কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে কৃষিকাজে! কয়েক বছরে কোটিপতি বিবেকানন্দ

Corporate to Crorepati: ৪০ বছরের কর্পোরেট অভিজ্ঞতা। গুজরাট, মহারাষ্ট্র থেকে শুরু করে ভারতের নানা রাজ্যে দীর্ঘ কর্মজীবন। অথচ সেই চাকরিজীবী মানুষই আজ একজন সফল কৃষক।…

From Corporate Job to Crorepati Farmer: Vivekananda Mishra’s Agricultural Success

Corporate to Crorepati: ৪০ বছরের কর্পোরেট অভিজ্ঞতা। গুজরাট, মহারাষ্ট্র থেকে শুরু করে ভারতের নানা রাজ্যে দীর্ঘ কর্মজীবন। অথচ সেই চাকরিজীবী মানুষই আজ একজন সফল কৃষক। শুধুই কৃষক নয়, কোটিপতি কৃষক! ওড়িশার ভদ্রক জেলার বাসিন্দা বিবেকানন্দ মিশ্র তাঁর জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করেছেন জমির সঙ্গে, মাটির সঙ্গে।

Advertisements

অবসরের পর যখন শহরের চাকরির ব্যস্ততা থেমে গেল, তখন মনের কোণে গাঁথা হয়ে থাকল এক দৃশ্য—উর্বর জমিগুলি পতিত পড়ে আছে, আর গ্রামের যুবসমাজ শহরের দিকে পাড়ি দিচ্ছে কাজের খোঁজে। বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লির মতো শহরে ছুটে চলেছে গ্রামীণ যুবকরা, ফেলে রেখে তাদের জন্মভূমি। এই দৃশ্যই বিবেকানন্দ মিশ্রকে নাড়িয়ে দেয়। তিনি বুঝলেন, এই পতিত জমিগুলির মধ্যেই লুকিয়ে আছে সম্ভাবনার বীজ। সেই বীজ বপন করেই শুরু হল তাঁর নতুন যাত্রা—কৃষি যাত্রা।

বিজ্ঞাপন

পূর্বসূরিদের জমিতে আধুনিক চাষ
২০২২ সালে তিনি নিজের পৈতৃক ১০ একর জমিতে কৃষিকাজ শুরু করেন ভদ্রক জেলায়। তিনি সাধারণ ধান বা গম নয়, বেছে নিয়েছিলেন উচ্চমূল্য ফল ও কাঠজাত গাছ। ফল হিসেবে লাগান ৬০০ গুঁয়া (পেয়ারা) গাছ, ৬০০ সুপারি গাছ এবং ৪,০০০-এরও বেশি টিম্বার গাছ, যার মধ্যে আছে মহগনি, চন্দন ও সেগুন।

মাত্র আড়াই বছরের মধ্যেই এই গাছগুলির ফলন চোখে পড়ার মতো। পেয়ারা বাগানে বছরে ১৫ থেকে ২০ কুইন্টাল ফল পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে, মহগনি গাছের উচ্চতা ইতিমধ্যেই ২৫-৩০ ফুটে পৌঁছেছে, চন্দনের গাছও ৫-৮ ফুট লম্বা হয়েছে।

দ্বিতীয় খামারে প্রযুক্তির ছোঁয়া
ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে থাকা বিবেকানন্দ থেমে থাকেননি। এবার তিনি দৃষ্টি ফেরালেন ধেনকানাল জেলায়, যেখানে ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে কম। সেখানে তিনি ৫ একর জমি কিনে শুরু করেন আধুনিক কৃষিকাজ—প্রটেক্টেড ফার্মিং মডেল। জমিটিকে তিন ভাগে ভাগ করে তিনি তৈরি করেন একটি পলিহাউস, একটি নেট হাউস এবং ওপেন ফার্মিং এরিয়া।

পলিহাউস-এ তিনি চাষ করেন পাকচয়, লেটুস, চাইনিজ বাঁধাকপি, বাসিল ইত্যাদি শহরমুখী উচ্চমূল্য শাকসবজি। নেট হাউস-এ তিনি চাষ করেন ক্যাপসিকাম, সিজনাল টমেটোর মতো লতানো সবজি, যেখানে গুণগত মান আর উৎপাদনশীলতার উপর জোর দেওয়া হয়। ওপেন ফার্মিং এরিয়াতে তিনি রোটেশনাল ক্রপিং এর মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য ঠিক রাখার পরিকল্পনা নিয়েছেন।

এই অত্যাধুনিক, পরিকল্পিত কৃষি মডেল থেকেই তিনি আগামী বছরে (জানুয়ারি ২০২৫ – জানুয়ারি ২০২৬) প্রায় ১ কোটি টাকার রাজস্ব অর্জনের আশায় রয়েছেন। শুধুমাত্র জমি নয়, সঠিক পরিকল্পনা ও বাজারমুখী উৎপাদনের মধ্য দিয়েই এসেছে এই সাফল্য।

From Corporate Job to Crorepati Farmer: Vivekananda Mishra’s Agricultural Success
From Corporate Job to Crorepati Farmer: Vivekananda Mishra’s Agricultural Success

যুবসমাজ ও কৃষি—এক নতুন পথ দেখাচ্ছেন বিবেকানন্দ

তাঁর কৃষি সাফল্য শুধুই আর্থিক নয়, সামাজিক দিক থেকেও উল্লেখযোগ্য। তিনি চান, গ্রামের যুব সমাজ কৃষিকে আবার তাদের জীবনের কেন্দ্রে নিয়ে আসুক। এজন্য তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, উদ্যানপালন বিভাগ ও সরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে। তিনি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবির, কর্মশালা এবং সচেতনতা অভিযান চালান কৃষকদের জন্য।

তাঁর মতে, কৃষিই হতে পারে গ্রামীণ পরিযান রোধ করার মূল চাবিকাঠি। কৃষির মাধ্যমে তৈরি হতে পারে আত্মনির্ভরতা, কর্মসংস্থান এবং পরিবেশের ভারসাম্য।

  • কৃষিতে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সার্থক মেলবন্ধন
  • বিবেকানন্দের কৃষিতে প্রযুক্তির প্রয়োগও কম নয়। তিনি নিচের কয়েকটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করছেন—
  • স্যাটেলাইট-নির্ভর রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি, যাতে ফসলের অবস্থান নজরদারি করা যায়
  • ড্রিপ ইরিগেশন, যা জলের অপচয় কমিয়ে সঠিকভাবে সার ও জল সরবরাহ নিশ্চিত করে
  • পেস্ট অ্যান্ড ডিজিজ ফোরকাস্টিং টুলস, যার মাধ্যমে কম রাসায়নিক ব্যবহার করেও ফসল রক্ষা সম্ভব
  • জৈব সার ব্যবহার ও মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা, দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদনশীলতার জন্য

ভবিষ্যতের রোডম্যাপ
এখানেই থামতে চান না বিবেকানন্দ। আগামী দিনে তাঁর পরিকল্পনা আরও বড়। এর মধ্যে রয়েছে:

  • হাইড্রোপনিক্স প্রযুক্তির প্রয়োগ
  • এক্সোটিক ফসলের পরিসর বৃদ্ধি
  • কোল্ড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি গঠন
  • ফার্মার ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন, যেখানে নবীন চাষিরা হাতে-কলমে শিক্ষা নিতে পারবেন

বিবেকানন্দ মিশ্র প্রমাণ করে দিয়েছেন, ইচ্ছা থাকলে পথ তৈরি হয়। একসময় কর্পোরেট বোর্ডরুমে যাঁর বিচরণ ছিল, আজ তিনি মাটির ঘ্রাণে জীবনের মানে খুঁজে পাচ্ছেন। তাঁর সফলতা শুধু একজন ব্যক্তির গল্প নয়, এটি এক নতুন দৃষ্টান্ত—যেখানে কৃষি মানেই শুধু কাস্তে নয়, বরং কৌশল, প্রযুক্তি আর পরিকল্পনার মেলবন্ধনে এক সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ।