জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষকের ফসলহানি, খরা ও তাপপ্রবাহে সংকট গভীর

climate-change-impact-crop-loss-heatwave-drought-crisis-india-agriculture

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আর বইয়ের তত্ত্ব নয়, বরং বাস্তবের কঠিন সত্য। দেশের বহু কৃষক আজ প্রকৃতির এই অস্থিরতার সামনে অসহায়। কখনও প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, কখনও দীর্ঘ খরার দাপট, কখনও আবার অকালবৃষ্টি—সব মিলিয়ে কৃষিজগতের ওপর নেমে এসেছে ভয়াবহ সংকট। একে একে নষ্ট হচ্ছে ফসল, শুকিয়ে যাচ্ছে মাঠ, কমে যাচ্ছে উৎপাদন। এ যেন কৃষকের মেহনতকে ছিঁড়ে ফেলার এক অসম লড়াই।

Advertisements

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর দেশের বহু অঞ্চলে বৃষ্টি ৩০-৪০ শতাংশ কম হয়েছে। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চলছে তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পশ্চিম ও মধ্য ভারতে খরার পরিস্থিতি। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকের মুখ শুকনো হয়ে যাচ্ছে। ধান, গম, আলু, ডাল—সব ফসলেই দেখা দিচ্ছে ক্ষতির ছাপ।

   

ধানচাষিদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে। সময়মতো বর্ষা না আসায় রোপণের কাজ পিছিয়ে গেছে। অনেকে ঋণ নিয়ে বীজ ও সার কিনেছেন, কিন্তু মাটি শুকিয়ে থাকায় বপন করা সম্ভব হয়নি। যাঁরা বপন করেছেন, তাঁরাও এখন দেখছেন—ফসল বেড়ে ওঠার বদলে শুকিয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমে যাওয়ায় পাম্প চালিয়ে সেচ দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।

Climate change is severely impacting Indian farmers with recurring droughts, floods, and crop losses. Learn how extreme weather is affecting agriculture, income, and food security in India.

গমচাষিদের অবস্থা আরও সংকটজনক। অতিরিক্ত গরমে গমের দানা ঠিক মতো তৈরি হচ্ছে না। প্রোটিনের পরিমাণও কমে যাচ্ছে বলে দাবি কৃষি-বিজ্ঞানীদের। এতে উৎপাদন কমে গিয়ে সরাসরি আঘাত লাগছে কৃষকের আয়ে।

সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন তাঁরা, যারা শ্রমিক ধরে কৃষিকাজ করান। কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক এখন কর্মহীনতার মুখে। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জীবনে এই সংকট যেন আরও বড় ধাক্কা।

একই সঙ্গে বাড়ছে কৃষকদের ঋণের বোঝা। ব্যাংক ঋণ, সমবায় ঋণ, মহাজনি ঋণ—সব মিলিয়ে তাঁদের মাথার ওপর যেন চাপা পাহাড়। ফসল নষ্ট হলে আয় নেই, আর আয় না থাকলে ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়। অনেক কৃষক বলেছেন, “প্রকৃতি এবার আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।”

Advertisements

হতাশার মধ্যে আশা খুঁজছেন অনেকে। বৈজ্ঞানিক কৃষিকাজ, জল সংরক্ষণ, টেকসই চাষ এবং বিকল্প ফসল—এগুলোই হতে পারে আগামী দিনের সমাধান। অনেক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিচ্ছেন—কম জলসেচে যা ফলানো সম্ভব, সেই ধরনের ফসল বেছে নেওয়ার। একই সঙ্গে ড্রিপ সেচের ব্যবহার বাড়াতে বলা হচ্ছে।

সরকারি মহলও পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বিভিন্ন রাজ্য ইতিমধ্যেই কৃষকদের জন্য সহায়তা প্রকল্প ঘোষণা করেছে। খরার ক্ষতিপূরণ, বীজ বিতরণ, সেচ প্রকল্প এবং কৃষি বিমা—সবই কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা। কিন্তু গ্রামের কৃষকের কথা—“সরকারি সাহায্য থাকলেও প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইটা খুব কঠিন।”

জলবায়ু পরিবর্তন যে আগামী দিনে আরও ভয়াবহ রূপ নেবে, তা নিয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই। তাই এখনই শুরু করতে হবে নতুন পরিকল্পনা। পানি ধরে রাখার প্রকল্প, বৃষ্টির জল সংগ্রহ, জলাশয় পুনর্গঠন, কৃষিজমিতে জৈবচাষ এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ব্যবহার—এসবই হতে পারে ভবিষ্যতের রক্ষাকবচ।

কৃষকের আশা একটাই—আবার যেন মাঠে সবুজ ফিরে আসে। আকাশে যথাসময়ে বৃষ্টি নামে, রোদ থাকে সীমিত, আর প্রকৃতি তার সৌন্দর্য নিয়ে আবার কৃষকের পাশে দাঁড়ায়।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করা যায়, তবে ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। কিন্তু সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। কৃষকের মনের ব্যথা একটাই—“ফসলের মাঠে আর যেন হার ধরা না পড়ে।”