জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা: খরা, বন্যা ও ফসলহানিতে দিশেহারা ভারতীয় কৃষক

Climate change is severely impacting Indian farmers with recurring droughts, floods, and crop losses. Learn how extreme weather is affecting agriculture, income, and food security in India.

গোটা পৃথিবীর মতোই ভারতও আজ জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate change) কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। সবচেয়ে বেশি এর প্রভাব পড়ছে দেশের কৃষিক্ষেত্রে। কারণ ভারতের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনো জীবিকা নির্বাহ করে কৃষির উপর নির্ভর করে। খরা, অকাল বৃষ্টি, বন্যা কিংবা অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ—সব মিলিয়ে কৃষকদের জীবন ও জীবিকা ক্রমশই ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

Advertisements

খরা: জলের অভাবে মরে যাচ্ছে ফসল

ভারতের কৃষি মূলত মৌসুমি বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্ষার ধারা বদলে গেছে। কোথাও স্বাভাবিক সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে না, আবার কোথাও একসঙ্গে অতিরিক্ত বৃষ্টি নেমে আসছে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যগুলোতে গত কয়েক বছরে খরার প্রকোপ বেড়েছে। চাষযোগ্য জমি ফেটে যাচ্ছে, ভূগর্ভস্থ জলস্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। চাষীরা চারা লাগালেও জল না পেয়ে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

   

এক কৃষকের কথায়, “আগে বর্ষা আসার সময়টা বোঝা যেত। এখন আর সেই ধারাবাহিকতা নেই। সময়মতো বৃষ্টি না হলে আমাদের ঋণ শোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।”

বন্যা: এক নিমিষে সব শেষ

অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ, অসম, বিহার এবং ওড়িশার মতো রাজ্যে প্রায় প্রতি বছরই বন্যার ভয়াবহতা বাড়ছে। চাষীদের মাসের পর মাসের পরিশ্রম, জমির পাকা ফসল এক ঝটকায় জলের তলায় চলে যাচ্ছে। ফসলের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাড়িঘর, গবাদি পশু এবং কৃষি সরঞ্জাম। পুনর্বাসনের লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পুনরায় চাষ শুরু করার অসীম কষ্ট।

অসমের এক চাষি জানান, “আমরা ধান কেটে ঘরে তোলার আগেই নদীর জল এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। শুধু ফসল নয়, আমাদের বাঁচার ভরসাও চলে যায়।”

তাপপ্রবাহ ও অকাল বৃষ্টি: অদৃশ্য বিপদ

শুধু খরা বা বন্যা নয়, তাপমাত্রার আকস্মিক বৃদ্ধি ও অকাল বৃষ্টিও কৃষকদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তীব্র তাপে ধান বা গমের শিষ শুকিয়ে যায়। আবার অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে ফসলের রোগবালাই বেড়ে যায়। তুলা, পেঁয়াজ, টমেটো, ডাল—এসব ফসল অকাল বৃষ্টিতে মাঠেই নষ্ট হয়। ফলে কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

Advertisements
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধু ফসলের ক্ষতিই নয়, কৃষকদের মানসিক চাপও বেড়েছে। ঋণগ্রস্ততা, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং বাজারে ফসলের দাম না মেলা মিলিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারতের কৃষকদের আয় আগামী কয়েক দশকে ২৫–৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার উপর।

সমাধান ও পথ খোঁজা

সরকার ও গবেষণা সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই জলবায়ু সহনশীল কৃষি পদ্ধতির উপর জোর দিচ্ছে। খরা-সহিষ্ণু বীজ, জলসংরক্ষণ ব্যবস্থা, ড্রিপ সেচ, জৈব কৃষি, মালচিং প্রভৃতি পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা কিছুটা হলেও ক্ষতি কমাতে পারছেন। পাশাপাশি বীমা প্রকল্প ও কৃষি ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে আর্থিক সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

তবে বাস্তবতা হলো—এই সমস্যা শুধু স্থানীয় সমাধানে মিটবে না। বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে আন্তর্জাতিক স্তরে বড় পদক্ষেপ প্রয়োজন। কৃষকদের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা, প্রশিক্ষণ ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার।

ভারতের কৃষকরা আজ এক অভূতপূর্ব সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে। তাঁদের ঘাম, পরিশ্রম আর মাটির সঙ্গে লড়াই এখন প্রাকৃতিক অনিশ্চয়তার কবলে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এই লড়াই শুধু কৃষকদের নয়, সমগ্র দেশের ভবিষ্যতের লড়াই। কারণ কৃষক বাঁচলেই ভারত বাঁচবে, আর কৃষি টিকলেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।