নয়াদিল্লি, ১৭ অক্টোবর ২০২৫: কৃষক অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বৃহস্পতিবার কৃষি ভবনে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে স্পষ্ট বার্তা দিলেন। তিনি বলেন, “যতক্ষণ না অভিযোগকারী কৃষক সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও অভিযোগ বন্ধ বলে ধরা যাবে না।”
এক প্ল্যাটফর্মে সব কৃষি অভিযোগ
বৈঠকে জানানো হয় যে সার, কীটনাশক, বীজ, প্রধানমন্ত্রী ফসলবিমা যোজনা এবং পিএম-কিসান পোর্টাল নিয়ে যে অসংখ্য অভিযোগ আসছে, সেগুলির জন্য এখন থেকে একটি একক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে। এর ফলে কৃষকরা আর আলাদা আলাদা দপ্তরে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হবেন না। অভিযোগের ধরন অনুযায়ী বিভাগীয় কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেবেন।
Also Read | PM কিষাণ ২১তম কিস্তি: কৃষকরা কবে পাবেন পরবর্তী ২,০০০ টাকা? জানুন সবিস্তারে
কৃষি সচিব ড. দেবেশ চতুর্বেদীসহ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা মন্ত্রীকে বিস্তারিত জানান যে—
- সার সরবরাহে ঘাটতি
- নকল বা নিম্নমানের বীজ
- কীটনাশকের গুণমান
- অতিরিক্ত দাম নেওয়া
- ফসলবিমা নিয়ে সমস্যা
—এসব বিষয়ে কৃষকদের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি আসছে।
কীটনাশক নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ
বৈঠকে কর্মকর্তারা জানান, শুধু কীটনাশক সম্পর্কিত অভিযোগই এসেছে ১৫০টির মতো। এর মধ্যে—
- ১২০টি অভিযোগে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
- ১১টি নকল কীটনাশকের মামলায় এফআইআর হয়েছে।
- ৮টি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
- ২৪টি অভিযোগে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
এই তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, কৃষকদের স্বার্থে অভিযোগ নিষ্পত্তি অবশ্যই সময়মতো করতে হবে এবং যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
কৃষকের সন্তুষ্টি বাধ্যতামূলক
শিবরাজ সিং চৌহান জোর দিয়ে বলেন, কোনও অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার পর সরাসরি কৃষকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে জানতে হবে তিনি সন্তুষ্ট কি না। যদি কৃষক অসন্তুষ্ট থাকেন, তবে পুনরায় তদন্ত চালিয়ে অভিযোগ সমাধান করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণের নির্দেশও দেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, অভিযোগ দীর্ঘদিন ঝুলে থাকলে কৃষকের ক্ষতি বাড়ে এবং আস্থা নষ্ট হয়। তাই এ বিষয়ে কঠোরভাবে নজরদারি চালানো হবে।
Also Read |
দুর্বল রাজ্যগুলিকে চিহ্নিতকরণের নির্দেশ
কৃষিমন্ত্রী আরও নির্দেশ দেন, যেসব রাজ্য থেকে বেশি অভিযোগ আসছে এবং যেখানে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি হচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। সেই রাজ্যগুলিকে আগামী বৈঠকে ডেকে তাদের থেকে জবাবদিহি চাওয়া হবে।
অন্যদিকে, অভিযোগ নিষ্পত্তিতে ভালো কাজ করছে এমন রাজ্য বা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্টিফিকেট দিয়ে সম্মানিত করা হবে। মন্ত্রীর মতে, এই উদ্যোগ অন্যদেরও উৎসাহিত করবে।
গুরুতর অভিযোগে সরাসরি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ
মন্ত্রী জানান, কিছু গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে সরাসরি কৃষি মন্ত্রণালয় নিজেই পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি, রাজ্য পর্যায়ের নোডাল অফিসাররা প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ জন কৃষকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাঁদের অভিযোগ সমাধানের অগ্রগতি জানবেন।
কৃষকদের আস্থা ফেরানোই লক্ষ্য
শিবরাজ সিং চৌহান বৈঠকের শেষে বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হলো কৃষকের আস্থা ফিরিয়ে আনা। কৃষক যদি সন্তুষ্ট হন, তাহলে কৃষি ক্ষেত্র আরও শক্তিশালী হবে। অভিযোগ নিষ্পত্তি কেবল কাগজে-কলমে নয়, মাঠপর্যায়েও বাস্তবায়ন হতে হবে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপ দেশের কোটি কোটি কৃষকের কাছে নতুন আশা জাগাবে। অভিযোগ সমাধান হলে কৃষকরা ন্যায্য দাম, মানসম্মত উপকরণ এবং সঠিক বীমা সুবিধা পাবেন, যা কৃষি উৎপাদন ও আয়ে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।