জৈব সারের জন্য সরকারি ভর্তুকি, মজবুত কৃষির নয়া দিগন্ত

Fertilizer Shortage? Discover How to Make Organic Fertilizers at Home for Sustainable Farming

ভারতের কৃষি খাতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ২০২৫ সালে জৈব সারের উপর বিশেষ ভর্তুকির (Organic Fertilizer Subsidy) ঘোষণা দিয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষকরা রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরতা কমিয়ে পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতিতে যেতে পারবেন। বাজেট ২০২৫-২৬-এ সার ভর্তুকির জন্য মোট ১.৮৪ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যার মধ্যে জৈব সার প্রচারের জন্য মার্কেট ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স (এমডিএ) স্কিমের বাজেট ১৫০ কোটি টাকায় বাড়ানো হয়েছে। এটি ফার্মেন্টেড অর্গানিক ম্যানিউর (এফওএম), লিকুইড ফার্মেন্টেড অর্গানিক ম্যানিউর (এলএফওএম) এবং ফসফেট রিচ অর্গানিক ম্যানিউর (প্রম)-এর উপর প্রতি মেট্রিক টন ১,৫০০ টাকা ভর্তুকি প্রদান করে। এই স্কিমটি কৃষকদের খরচ কমিয়ে মাটির উর্বরতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

Advertisements

Also Read | কৃষক সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগ বন্ধ করা যাবে না: কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং

   

জৈব সারের ভর্তুকি স্কিমটি ২০২৫ সালে আরও বিস্তৃত হয়েছে, যা জাতীয় প্রজেক্ট অন অর্গানিক ফার্মিং (এনপিওএফ)-এর অধীনে চালু। এর অধীনে বায়ো-ফার্টিলাইজার, বায়ো-পেস্টিসাইড এবং ফল-সবজি কম্পোস্ট ইউনিট তৈরির জন্য ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট সাবসিডি প্রদান করা হচ্ছে। ন্যাশনাল সেন্টার অফ অর্গানিক ফার্মিং (এনসিওএফ) এবং ন্যাবার্ড-এর সহযোগিতায় এই স্কিম চালানো হয়, যেখানে কমার্শিয়াল প্রোডাকশন ইউনিটের জন্য ৫০-৭৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ছোট বায়ো-ফার্টিলাইজার ইউনিট স্থাপনের জন্য ১০ লক্ষ টাকার প্রজেক্টে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সাবসিডি পাওয়া যায়। এটি কৃষকদের নিজস্ব জৈব সার উৎপাদন করতে সক্ষম করে এবং বাজারে সরবরাহ বাড়ায়। ২০২৫ সালের লক্ষ্য ১৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে জৈব কৃষি ছড়িয়ে দেওয়া, যা দেশের মোট কৃষিজমির ৭-৮ শতাংশ।

Also Read | নতুন এমএসএমই ঋণ স্কিম: উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ ক্রেডিটের সুযোগ

প্রধান মন্ত্রী কৃষি সেচ যোজনা (পিএমকেএসওয়াই) এবং প্যাকেজ অফ প্র্যাকটিসেস ফর ইন্টিগ্রেটেড নিউট্রিয়েন্ট ম্যানেজমেন্ট (পিপিআইএনএম)-এর অধীনে জৈব ইনপুটের জন্য ১৫,০০০ টাকা প্রতি হেক্টর (৩ বছরের জন্য) ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। এতে বায়ো-ফার্টিলাইজার এবং জৈব ম্যানিউর অন্তর্ভুক্ত। গোবর্ধন স্কিমের মাধ্যমে গো-খাদ থেকে জৈব সার উৎপাদনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যেখানে প্রতি মেট্রিক টন ১,৫০০ টাকা এমডিএ ভর্তুকি প্রদান করা হয়। এই স্কিমটি সাসটেইনেবল অলটারনেটিভ টুকার্ডস অ্যাফোর্ডেবল ট্রান্সপোর্টেশন (সাটাট) এবং ওয়েস্ট-টু-এনার্জি প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত, যা বায়োগ্যাস উৎপাদনকে প্রচার করে। ফলে, গ্রামীণ এলাকায় কৃষকরা বর্জ্য থেকে সার তৈরি করে অতিরিক্ত আয় করতে পারেন। ২০২৩-২৬ সালের জন্য এই স্কিমে ১,৪৫১.৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যার মধ্যে গবেষণার জন্য ৩৬০ কোটি টাকা আলাদা।

Also Read | অতিরিক্ত বর্ষায় ভোগান্তি বাড়লেও কৃষি খাতে রেকর্ড উৎপাদন দেশে

Advertisements

প্রধানমন্ত্রী জৈব ইনপুটস অন অয়ার ফার্মস (পিএমজিআইএওএফ) স্কিমটি জৈব কৃষির একটি মাইলফলক। এর অধীনে কৃষকরা নিজেদের খামারে জৈব সার, বায়ো-ডাইভার্সিটি-বেসড ক্রপিং সিস্টেম এবং বায়ো-পেস্টিসাইড তৈরি করতে পারেন। ২০২৫ সালে এই স্কিমে ৫ লক্ষ নতুন কৃষককে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। সার্টিফিকেশন খরচের ৭৫ শতাংশ ভর্তুকি এবং ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে, যা কৃষকদের জৈব উৎপাদনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, উত্তর প্রদেশের একজন কৃষক এই স্কিমের মাধ্যমে তার ১০ হেক্টর জমিতে জৈব ধান চাষ করে ২০ শতাংশ বেশি লাভ করেছেন। এছাড়া, মিশন অর্গানিক ভ্যালু চেইন ডেভেলপমেন্ট ফর নর্দার্ন ইস্টার্ন রিজিয়ন (মোভসিডনইএর)-এর অধীনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে ১৫,০০০ টাকা প্রতি হেক্টর ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, যা জৈব ইনপুটস এবং ম্যানিউরের উপর ফোকাস করে।

Also Read | কৃষি-প্রযুক্তি স্টার্টআপ! কৃষকদের জন্য এআই এবং ড্রোন প্রযুক্তির বিপ্লব

জাতীয় মিশন অন সাসটেইনেবল অ্যাগ্রিকালচার (এনএমএসএ)-এর অধীনে জৈব সারের প্রচারের জন্য বিশেষ প্যাকেজ চালু করা হয়েছে। এতে পরম্পরাগত কৃষি পদ্ধতির সংরক্ষণ এবং জৈব চাষের প্রসার ঘটানো হচ্ছে। সোল হেলথ কার্ড স্কিমের সাথে যুক্ত করে কৃষকদের মাটির পুষ্টি অবস্থা অনুযায়ী জৈব সারের ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। ২০২৫ সালে আইসিএআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ) নতুন স্ট্রেনের বায়ো-ফার্টিলাইজার ডেভেলপ করেছে, যা বিভিন্ন ফসল এবং মাটির ধরনের জন্য উপযোগী। এই স্ট্রেনগুলির উৎপাদন ইউনিটে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, যা ফসলের উৎপাদনশীলতা ১৫-২০ শতাংশ বাড়ায়।

এই ভর্তুকিগুলির যোগ্যতা সাধারণত ভারতীয় নাগরিকত্ব, সক্রিয় কৃষি কার্যকলাপ এবং উদ্যম রেজিস্ট্রেশনের উপর নির্ভর করে। আবেদন অনলাইনে ইন্টিগ্রেটেড ফার্টিলাইজার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পোর্টালের মাধ্যমে করা যায়, যেখানে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়াই ৮৫ শতাংশ ‘অন অ্যাকাউন্ট’ পেমেন্ট পাওয়া যায়। ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (ডিবিটি) সিস্টেম চালু করে ভর্তুকি সরাসরি কৃষকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়, যা দুর্নীতি কমায়। কিছু রাজ্যে, যেমন কেরালা এবং সিকিম, জৈব কৃষির জন্য অতিরিক্ত রাজ্যভিত্তিক ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, যা কেন্দ্রীয় স্কিমের সাথে যুক্ত।

এই উদ্যোগগুলি শুধু পরিবেশ রক্ষা নয়, বরং কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতাও নিশ্চিত করবে। জৈব সারের ব্যবহার মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করে, জল ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদী ফসলের গুণমান বৃদ্ধি করে। ২০২৫ সালে এই স্কিমগুলি ৫ লক্ষ নতুন কৃষককে অন্তর্ভুক্ত করে দেশের জৈব কৃষি কভারেজ দ্বিগুণ করার লক্ষ্য রাখে। কৃষকরা নিকটস্থ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (কেভিসি) বা উদ্যম পোর্টালে যোগাযোগ করে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। এটি ভারতকে একটি সাসটেইনেবল অ্যাগ্রিকালচারাল পাওয়ারহাউস হিসেবে গড়ে তুলবে এবং খাদ্য রপ্তানির নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। (শব্দ সংখ্যা: ৭৮৫)