ভারতের মেট্রো শহরগুলোতে সবজির দাম আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছে, যা সাধারণ মানুষের রান্নাঘরে নতুন সংকট তৈরি করেছে। নভেম্বর ২০২৫-এর শুরুর দিকে দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাইয়ের মতো বড় শহরের বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৮০-১০০ টাকা, টমেটো ৯০-১২০ টাকা, আলু ৫০-৭০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সবুজ সবজি যেমন পালং শাক, লাউ, ক্যাপসিকামের দামও ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে কেজি প্রতি। এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মূলে রয়েছে সাপ্লাই চেইনের সম্পূর্ণ ভাঙন, অকাল বৃষ্টি এবং তাপপ্রবাহের কারণে ফসলের ক্ষতি।
একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, এই বৃদ্ধি ৫৭ মাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে, যা খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে ১০.৮৭ শতাংশে নিয়ে গেছে। সাপ্লাই চেইনের সমস্যা এখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। কৃষক থেকে বাজার পর্যন্ত সবজি পৌঁছাতে হাজারো কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়, কিন্তু অপর্যাপ্ত স্টোরেজ, কোল্ড চেইনের অভাব এবং পরিবহন ব্যবস্থার দুর্বলতা সবজির ৪০-৬০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশের মতো প্রধান উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোতে অকাল বৃষ্টি এবং তাপপ্রবাহ ফসল ধ্বংস করেছে। মহারাষ্ট্রের থানে এবং মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে টমেটো এবং পেঁয়াজের ফসল ৩০ শতাংশ কম উৎপন্ন হয়েছে। এর ফলে সাপ্লাই কমে যাওয়ায় খুচরা বাজারে দাম লাফিয়ে উঠেছে। একজন ব্যবসায়ী বলছেন, “গত দু’ সপ্তাহে সাপ্লাই ২০ শতাংশ কমেছে, যা সরাসরি দাম বাড়িয়েছে।”
এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও অস্বীকার করা যায় না। ২০২৫ সালের মনসুন অসময়ে এসে উত্তর ভারতে বন্যা সৃষ্টি করেছে, যা পরিবহন ব্যাহত করেছে। দিল্লির আজাদপুর মণ্ডিতে আগমন কমে যাওয়ায় সবজির দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। 
সরকারি তথ্য অনুসারে, পোস্ট-হার্ভেস্ট লসের কারণে বার্ষিক ২০-৩০ শতাংশ সবজি নষ্ট হয়, যা দামের পার্থক্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে—যেখানে কৃষক ১০ টাকায় বিক্রি করেন, ক্রেতা ৭০ টাকা দেন। এই সংকট সাধারণ পরিবারকে কষ্ট দিচ্ছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৯ শতাংশ পরিবার সবুজ সবজির খরচ কমিয়েছে, কেউ কেউ সস্তা উৎস থেকে কিনছেন।
মহিলারা বলছেন, “রান্নায় সবজি কম ব্যবহার করছি, কিন্তু পুষ্টির ঘাটতি হচ্ছে।” খাদ্য থালির খরচ ১১ শতাংশ বেড়েছে, যা মধ্যবিত্তের বাজেটকে চাপে ফেলেছে।
সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার বাফার স্টক থেকে পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজিতে সাবসিডাইজড দরে বিক্রি শুরু করেছে দিল্লি-এনসিআর এবং অন্যান্য শহরে। ৪.৫ লক্ষ টন স্টক থেকে ১.৫ লক্ষ টন বিলি হয়েছে।
টমেটো ৬৫ টাকায় ৫০টি স্থানে বিক্রি হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি অস্থায়ী। দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে কোল্ড স্টোরেজ, রেফ্রিজারেটেড ট্রাক এবং সাপ্লাই চেইন আধুনিকীকরণ দরকার। প্রধানমন্ত্রী কৃষি সংস্কার যোজনা (পিএমকেএসওয়াই) এর মাধ্যমে প্রসেসিং ইউনিট এবং ভ্যালু চেইন গড়ে তোলা হচ্ছে, যা বর্ষাকালীন ক্ষতি কমাতে সাহায্য করবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ২০২৫-এর শেষ পর্যন্ত এই উচ্চমূল্য অব্যাহত থাকতে পারে, যদি না সরবরাহ বাড়ানো হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) এর হার কাটার সম্ভাবনা কমে গেছে।
কৃষকরা আহ্বান জানাচ্ছেন, সহযোগিতামূলক সমিতি গঠন করে মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিতে হবে। সাধারণ মানুষের জন্য এই সংকট শিক্ষা—স্থানীয় সবজি কেনা, সংরক্ষণের উপায় খুঁজে নেওয়া। সরকারের উচিত জলবায়ু-সহনশীল ফসল চাষ এবং ডিজিটাল মার্কেটিংকে উৎসাহিত করা। এমনকি, জৈব চাষ এবং সাসটেইনেবল প্র্যাকটিস বাড়ালে দীর্ঘমেয়াদে দাম স্থিতিশীল হবে।
এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরও শক্তিশালী সাপ্লাই সিস্টেম গড়তে পারি, যাতে কোনো বর্ষায় মানুষের পাতে সবজির অভাব না হয়।


