ভারতের ইন্স্যুরেন্স বিপ্লবে নতুন অধ্যায়, অ্যাফিনিটি ইন্স্যুরেন্সে নতুন ভরসা

বর্তমান সময়ে যখন প্রযুক্তি দ্রুতগতিতে আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিটি অংশে প্রভাব ফেলছে, ঠিক তখনই বীমা খাতেও আসছে নতুন রূপান্তর। তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হল অ্যাফিনিটি ইন্স্যুরেন্স…

Affinity Insurance india

বর্তমান সময়ে যখন প্রযুক্তি দ্রুতগতিতে আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিটি অংশে প্রভাব ফেলছে, ঠিক তখনই বীমা খাতেও আসছে নতুন রূপান্তর। তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হল অ্যাফিনিটি ইন্স্যুরেন্স (Affinity Insurance)—একটি এমন ইন্স্যুরেন্স মডেল যা নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা গ্রাহকগোষ্ঠীর প্রয়োজন ও আগ্রহকে লক্ষ্য করে তৈরি। এটি সাধারণত এমন প্রতিষ্ঠান বা প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়, যেগুলো সরাসরি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নয়—যেমন পেশাদার সংগঠন, খুচরো বিক্রেতা, ই-কমার্স সাইট, কিংবা ফিনটেক অ্যাপ।

ভারতের ডিজিটাল বিপ্লব এবং প্রায় ৮০০ মিলিয়ন সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সঙ্গে, ইন্স্যুরেন্স এখন শুধুমাত্র একটি আর্থিক সুরক্ষা নয়, বরং একটি স্বয়ংক্রিয়, সময়োপযোগী এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবায় রূপান্তরিত হচ্ছে।

   

অ্যাফিনিটি ইন্স্যুরেন্স কীভাবে কাজ করে?
অ্যাফিনিটি ইন্স্যুরেন্স মূলত এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বীমা পণ্য কোনও পণ্যের সঙ্গে একত্রিত করে বিক্রি করা হয়, যেমন—মোবাইল কেনার সময় ডিভাইস প্রোটেকশন, বা অনলাইন রাইড নেওয়ার সময় দুর্ঘটনা বীমা। এটি সাধারণত গ্রাহকের কেনাকাটার সময়েই প্রস্তাব করা হয়, ফলে আলাদা করে বীমা কেনার ঝামেলা থাকে না।

এই মডেলটি পেশাদার সংগঠনগুলির মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের জন্য ডিসকাউন্টেড প্রফেশনাল লাইয়াবিলিটি কভারেজ দেওয়া হতে পারে। এভাবে অ্যাফিনিটি ইন্স্যুরেন্স আজ বীমা কোম্পানি, ব্রোকার এবং বিতরণকারী সবার জন্য এক শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

ব্রোকারদের ভূমিকা এবং প্রযুক্তির গুরুত্ব
বিমার এই দ্রুত পরিবর্তনশীল জগতে ব্রোকারদের ভূমিকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আধুনিক রিস্ক যেমন ক্লাইমেট রিস্ক, সাইবার থ্রেট, বা পারামেট্রিক ইন্স্যুরেন্স মডেল বোঝার জন্য ব্রোকারদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান দরকার হয়। তারাই গ্রাহক ও ইন্স্যুরারের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করেন এবং জটিল কভারেজ শর্তগুলোকে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করেন।

প্রযুক্তি যেমন AI, মেশিন লার্নিং এবং ইনস্ট্যান্ট KYC এর মাধ্যমে পুরো ইন্স্যুরেন্স কেনার ও ক্লেইম করার প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ, স্বচ্ছ এবং দ্রুত করে তুলছে। একদিকে ব্রোকাররা বিশ্লেষণ করে গ্রাহকের আচরণ ও প্রয়োজন, অন্যদিকে প্রযুক্তির সাহায্যে সেই অনুযায়ী কাস্টমাইজড কভারেজ অফার করা সম্ভব হচ্ছে। এটি শুধু গ্রাহকের আস্থা বাড়ায় না, একই সঙ্গে ইন্স্যুরেন্স প্রবেশযোগ্যতাও বাড়ায়।

Advertisements

ডিজিটাল ইকোসিস্টেমে অ্যাফিনিটি ইন্স্যুরেন্সের বৃদ্ধি
আজকের দিনে অনলাইন শপিং, ডিজিটাল ওয়ালেট, রাইড হেইলিং অ্যাপস, ফিনটেক অ্যাপ—সব ক্ষেত্রেই ইন্স্যুরেন্স সংযোজন সম্ভব হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্যামেরা কেনেন, সঙ্গে সঙ্গে তিনি পেতে পারেন একটি সাশ্রয়ী গ্যাজেট প্রোটেকশন পলিসি। এতে করে বিমার প্রাসঙ্গিকতা বাড়ে এবং গ্রাহক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বিমাকে একটি ‘ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস’ হিসেবে গ্রহণ করেন।

তরুণ প্রজন্ম ও মাইক্রো-ইন্স্যুরেন্সের চাহিদা
ভারতের ৯০০ মিলিয়ন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বড় অংশ জেনারেশন Z এবং মিলেনিয়ালস। তারা চায় ইভেন্ট-ভিত্তিক, দ্রুত কাস্টমাইজড ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিমা। যেমন: কনসার্ট টিকিট কেনার সময় ইনস্যুরেন্স, বাইক চালানোর সময় অ্যাক্সিডেন্ট কভারেজ, বা মোবাইল ফোনের জন্য ডিভাইস প্রোটেকশন। এই ধরণের মাইক্রো-ইন্স্যুরেন্স পলিসি তাদের চাহিদার সঙ্গে খাপ খায় এবং ইন্স্যুরেন্সকে একটি দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা বানিয়ে তোলে।

ভবিষ্যতের রূপরেখা
আগামী দিনে অ্যাফিনিটি ইন্স্যুরেন্স শুধুমাত্র একমাত্রিক কভারেজ থাকবে না, বরং এটি আরও নিখুঁত, প্রযুক্তিনির্ভর এবং গ্রাহককেন্দ্রিক হবে। ব্রোকারদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ডেটা অ্যানালিটিক্স ও কনসালটিং দক্ষতার উপর ভিত্তি করে ইন্স্যুরেন্স প্রক্রিয়াগুলি যেমন আন্ডাররাইটিং, ক্লেইম প্রসেসিং, ফ্রড ডিটেকশন আরও উন্নত হবে।

ই-কমার্স, ইনস্যুরটেক ও ব্রোকিং সংস্থাগুলোর মধ্যে পার্টনারশিপের ফলে এমন বহু গোষ্ঠীর কাছে বিমা পৌঁছে যাবে, যারা এতদিন বিমা সেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এটি ভারতকে আরও ইনস্যুরড দেশ করে তুলবে।

ডিজিটাল বিপ্লব এবং অ্যাফিনিটি ইন্স্যুরেন্সের যুগলবন্দি বীমা খাতের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ। এর মাধ্যমে বিমাকে আরও সহজ, ত্বরিত ও সময়োপযোগী করে তোলা সম্ভব। এটি শুধু গ্রাহকের সুরক্ষা নিশ্চিত করে না, বরং পুরো ইকোসিস্টেমের জন্যও একটি লাভজনক ব্যবস্থা তৈরি করে।
আসন্ন বছরগুলিতে, অ্যাফিনিটি ইন্স্যুরেন্সের হাত ধরেই বীমা পৌঁছাবে কোটি কোটি মানুষের কাছে—ঠিক সময়ে, ঠিক কভারেজ নিয়ে, একদম মসৃণভাবে।