৭০,০০০ কোটি বিনিয়োগের ঘোষণা, ভারতে উৎপাদনে জোর দিচ্ছে সুজুকি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার একদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার ‘স্বদেশি’ ও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ (Make In India) কর্মসূচিকে…

Ahead Of US Tariffs, Modi Pushes Make In India

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার একদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার ‘স্বদেশি’ ও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ (Make In India) কর্মসূচিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানালেন। তিনি বলেন, “স্বদেশি আমাদের জীবনের মন্ত্র হওয়া উচিত। টাকা কার, সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু উৎপাদনের ঘাম ভারতীয়দের হতে হবে।”

গুজরাটের হান্সালপুরে মারুতি সুজুকির প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি ই-ভিটারার রফতানি কার্যক্রমের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি উদ্বোধন হয় লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি, সেল ও ইলেক্ট্রোড উৎপাদনের নতুন ইউনিটের। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতীয় গাড়ি শিল্পে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। মোদি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, “বিশ্ব এখন এমন এক সময়ে পৌঁছাচ্ছে, যখন রাস্তায় চলবে ভারতেই তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি।”

   

একই মঞ্চে জাপানের সুজুকি মোটর কর্পোরেশনের প্রতিনিধি পরিচালক ও প্রেসিডেন্ট তোশিহিরো সুজুকি ঘোষণা করেন, আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরে ভারতে তারা ৭০,০০০ কোটিরও বেশি টাকা বিনিয়োগ করবেন। এই অর্থ মূলত গবেষণা, উন্নয়ন, নতুন প্রযুক্তি, উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো এবং অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজে ব্যয় হবে।

মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান আর সি ভার্গব জানিয়েছেন, কোম্পানির লক্ষ্য বছরে ৪০ লক্ষ ইউনিট উৎপাদনের ক্ষমতা অর্জন করা। এজন্য প্রয়োজন হবে নতুন কারখানা, প্রযুক্তি বিনিয়োগ এবং গবেষণার খরচ। ইতিমধ্যেই সুজুকি গ্রুপ ভারতে এক লাখ কোটিরও বেশি বিনিয়োগ করেছে এবং এর মাধ্যমে ১১ লক্ষাধিক প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

গুজরাটের এই কারখানাটি আগামী দিনে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অটোমোবাইল উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন তোশিহিরো সুজুকি। প্রাথমিকভাবে ই-ভিটারার উৎপাদন এখানেই হবে এবং তা রফতানি করা হবে ১০০টিরও বেশি দেশে—যেমন যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, ইতালি, বেলজিয়ামসহ সমগ্র ইউরোপীয় অঞ্চলে।

তবে ভারতীয় বাজারে এখনই এই গাড়ি আনার পরিকল্পনা নেই। ভার্গব জানান, রফতানির চাহিদা মেটানোই এখন অগ্রাধিকার, পাশাপাশি ব্যাটারি আমদানির কারণে গাড়ির দাম তুলনামূলক বেশি। ফলে দেশীয় বাজারের জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।

ই-ভিটারার পাশাপাশি, সুজুকি গুজরাটে ভারতের প্রথম ইলেক্ট্রোড-লেভেল লোকালাইজড লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ও সেল উৎপাদন শুরু করেছে। এখানে কেবল কাঁচামাল ও কিছু সেমিকন্ডাক্টর জাপান থেকে আনা হচ্ছে, বাকি সবই দেশের মাটিতে তৈরি। সুজুকির ভাষায়, “এটি আত্মনির্ভর ভারতের প্রতি এক বড় সম্মান।”

Advertisements

তারা আরও জানিয়েছেন, শুধু বৈদ্যুতিক গাড়িই নয়, বরং একাধিক শক্তির উৎস ব্যবহার করে ভবিষ্যতের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গড়ে তোলা হবে—যেমন ইলেকট্রিক, স্ট্রং হাইব্রিড, ইথানল ফ্লেক্স ফুয়েল ও কমপ্রেসড বায়োগ্যাস। এর মাধ্যমে ভারত কার্বন নিরপেক্ষতা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার লক্ষ্য পূরণে একধাপ এগিয়ে যাবে।

মোদি তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে দেন, স্বদেশির মূল দর্শন হলো ভারতীয়দের পরিশ্রম ও অবদান। তিনি বলেন, “আমার কাছে টাকার উৎস নয়, উৎপাদনে ভারতীয়দের ঘামই বড় কথা। টাকা ডলার হোক বা ইয়েন, কালো টাকা হোক বা সাদা, তাতে কিছু যায় আসে না—যতক্ষণ পর্যন্ত ভারতীয় শ্রমিকরা এর সঙ্গে জড়িত।” তিনি আরও প্রতিশ্রুতি দেন, “২০৪৭ সালের মধ্যে আমরা এমন এক ভারত গড়ে তুলব, যার জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গর্ব করবে।”

মোদি এদিন ভারত-জাপান সম্পর্ককেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “ভারত ও জাপান একে অপরের জন্যই তৈরি।” দীর্ঘদিন ধরেই জাপানি বিনিয়োগ ভারতের শিল্পক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এবার মারুতি সুজুকির বিনিয়োগ পরিকল্পনা সেই সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করল।

মঙ্গলবারের এই অনুষ্ঠান নিঃসন্দেহে ভারতীয় অটোমোবাইল শিল্পের ইতিহাসে এক বড় মাইলফলক। গুজরাট থেকে প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক গাড়ি রফতানি হওয়ার মধ্য দিয়ে ভারত প্রমাণ করল, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা তার রয়েছে। একইসঙ্গে সুজুকির বিশাল বিনিয়োগ, দেশীয় ব্যাটারি উৎপাদন এবং মোদির স্বদেশি দর্শন মিলিয়ে ভারতীয় গাড়ি শিল্প এখন নতুন যুগে প্রবেশ করল।

আগামী দিনে দেশীয় বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম কমে এলে এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন হলে, ভারতীয় গ্রাহকরাও এই পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ অংশীদার হবেন। তখন সত্যিই বিশ্বের রাস্তায় ছুটবে “মেড ইন ইন্ডিয়া” বৈদ্যুতিক গাড়ি—যা শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রতীক নয়, আত্মনির্ভর ভারতের শক্তিরও প্রতিফলন।