রাজধানী নয়াদিল্লির পুসা প্রাঙ্গণে শনিবার এক বিশেষ কৃষক সংলাপে অংশ নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ICAR-IARI) আয়োজিত এই কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কৃষকরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।
অনুষ্ঠানে কৃষকরা জানান, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প তাঁদের জীবনে কীভাবে পরিবর্তন এনেছে। কেউ বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের পরিবারের একজন সদস্যের মতো। তিনি যখন কথা বললেন, মনে হলো আত্মীয়জন আমাদের পাশে রয়েছেন।”
কৃষকদের মুখে প্রকল্পের সাফল্য
একজন মহিলা কৃষক বলেন, “পিএম কিষান সমমান নিধি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। বছরে ৬,০০০ টাকা পেয়ে আমরা জমি চাষ ও বীজ কেনার কাজে এটি ব্যবহার করি।”
অন্যদিকে উত্তরাখণ্ডের এক মৎস্যচাষী নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, “২০২০ সালে পিএম মৎস্য সম্পদ যোজনায় যুক্ত হই। সরকারি ভর্তুকি পেয়ে শুধু নিজের জীবনই বদলাতে পারিনি, আরও ২৫ জনকে কর্মসংস্থান দিতে পেরেছি।”
প্রাকৃতিক চাষে জোর
প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের প্রাকৃতিক চাষে উৎসাহিত করে বলেন, “এই জমি আমাদের মা। মাকে যদি ভুলভাবে খাওয়াই, মা টিকবে কীভাবে? তাই কম সার ব্যবহার করে জমিকে উর্বর রাখা আমাদের কর্তব্য।”
তিনি কৃষকদের পরামর্শ দেন— যার চার বিঘা জমি আছে, সে যেন অন্তত এক বিঘায় প্রাকৃতিক চাষ শুরু করে। এতে সাফল্য এলে ধীরে ধীরে বাকি জমিতেও আস্থা তৈরি হবে।
সৌর শক্তির ব্যবহার
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জমির চারপাশে বেড়া দিতে যে জমি নষ্ট হয়, সেই জায়গায় সোলার প্যানেল বসানো সম্ভব। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, কৃষক সেই বিদ্যুৎ বিক্রি করেও আয় করতে পারবেন। সরকার এ জন্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।”
ঐতিহাসিক বিনিয়োগ ও নতুন প্রকল্প
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুটি বড় কৃষি প্রকল্প উদ্বোধন করেন— “প্রধানমন্ত্রী ধন-ধান্য কৃষি যোজনা” ও “ডাল শস্যে আত্মনির্ভরতা মিশন”। এগুলি মোট ১১টি মন্ত্রকের ৩৬টি উপ-যোজনাকে একত্রিত করে গঠিত হয়েছে।
একই সঙ্গে কৃষি অবকাঠামো তহবিল (AIF), পশুপালন, মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে প্রায় ১,১০০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে ৪২,০০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ হবে, যা আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ, গুদাম ও প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র তৈরিতে সহায়তা করবে।
আত্মনির্ভর কৃষির পথে অগ্রযাত্রা
মোদী বলেন, “এই উদ্যোগগুলি ভারতের কৃষিকে আরও শক্তিশালী করবে। কৃষকবান্ধব নীতি, প্রযুক্তি-নির্ভর চাষাবাদ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকরা আগামী দিনে আত্মনির্ভর ও সমৃদ্ধ হবেন।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্প ও বিনিয়োগ ভারতের কৃষি খাতে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। প্রাকৃতিক চাষ, সৌর শক্তি ব্যবহার, আধুনিক অবকাঠামো ও ভর্তুকি মিলিয়ে আগামী দিনের কৃষি হবে আরও টেকসই ও লাভজনক।৷