নয়াদিল্লি, ৩০ অক্টোবর: আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় ভারতের সয়াবিন মিল (Soybean Meal) রপ্তানি চলতি তেল বিপণন বছরে ১১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ইন্দোর-ভিত্তিক সয়াবিন প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (SOPA) বুধবার জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ তেল বিপণন বছরে (অক্টোবর ২০২৪ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫) মোট রপ্তানি হয়েছে মাত্র ২০.২৩ লাখ টন।
২০২৩-২৪ তেল বিপণন বছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২২.৭৫ লাখ টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় আড়াই লাখ টন কমে গেছে সয়াবিন মিল রপ্তানি।
প্রধান আমদানিকারক দেশগুলো
SOPA-র এক আধিকারিক জানিয়েছেন, জার্মানি, ফ্রান্স, নেপাল, বাংলাদেশ ও কেনিয়া ভারতের সয়াবিন মিলের শীর্ষ পাঁচ আমদানিকারক দেশ হিসেবে উঠে এসেছে। শুধু এই পাঁচটি দেশেই গেছে ভারতের মোট রপ্তানির প্রায় ৫৫ শতাংশ।
তবে সামগ্রিকভাবে বিশ্ববাজারে ভারতের পণ্য তেমন প্রতিযোগিতামূলক থাকেনি। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মতো বড় রপ্তানিকারক দেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে ভারত পিছিয়ে পড়েছে।
উচ্চ দামের কারণে ক্ষতি
SOPA-র নির্বাহী পরিচালক ডি. এন. পাঠক সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছেন, “ভারতীয় সয়াবিন মিলের দাম যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার তুলনায় অনেক বেশি। সেই কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় সয়াবিন মিলের চাহিদা কমেছে।”
আসলে বিশ্ববাজারে কৃষিজাত পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্য একটি প্রধান নির্ধারক। ভারতীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিটে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি হওয়ায় সয়াবিন মিল আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সয়াবিন মিলের গুরুত্ব
সয়াবিন মিল আসলে সয়াবিন তেল নিষ্কাশনের পর যে উপজাত পাওয়া যায় সেটি। প্রোটিন সমৃদ্ধ এই পণ্যটি খাদ্যশস্য হিসেবে যেমন ব্যবহার হয়, তেমনি পশুখাদ্য, পোলট্রি ফিড ও মাছের খাদ্য তৈরিতেও অপরিহার্য। পাশাপাশি সয় ফ্লাওয়ার ও সয় chunks-এর মতো নানা খাদ্যপণ্যের কাঁচামাল হিসেবেও এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
ভারতের কৃষি রপ্তানির বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে সয়াবিন মিল, যা বিদেশি মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে রপ্তানি কমে যাওয়াকে কৃষি-বাণিজ্যের জন্য উদ্বেগজনক হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
প্রেক্ষাপট
গত কয়েক বছরে ভারতীয় কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভোলাটিলিটি বা ওঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্ববাজারে সরবরাহ বাড়া বা প্রতিযোগী দেশের কম দাম অনেক সময় ভারতীয় পণ্যের চাহিদা কমিয়ে দেয়। সয়াবিন মিলের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা থেকে পণ্য সংগ্রহ করছে। তাতে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় সয়াবিন প্রসেসরদের উচিত খরচ কমানোর দিকে নজর দেওয়া এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক দাম নিশ্চিত করা। পাশাপাশি সরকার চাইলে কৃষক ও রপ্তানিকারকদের জন্য নীতি-সমর্থন বাড়াতে পারে।
বাংলাদেশ, নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশ ভারতের বড় বাজার। তাই নিকটবর্তী অঞ্চলে পরিবহণ খরচ কমিয়ে ও মান উন্নত করে ভারত পুনরায় চাহিদা বাড়াতে পারে।
ভারতের সয়াবিন মিল রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ১১% কমে যাওয়া নিঃসন্দেহে কৃষি-বাণিজ্যের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। উচ্চ দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের প্রতিযোগিতা শক্তি কমিয়ে দিচ্ছে। এখন বড় প্রশ্ন—ভারতীয় প্রসেসররা কীভাবে এই পরিস্থিতি সামলাবে এবং আবারও বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান শক্ত করবে।


