ভারতীয় গবেষণায় বাজারে আসছে রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা সম্পন্ন টমেটো

icar-new-tomato-variety-2025-double-yield

ভারতের কৃষিক্ষেত্রে আবারও নতুন দিগন্ত খুলে দিল আইসিএআর (Indian Council of Agricultural Research)। সংস্থার বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন এক নতুন জাতের টমেটো উদ্ভাবন করেছেন, যার ফলন প্রচলিত জাতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। শুধু তাই নয়, এই নতুন জাতের টমেটো রোগপ্রতিরোধী, পরিবেশ সহনশীল এবং বাজারজাত করার উপযোগীতাও অনেক বেশি।

Advertisements

আইসিএআর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই টমেটো জাতটির উন্নয়ন হয়েছে আইসিএআর – ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ভেজিটেবল রিসার্চ (IIVR), বারাণসী-র গবেষণাগারে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে টমেটো চাষে ফলন হ্রাস ও ভাইরাসঘটিত রোগের প্রকোপ বাড়ছিল। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই নতুন জাতের টমেটো তৈরি করা হয়েছে আধুনিক হাইব্রিড ক্রসিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

সুপার কাপে নেই রিয়াল কাশ্মীর, দুই প্রধানের সাথে খেলবে কারা?

এই জাতটির বিশেষত্ব হলো এতে টমেটো লিফ কার্ল ভাইরাস (TLCV) এবং ফুসারিয়াম উইল্ট-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি। সাধারণ টমেটো চাষে যেখানে প্রতি একরে গড়ে ২০-২৫ টন ফলন পাওয়া যায়, সেখানে এই নতুন জাত থেকে ৪০-৪৫ টন পর্যন্ত ফলন সম্ভব বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।

পরীক্ষামূলকভাবে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশে কয়েকশো কৃষকের জমিতে এই জাতের ফিল্ড ট্রায়াল পরিচালনা করা হয়েছে। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গিয়েছে, এই জাতের গাছগুলিতে ফলের আকার বড়, রঙ উজ্জ্বল, এবং সংরক্ষণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে পরিবহন ও বাজারজাত করণেও সুবিধা হবে চাষিদের।

আইসিএআর-এর বিজ্ঞানী ড. অনিল কুমার তিওয়ারি বলেন, “আমরা এমন একটি জাত তৈরি করেছি যা শুধু উৎপাদন বাড়াবে না, বরং চাষিদের আর্থিক ঝুঁকি অনেক কমাবে। কারণ, রোগের কারণে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।”

Advertisements

বাংলার অনেক কৃষকই ইতিমধ্যে এই জাত নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। মুর্শিদাবাদ জেলার চাষি সুব্রত ঘোষ বলেন, “গত বছর ভাইরাসে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। যদি এই জাতটি সত্যি এত ফলন দেয় এবং রোগ না ধরে, তাহলে চাষিরা অনেক উপকৃত হবেন।”

কৃষি দফতর জানিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (KVK)-এর মাধ্যমে আগামী মরসুমে এই জাতের বীজ সরবরাহের পরিকল্পনা চলছে। কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “আমরা চাইছি এই জাতটি সারা রাজ্যে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে। কারণ এটি টমেটো উৎপাদনে একটি গেম চেঞ্জার হতে পারে।”

টমেটো ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সবজি ফসল, যা প্রায় প্রতিটি রাজ্যে চাষ করা হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও ভাইরাসঘটিত রোগের কারণে ফলন গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আইসিএআর-এর নতুন জাত চাষিদের কাছে আশার আলো হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ শুধু টমেটো চাষেই নয়, ভারতের সবজি উৎপাদন ও রফতানিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। আগামী মরসুমেই দেখা যাবে  এই নতুন জাত আসলেই ভারতের কৃষিতে কতটা পরিবর্তন আনতে পারে।