীভূতকরণ এবং গ্রাহকদের জন্য সমন্বিত পরিষেবা প্রদানের উপর। এয়ারটেলের এক্সট্রিম এবং টাটা প্লে-এর বিনজের মতো প্ল্যাটফর্ম ইতিমধ্যেই এই দিকে এগোচ্ছে।

এই সিদ্ধান্ত রিলায়েন্স জিও-এর মতো প্রতিযোগীদের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে, যারা ডিটিএইচ এবং ব্রডব্যান্ড পরিষেবায় শক্তিশালী উপস্থিতি রাখে।

ভারতী এয়ারটেল এবং টাটা গ্রুপের ডিটিএইচ ব্যবসার একীভূতকরণ নিয়ে আলোচনা সন্তোষজনক সমাধানের অভাবে বন্ধ হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ভারতের ডিটিএইচ শিল্পের চলমান চ্যালেঞ্জগুলোকে তুলে ধরে, যেখানে গ্রাহক সংখ্যা কমছে এবং লোকসান বাড়ছে। এয়ারটেল এবং টাটা গ্রুপ এখন তাদের ব্যবসায়িক কৌশল পুনর্বিবেচনা করবে, যখন গ্রাহকরা এই শিল্পের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে।