নয়াদিল্লি, নভেম্বর: অকালবৃষ্টি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ বছর ভারতের গম উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কৃষি মন্ত্রকের সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের খরিফ ও রবি মরসুমে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ উৎপাদন হ্রাস ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে উত্তর ভারতে অকালবৃষ্টি এবং শিলাবৃষ্টির কারণে ফসল পেকে ওঠার আগেই অনেক ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান—এই পাঁচটি রাজ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে, যেগুলি দেশের গম উৎপাদনের মূল কেন্দ্র।
🌾 উৎপাদনে ধাক্কা, সরবরাহে আশঙ্কা
সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর যেখানে গম উৎপাদন হয়েছিল ১১২.৭৫ মিলিয়ন টন, সেখানে এ বছর তা কমে দাঁড়াতে পারে ১০৩ মিলিয়ন টনে। অর্থাৎ, প্রায় ১০ মিলিয়ন টনের ঘাটতি। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহে চাপ পড়তে পারে এবং গমের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
একজন কৃষি অর্থনীতিবিদ বলেন,
“গত কয়েক বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তন সরাসরি ফসলের উপর প্রভাব ফেলছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অকালবৃষ্টি—দুই-ই গমের ফুল ফোটার পর্যায়ে ক্ষতি করছে। এর ফলেই ফলন কমেছে।”
☁️ আবহাওয়া বদলের প্রভাব
ভারতের উত্তরাঞ্চলে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে সাধারণত শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়া থাকে, যা গম কাটার জন্য আদর্শ। কিন্তু এ বছর বারবার নিম্নচাপ ও বৃষ্টি সেই প্রক্রিয়া ব্যাহত করেছে। অনেক কৃষক জানিয়েছেন, কাটা ফসল মাঠে শুকানোর আগেই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
পাঞ্জাবের এক কৃষক বলেন,
“আমাদের প্রায় ৩০ শতাংশ ফসল বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। গমের দানায় আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় তার মান কমেছে, ফলে মিলাররা কম দামে কিনছে।”
মধ্যপ্রদেশ কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, কিছু অঞ্চলে ‘লাস্ট স্টেজ ফাঙ্গাল ইনফেকশন’ হয়েছে, যা সরাসরি গমের মান কমিয়ে দিয়েছে।
📉 বাজারে প্রভাব
কৃষি মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গমের দামের গড় বৃদ্ধি গত এক মাসে ৭ থেকে ৯ শতাংশ। মিলার ও পাইকারি বাজারে এখনই সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারের খাদ্য মজুতও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, ফলে রেশন ও পিডিএস ব্যবস্থায় চাপ পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ— সরকার যেন অবিলম্বে ন্যূনতম সমর্থনমূল্য (MSP) বাড়িয়ে কৃষকদের ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করে এবং বাজারে মূল্যনিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেয়।
🌱 সরকারের প্রতিক্রিয়া
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী এক বিবৃতিতে জানান, “সরকার পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। আমরা রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বিশেষ ক্ষতিপূরণ প্রকল্প বিবেচনা করছি।”
এছাড়াও, কৃষি বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিচ্ছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় ‘Heat-Resistant Wheat Varieties’ দ্রুত চাষে উৎসাহ দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ক্ষতি কম হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বছর গম উৎপাদনের এই পতন ভারতের কৃষি নীতিতে বড় পরিবর্তনের বার্তা দিচ্ছে। একদিকে প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ধাক্কা, অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তা ও মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা — এই দুই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা আগামী মাসগুলোতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।


