লখনউ, ১ নভেম্বর: উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও বিহারের হাজার হাজার আখচাষি (Sugarcane Farmers) এই মুহূর্তে তীব্র আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন। বাজারে আখের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। চাষিরা একদিকে ক্রমবর্ধমান সার, শ্রমিক মজুরি ও জ্বালানি খরচের চাপে পড়েছেন, অন্যদিকে চিনি মিলগুলির বিলম্বিত পরিশোধ তাদের সমস্যাকে আরও গভীর করছে।
📉 দামের ধসের কারণ কী?
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমে যাওয়াই মূল কারণ। ব্রাজিল, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো এ বছর রেকর্ড পরিমাণে আখ উৎপাদন করেছে, ফলে বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়েছে এবং দামে চাপ পড়েছে।
এছাড়া, ভারত সরকার সম্প্রতি চিনির রপ্তানি সীমিত করায় মিল মালিকরা ঘরোয়া বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। এর ফলেই মিল পর্যায়ে আখের ক্রয়মূল্য (Fair & Remunerative Price – FRP) কমানো বা বিলম্বে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
🚜 চাষিদের দাবি
উত্তরপ্রদেশের মুজাফ্ফরনগরের আখচাষি রামবাবু সিং বলেন,
“এক বিঘা জমিতে আখ চাষ করতে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এখন মিলগুলি টনপ্রতি ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত দাম দিচ্ছে, যা উৎপাদন খরচও তুলছে না। গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০% কম।”
চাষিদের অভিযোগ, চিনির মিলগুলি তাদের পেমেন্ট ৩-৪ মাস পর্যন্ত বিলম্বে দিচ্ছে, ফলে কৃষকদের ধার করে বাঁচতে হচ্ছে। অনেকেই বিকল্প ফসলের দিকে ঝুঁকছেন, বিশেষ করে গম, ভুট্টা ও সবজি চাষে।
🧾 সরকারের ভূমিকা
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো বড় আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা না হলেও, সূত্রের খবর—উত্তরপ্রদেশ সরকার ‘আখ মূল্য স্থিতিকরণ তহবিল’ গঠনের পরিকল্পনা করছে, যেখানে মিল ও সরকারের যৌথ অবদান থাকবে।
এছাড়া, কৃষি মন্ত্রক একটি ‘দ্রুত পেমেন্ট মনিটরিং পোর্টাল’ চালুর কথা ভাবছে, যার মাধ্যমে চাষিরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন যদি পেমেন্ট বিলম্বিত হয়।
কৃষি মন্ত্রী সুরেশ রানা জানিয়েছেন,
“আমরা চিনি মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। চাষিদের পেমেন্ট নিশ্চিত করতে কড়া নজরদারি হবে। পাশাপাশি বাজারে চিনির দামের স্থিতিশীলতার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গেও কথা চলছে।”
💰 FRP এবং রাজ্য সহায়তা
কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে আখের ন্যূনতম সমর্থনমূল্য (FRP) নির্ধারণ করেছে প্রতি টন ₹৩১৫ (১০.২৫% রিকভারি রেটের ভিত্তিতে)। কিন্তু মিল মালিকদের বক্তব্য—চিনির আন্তর্জাতিক দাম কমে যাওয়ায় এবং রপ্তানির সীমাবদ্ধতায় তারা এই হার বহন করতে পারছেন না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি রাজ্য সরকাররা অতিরিক্ত ‘রাজ্য পরামর্শমূল্য (SAP)’ ঘোষণা না করে, তাহলে কৃষকরা বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন।
🌾 ভবিষ্যতের উদ্বেগ
বেশ কয়েকটি কৃষক সংগঠন ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে, যদি নভেম্বরের মধ্যে মিলগুলি পেমেন্ট না করে, তাহলে তারা রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে নামবেন।
মহারাষ্ট্রের একটি কৃষক ইউনিয়নের সভাপতি ধনঞ্জয় জাধব বলেন,
“আমরা চাষ করি দেশের জন্য, কিন্তু ন্যায্য দাম না পেলে আমরা আর টিকতে পারব না। সরকারকে এখনই হস্তক্ষেপ করতে হবে।”
🌱 টেকসই সমাধানের পথে
অর্থনীতিবিদদের মতে, আখচাষকে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল রাখতে হলে সরকারকে বিকল্প খাতে মনোযোগ দিতে হবে — যেমন এথানল উৎপাদন বাড়ানো, জৈব চাষে উৎসাহ দেওয়া এবং জল সংরক্ষণে প্রযুক্তি ব্যবহার করা।
এছাড়া, “One Nation, One Sugar Price Policy” চালুর দাবি উঠেছে যাতে কৃষকরা দেশের সব অঞ্চলে সমান ন্যায্য দাম পান।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনির উৎপাদক দেশ। কিন্তু যদি আখচাষিরা ন্যায্য মূল্য না পান, তবে এই সেক্টর বড় সঙ্কটে পড়তে পারে। এখন দেখার বিষয়—রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র কত দ্রুত এই সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে আসে।


