গুগলের চাকরি ছেড়ে পঞ্জাবী ইঞ্জিনিয়ার শহুরে পরিবারকে পৌঁছে দিচ্ছেন রাসায়নিকমুক্ত সবজি

Google engineer quit job Punjab Gill Organics chemical free vegetables

পাটিয়ালা, ২৫ অক্টোবর: প্রযুক্তি জগতে সাফল্যের চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে এসে নতুনভাবে কৃষিকে গড়ে তুলছেন পঞ্জাবের এক তরুণ ইঞ্জিনিয়ার। মন্তাজ সিধু, যিনি একসময় আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে গুগলে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন, এখন পাটিয়ালার কাছে গড়ে তুলেছেন ‘Gill Organics’—এক অভিনব ফার্ম, যেখানে শহুরে পরিবাররা পাচ্ছেন রাসায়নিকমুক্ত, টাটকা সবজি।

Advertisements

শহুরে পরিবারে নিরাপদ খাবারের চাহিদা

আজকের দিনে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খাদ্যে ভেজাল ও অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার। শহরে বসবাসকারী পরিবাররা প্রায়ই বুঝতেই পারেন না তাঁদের সবজি কোথা থেকে আসছে, কতবার কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে। এই সমস্যার সমাধান করতেই এগিয়ে এসেছেন মন্তাজ।

তাঁর উদ্যোগ এমন এক ব্যবস্থা তৈরি করেছে যেখানে শহুরে পরিবাররা ফার্মে এসে নির্দিষ্ট এক টুকরো জমি ‘অ্যাডপ্ট’ করতে পারে। সেখানে ঋতুভিত্তিক ১৮ প্রকার সবজি চাষ হয়। পরিবার চাইলে নিজের হাতে ফসল তুলতে পারে, আবার সুবিধার্থে বাড়িতেও পৌঁছে দেওয়া হয় সেই সবজি।

গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা

পাটিয়ালার বাসিন্দা হরপ্রীত সিং জানান, Gill Organics-এর জমিতে মাত্র ১৫০ স্কয়ার ইয়ার্ড জমি নিয়ে তাঁর পরিবারের প্রায় ৬৫ শতাংশ সবজির চাহিদা মেটে।

তিনি বলেন, “বাজারের তুলনায় এখানে পাওয়া পালং শাক বা আলু অনেক বেশি সুস্বাদু। রান্নার পরও পালং শাক সবুজ থাকে, যেখানে বাজারের শাক বাদামি হয়ে যায়।”

হরপ্রীতের আরও যোগ, “আগে সবজি রান্না করার আগে রাসায়নিক ধোয়ার লিকুইডে ডুবিয়ে রাখতে হত। এখন শুধু কলের জলে ধুয়েই রান্না করি। এতে আমি নিশ্চিত থাকি আমার বাচ্চারা রাসায়নিকমুক্ত খাবার খাচ্ছে।”

গুগল থেকে ফার্মে ফেরা

২০২২ সালে মন্তাজ তাঁর উচ্চবেতনের চাকরি ছেড়ে ভারতে ফেরেন। কারণ ছিল দুটি—পরিবারের কাছাকাছি থাকা এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা। তাঁর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, ইউরোপে খাদ্য নিরাপত্তার নিয়ম এতটাই কড়া যে অনেক কীটনাশক যেগুলি ভারতে ব্যবহার হয়, সেগুলি সেখানে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর কৃষকদের বাজারে সরাসরি পণ্য বিক্রির সুযোগও অনেক বেশি।

ভারতে ফিরে এসে তিনি চাইলেন সাসটেইনেবল কৃষিকে ব্যবসার আকার দিতে। কাজেই তিনি তাঁর চাচাতো ভাই বলজিৎ সিং গিল-এর সঙ্গে মিলে শুরু করলেন Gill Organics

Advertisements

চাষের বৈশিষ্ট্য

Gill Organics-এর জমিতে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার হয় না।

  • সার হিসেবে ব্যবহার হয় গোবর ও ভার্মি কম্পোস্ট।

  • পোকা দমনে কাজে লাগে ইউভি লাইট, স্টিকি ট্র্যাপ ও টক লস্যি।

  • ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো হয় না; বরং মাটিতে মলচিং করে আর্দ্রতা ধরে রাখা হয়।

এই প্রথাগুলি জমির উর্বরতা বজায় রাখার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব কৃষি নিশ্চিত করে।

শহুরে পরিবারের কাছে সাড়া

বর্তমানে পাটিয়ালা, লুধিয়ানা ও চণ্ডীগড়ে Gill Organics কাজ করছে। ছয় মাসের সাবস্ক্রিপশনের জন্য পরিবারগুলিকে দিতে হয় প্রায় ৩০,০০০–৩৫,০০০ টাকা। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫টি পরিবার এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, আর জমি বাড়িয়ে ২ একর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে।

মন্তাজের অনুভূতি

গুগলের চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্তে প্রথমে পরিবার-বন্ধুরা অবাক হলেও আজ তিনি নিশ্চিত, তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।

“গুগলে কাজ করে বড় কোম্পানির আড রেভিনিউ বাড়ানো যতটা আনন্দ দেয়নি, তার চেয়ে অনেক বেশি তৃপ্তি পাই যখন কেউ বলেন, আমাদের জৈব সবজি তাঁদের ক্যান্সার আক্রান্ত বাবা-মা বা গর্ভবতী স্ত্রীর জন্য নিয়েছেন,” মন্তাজ বলেন।

তিনি যোগ করেন, “হয়তো আগের মতো বেশি টাকা উপার্জন করছি না, কিন্তু আজ আমার কাজ মানুষের জীবনকে ছুঁতে পারছে। এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”

Gill Organics আজ শহুরে পরিবারের জন্য এক নতুন আশা—রাসায়নিকমুক্ত, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবার। একই সঙ্গে এটি কৃষিক্ষেত্রে নতুন এক ব্যবসায়িক মডেল, যা প্রমাণ করছে—শুধু ফসল নয়, মানুষের আস্থা ও সুস্বাস্থ্যও ফলানো যায় জমিতে।