ভারতের কৃষিক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস রচনা হল শনিবার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একসঙ্গে দুটি বিশাল কৃষি প্রকল্প উদ্বোধন করলেন— “পিএম ধন-ধান্য কৃষি যোজনা” এবং “ডালহান আত্মনির্ভরতা মিশন”। এই দুটি প্রকল্পকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে কৃষক সমাজে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এক্স (X) প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আজ ভারতের কৃষি ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জি ‘পিএম ধন-ধান্য কৃষি যোজনা’ এবং ‘ডালহান আত্মনির্ভরতা মিশন’ উদ্বোধনের মাধ্যমে কৃষকদের জীবনে সমৃদ্ধি ও মর্যাদার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলেন।”
৩৫,৪৪০ কোটি টাকার বিশাল প্রকল্প
নয়াদিল্লিতে আয়োজিত এক বিশেষ কৃষি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এই দুটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। কেন্দ্র জানিয়েছে, এই প্রকল্পগুলির সম্মিলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ₹৩৫,৪৪০ কোটি টাকা। এর লক্ষ্য কৃষিক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়ন, সেচ ব্যবস্থার প্রসার, সংরক্ষণশালা নির্মাণ এবং ফসল বৈচিত্র্য বৃদ্ধি। একইসঙ্গে দেশীয় ডাল উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানির উপর নির্ভরশীলতা কমানোও এই প্রকল্পগুলির অন্যতম উদ্দেশ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ দেশের আত্মনির্ভরতা ও কৃষকের কল্যাণে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সূচনা হচ্ছে। কোটি কোটি কৃষকের ভাগ্য বদলাতে সরকার ৩৫ হাজার কোটিরও বেশি ব্যয় করবে।”
কৃষকদের আত্মনির্ভরতার পথে
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দুটি প্রকল্প কার্যকর হলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। কৃষকদের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি, আধুনিক সেচ ব্যবস্থা ও ফসল সংরক্ষণের সুযোগ তৈরি হবে। ডাল উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা আসলে গ্রামীণ পরিবারের পুষ্টি নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।
দুই মহান নেতার জন্মজয়ন্তীতে উপহার
প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা করেছেন ভারতরত্ন জয়প্রকাশ নারায়ণ এবং নানাজি দেশমুখের জন্মজয়ন্তীর দিনে। এই দুই মহান ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ করে মোদী বলেন, “তাঁরা ছিলেন গ্রামীণ ভারতের কণ্ঠস্বর ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পথিকৃৎ। তাঁদের জন্মদিনে কৃষকদের জন্য এই প্রকল্প উৎসর্গ করা আমাদের গর্ব।”
পূর্বতন সরকারের সমালোচনা
বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী মোদী কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন পূর্বতন সরকারগুলিকে একহাত নেন। তাঁর অভিযোগ, “পূর্ববর্তী সরকারগুলো কৃষিক্ষেত্রে কোনও দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে পারেনি। কৃষকদের অবহেলা করা হয়েছে, যার ফলে দেশের কৃষি ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, বিজেপি সরকার কৃষিক্ষেত্রে একের পর এক সংস্কার করেছে, এবং আজ তার ফলাফল কৃষকের মাঠে দৃশ্যমান। “আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট— কৃষকদের সম্মান ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা,” যোগ করেন মোদী।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
উত্তরাখণ্ডের সিএম ধামি বলেন, “কৃষকদের জীবনে মর্যাদা ও আয় বৃদ্ধি এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। অবকাঠামো, সেচ, সংরক্ষণ এবং ফসল বৈচিত্র্যের মাধ্যমে উত্তরাখণ্ডের কৃষকরাও উপকৃত হবেন।” তিনি এটিকে ভারতের কৃষি ইতিহাসে এক “ঐতিহাসিক মাইলফলক” বলে উল্লেখ করেন।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই ঘোষণা কৃষি অর্থনীতির নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলেই আশা করা হচ্ছে। বিশাল বিনিয়োগ ও পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকরা আরও আত্মনির্ভর হবেন এবং ভারতের খাদ্য সুরক্ষা আরও সুদৃঢ় হবে।
সব মিলিয়ে, ‘পিএম ধন-ধান্য কৃষি যোজনা’ ও ‘ডালহান আত্মনির্ভরতা মিশন’ দেশের কৃষকদের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এখন দেখার বিষয়, প্রকল্পগুলি মাঠে কত দ্রুত কার্যকর হয় এবং কতটা বাস্তব পরিবর্তন আনে।