জলবায়ু পরিবর্তনে কমেছে ধান-গম উৎপাদন! খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় দেশ

climate-change-impact-on-crops-india-2025

নয়াদিল্লি: জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কেবল ভবিষ্যতের আশঙ্কা নয় — তা আজকের বাস্তবতা। ভারতীয় কৃষিক্ষেত্র এই পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব অনুভব করছে। দেশের প্রধান দুটি খাদ্যশস্য — ধান ও গমের উৎপাদন ক্রমেই কমছে বলে জানিয়েছে সাম্প্রতিক এক যৌথ রিপোর্ট, যা প্রকাশ করেছে আইএমডি (IMD), আইসিএআর (ICAR) এবং এফএও (FAO)।

Advertisements

রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত দুই দশকে ভারতের গড় তাপমাত্রা প্রায় ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, যা ফসল উৎপাদনে বড় প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে, উত্তর ভারতের গম চাষ এবং পূর্ব ভারতের ধান চাষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ফসলের বৃদ্ধির সময়কাল কমে যাচ্ছে, ফলে শস্যের দানার পরিপূর্ণতা ঘটছে না — এতে ফলন কমে যাচ্ছে প্রায় ৮-১০ শতাংশ পর্যন্ত।

সুপার কাপে নেই রিয়াল কাশ্মীর, দুই প্রধানের সাথে খেলবে কারা?

আইসিএআর-এর কৃষি বিজ্ঞানী ড. সুমন রায় জানান, “আমরা লক্ষ করছি যে, মার্চ-এপ্রিলে গড় তাপমাত্রা বাড়ার কারণে গমের ফুল ফোটার সময়কাল দ্রুত শেষ হচ্ছে। এর ফলে দানা ছোট হচ্ছে এবং মোট ফলন কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ধান চাষে অনিয়মিত বর্ষণ এবং অতিবৃষ্টিতে জমি জলমগ্ন থাকায় রোগবালাই বাড়ছে।”

এই পরিস্থিতিতে অ্যাডাপটিভ ফার্মিং স্ট্রাটেজি-এর দিকে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। জলবায়ু সহনশীল নতুন জাতের ধান ও গম তৈরি করছে আইসিএআর। ইতিমধ্যেই “Pusa Basmati Climate-Resilient Variety” এবং “HD 3226 Wheat Variety” কয়েকটি রাজ্যে সফলভাবে পরীক্ষিত হয়েছে। এই জাতগুলো উষ্ণতা ও খরার পরিস্থিতিতেও ভালো ফলন দিতে সক্ষম।

Advertisements

এছাড়াও, কৃষি বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিচ্ছেন ড্রিপ ইরিগেশন, মালচিং এবং বহুমুখী ফসল চক্র (Crop Diversification) ব্যবহারের। এই কৌশলগুলো শুধু ফলন রক্ষা করে না, বরং মাটির আর্দ্রতা ও পুষ্টিও বজায় রাখে। FAO-এর এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার এভাবেই চলতে থাকে, তবে ভারতের ধান উৎপাদন কমবে প্রায় ১২ শতাংশ এবং গম উৎপাদন ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের আয়ে।

বিহারের কৃষক মুকেশ যাদব বলেন, “আগে যেখানে ২০ কুইন্টাল গম তুলতাম, এখন ১৬-১৭ কুইন্টালেই সীমাবদ্ধ। গরম বেড়ে যাওয়ায় গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে, আর জলের অভাবে চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।” কেন্দ্রীয় কৃষি দফতর জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (KVK)-এ ক্লাইমেট স্মার্ট ফার্মিং মডেল চালু করা হচ্ছে, যাতে কৃষকরা বাস্তব মাঠ পর্যায়ে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন। সরকার চাইছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৫০% কৃষক জলবায়ু সহনশীল কৃষি পদ্ধতিতে যুক্ত হন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই যদি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে ভারতের কৃষি অর্থনীতি বড়সড় বিপদের মুখে পড়বে। তবে আশার কথা হলো — দেশের গবেষণা সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে নতুন প্রযুক্তি, বীজ ও কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিজ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতার মিলেই কৃষকরা আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।