ভারতের কৃষিক্ষেত্রে নতুন আশার সঞ্চার করছে চলতি মরসুমের তুলা উৎপাদন। কটন অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (সিএআই)-এর সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ মরসুমে দেশের মোট তুলা উৎপাদন ৩১২ থেকে ৩৩৫ লাখ বেল-এর মধ্যে পৌঁছতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষকদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এই মরসুমে তুলার ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভালো আবহাওয়া ও বপনের স্থিতিশীলতা
রিপোর্টে জানানো হয়েছে, চলতি বছর প্রায় ১১১ লাখ হেক্টর জমিতে তুলার চাষ হয়েছে, যা গত বছরের ১১২.৯৭ লাখ হেক্টরের কাছাকাছি। বপনের পর থেকে আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূল ছিল। যদিও কিছু অঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তবুও সার্বিকভাবে কৃষকরা ভালো ফসল পাচ্ছেন। বিশেষত গুজরাট ও পাঞ্জাবের মতো রাজ্যে ফলনের প্রবণতা ইতিবাচক।
Also Read | ভারতীয় গবেষণায় বাজারে আসছে রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা সম্পন্ন টমেটো
উৎপাদনশীল রাজ্যগুলির চিত্র
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তুলা উৎপাদনের চিত্র একরকম নয়। সিএআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী—
- মহারাষ্ট্র সর্বাধিক উৎপাদনকারী রাজ্য, যেখানে ৮৯.০৯ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যে চাষের পরিমাণ বেশি হলেও হেক্টর প্রতি উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম, প্রায় ৩৭০.৬৬ কেজি।
- গুজরাটের উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। এখানে ২৩.৯২ লাখ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে এবং হেক্টর প্রতি উৎপাদন প্রায় ৫০৭.০২ কেজি। ফলে রাজ্যটির উৎপাদন দাঁড়াবে প্রায় ৭১.৩৪ লাখ বেল।
- তেলেঙ্গানাও দ্রুত উঠে আসছে বড় উৎপাদনকারী রাজ্য হিসেবে। এখানে হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৪৬৮.০৪ কেজি, যার ফলে প্রায় ৪৯.৮৬ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
- রাজস্থানে হেক্টর প্রতি ৫০০.২৪ কেজি ফলনের ভিত্তিতে প্রায় ১৮.৪৫ লাখ বেল উৎপাদন হতে পারে।
- মধ্যপ্রদেশ প্রায় ১৫.৩৫ লাখ বেল উৎপাদনের আশা করছে।
উচ্চ প্রাথমিক স্টক
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ মরসুমে তুলার প্রাথমিক স্টক থাকবে প্রায় ৬০.৫৯ লাখ বেল, যা গত বছরের ৩৯.১৯ লাখ বেলের তুলনায় অনেক বেশি। এই বৃদ্ধির কারণ হলো ভালো উৎপাদনের পাশাপাশি বাড়তি আমদানি।
Also Read | কৃষকদের সমৃদ্ধির পথে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, বললেন উত্তরাখণ্ডের সিএম
বাজার পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ
তুলার নতুন ফসল ইতিমধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করেছে। প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ বেল তুলা বাজারে আসছে। তবে বড় সমস্যা হলো দাম। বর্তমানে বাজারদর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP)-এর নিচে নেমে গেছে। এর ফলে কৃষকদের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও বাজারে তুলার চাহিদা কিছুটা দুর্বল, যা দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ
তুলা উৎপাদনে বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হলো—
- অনুকূল আবহাওয়া
- কৃষকদের উন্নত বীজ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার
- বপন এলাকার স্থিতিশীলতা
- সরকারের সহায়ক নীতি
- আগামী সময়ের দিকনির্দেশ
অক্টোবরের শেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দেশের ১০টি প্রধান রাজ্যের তুলা উৎপাদনের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে। সেই তথ্য বাজারের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মরসুমে বিশেষ করে গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের উৎপাদন বৃদ্ধিই জাতীয় স্তরে তুলার চিত্রকে শক্তিশালী করবে।
২০২৫-২৬ মরসুমে তুলা উৎপাদন নিয়ে সিএআই-এর এই ইতিবাচক রিপোর্ট কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তবে দাম এমএসপি-র নিচে থাকায় কৃষকদের উদ্বেগও কম নয়। উৎপাদন বাড়লেও যদি বাজারে সঠিক দাম না মেলে, তাহলে এই সাফল্য অনেকাংশে বৃথা হতে পারে। তাই কৃষক ও বাজারের স্বার্থে উপযুক্ত নীতি গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।