ভুট্টা চাষে বিপ্লব! পশুখাদ্যের চাহিদা মেটাতে বঙ্গে ৬০,০০০ হেক্টর নতুন জমি চাষের উদ্যোগ

West Bengal launches a major maize expansion plan to add 60,000 hectares under cultivation by 2025 to meet growing animal feed demand and reduce feed costs.

কলকাতা, ৪ নভেম্বরঃ পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের ক্রমবর্ধমান পশুখাদ্য সংকট মেটাতে ভুট্টা চাষের বিস্তারে বড়সড় উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্য কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ৬০,০০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ শুরু করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের দুগ্ধ, হাঁস-মুরগি ও মাছের খামার শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এই শিল্পগুলিতে ভুট্টা অন্যতম প্রধান খাদ্য উপাদান।

Advertisements

🌾 কেন বাড়ছে ভুট্টা চাহিদা

গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে পশুপালন ও পোল্ট্রি শিল্প দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষি দপ্তরের এক সিনিয়র আধিকারিক বলেন —

   

“রাজ্যে প্রতি বছর ভুট্টার চাহিদা প্রায় ৩৫ লক্ষ টন, কিন্তু উৎপাদন মাত্র ২২ লক্ষ টন। এই ঘাটতি পূরণেই আমরা ভুট্টা চাষ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ভুট্টা উৎপন্ন হয় উত্তর দিনাজপুর, মালদা, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান ও বাঁকুড়া জেলায়।

সরকারের নতুন পরিকল্পনায় দক্ষিণবঙ্গের কিছু শুকনো অঞ্চলেও সেচ সুবিধা বাড়িয়ে ভুট্টা চাষের জন্য উপযুক্ত করে তোলা হবে।

🌱 নতুন প্রকল্পের মূল দিক

কৃষি দপ্তর জানিয়েছে,

  • ৬০,০০০ হেক্টর নতুন জমি ধীরে ধীরে চাষযোগ্য করা হবে, বিশেষত পতিত জমি ব্যবহার করে।

  • ভুট্টা চাষের জন্য হাই-ইল্ড হাইব্রিড বীজ সরবরাহ করা হবে সরকারি ভর্তুকিতে।

  • ড্রিপ ইরিগেশন ও বৃষ্টিনির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম খরচে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।

  • কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তার জন্য “মকাই মিশন” (Maize Mission Bengal 2025) নামে একটি আলাদা প্রকল্প চালু হচ্ছে।

🐓 পশুখাদ্যের ওপর প্রভাব

রাজ্যের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে রাজ্যের মুরগি ও হাঁসের খামারগুলোতে ব্যবহৃত খাদ্যের প্রায় ৬৫% ভুট্টা নির্ভর।

ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পেলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদন খরচে — যা দুধ, ডিম ও মাংসের দামে স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করবে।

একজন পোল্ট্রি খামার মালিক বলেন,

Advertisements

“গত বছর ফিডের দাম প্রায় ৩০% বেড়েছিল, কারণ রাজ্যে পর্যাপ্ত ভুট্টা ছিল না। স্থানীয় উৎপাদন বাড়লে সেই চাপ অনেকটা কমবে।”

🌦️ চ্যালেঞ্জ ও আবহাওয়ার প্রভাব

তবে কৃষি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে ভুট্টা একটি আবহাওয়াসংবেদনশীল ফসল।

যদি অস্বাভাবিক বৃষ্টি বা খরা হয়, উৎপাদনে প্রভাব পড়তে পারে।

রাজ্যের কৃষি আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এই ঝুঁকি কমাতে কৃষকদের বীজ বপনের সময় ও জল ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

🧭 অর্থনৈতিক গুরুত্ব

রাজ্যে ভুট্টা চাষের বিস্তার কেবল পশুখাদ্য নয়, বরং গ্রামীণ অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করবে।

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১.৬ লক্ষ কৃষক সরাসরি ভুট্টা চাষের সঙ্গে যুক্ত। নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রায় ৫০,০০০ নতুন কৃষক এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে,

“ভুট্টা একটি উচ্চ ফলনশীল, কম শ্রমনির্ভর ফসল। এটি গ্রামীণ আয়ের উৎস বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম।”

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই Maize Expansion Plan 2025 একদিকে যেমন পশুখাদ্যের চাহিদা মেটাবে, অন্যদিকে কৃষকদের জন্য নতুন আয়ের রাস্তা খুলে দেবে।

যদি এই প্রকল্প সফল হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গ ভুট্টা উৎপাদনে দেশের শীর্ষ পাঁচ রাজ্যের তালিকায় উঠে আসতে পারে।

পরিবর্তনশীল আবহাওয়া ও বাজার-চাপের মধ্যে এই পরিকল্পনাই হতে পারে রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রে আগামী দিনের টার্নিং পয়েন্ট।