কলকাতার গঙ্গার পাড়ে অবস্থিত কুমারটুলি ঘাট (Kumartuli Ghat) শহরের সাংস্কৃতিক ও শিল্পচর্চার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। দুর্গা প্রতিমা তৈরির জন্য বিশ্ববিখ্যাত এই শিল্পীদের বসতি এবং ঘাট দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা, নদীভাঙন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে জর্জরিত। এবার এই ঐতিহাসিক কুমারটুলি ঘাটের পুনর্নবীকরণ ও সৌন্দর্যায়নের দায়িত্ব নিতে এগিয়ে এল আদানি গোষ্ঠী।
বন্দরের সঙ্গে চুক্তি
শুক্রবার কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট কর্তৃপক্ষ (SMPK) এবং আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড (APSEZ)-এর মধ্যে একটি স্মারক চুক্তি (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে কুমারটুলি ঘাটের পুনর্গঠন, সংরক্ষণ এবং নান্দনিক উন্নয়নের কাজ হাতে নেবে আদানি গোষ্ঠী। পুরো প্রকল্পটি বন্দরের ‘স্বচ্ছতা উদ্যোগ’-এর আওতায় পড়ছে।
চুক্তি অনুযায়ী, পুরো উন্নয়ন কার্যক্রম হবে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের আওতাধীন অঞ্চলের মধ্যেই এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে এই ঘাটকে নতুন করে সাজানো হবে।
SMPK ও আদানি গোষ্ঠীর মন্তব্য
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্টের চেয়ারম্যান রথীন্দ্র রমন বলেন, “এটি শুধুমাত্র একটি সংস্কার প্রকল্প নয়, এটি বাংলার শিল্পঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ। কুমারটুলির মতো জায়গা যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মাটি দিয়ে দেবদেবীর রূপ গড়া হয়, সেই ঐতিহ্যকে রক্ষা করাই আমাদের দায়িত্ব।”
অন্যদিকে, আদানি গোষ্ঠীর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্রেসিডেন্ট সুব্রত ত্রিপাঠী জানান, “এই জায়গাটি কেবলমাত্র একটি ঘাট নয়, এটি কলকাতার আবেগের অংশ। এখানকার সংস্কার কাজ সম্পূর্ণ হলে এটি শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল হয়ে উঠবে।”
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই প্রকল্পটির জন্য অভিজ্ঞ ডিজাইন আর্কিটেক্টদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তাঁরা বর্তমানে নকশা তৈরির কাজ করছেন।
দীর্ঘদিনের অবহেলা
সূত্রের খবর অনুযায়ী, বহু বছর ধরেই কুমারটুলি ঘাট অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। নদীর পাড় ভাঙছে, আবর্জনার স্তূপ জমছে, শিল্পীদের কাজের পরিবেশও দিন দিন খারাপ হয়েছে। পর্যটক এবং সাধারণ মানুষজনের জন্য নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামোর অভাব দেখা দিয়েছে।
এই চুক্তি নতুন করে আশা জাগাচ্ছে শিল্পীদের মধ্যে। তাঁরা মনে করছেন, পুনরায় ঘাটটি উন্নয়নের আলো দেখতে পাবে এবং শহরের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বিশ্বের সামনে আরও সুন্দরভাবে তুলে ধরা সম্ভব হবে।
ভবিষ্যতের দিশা
এই প্রকল্পের ফলে কুমারটুলি ঘাট হবে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। স্থানীয় শিল্পী, পর্যটক এবং সাধারণ মানুষ সকলেই এর সুফল পাবেন। পরিবেশবান্ধব এবং ঐতিহ্যসম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে ঘাটটি শুধু পুনর্গঠিত হবে না, বরং একটি নতুন সাংস্কৃতিক পর্যটনস্থল হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করবে।
কলকাতার প্রাণপ্রবাহ গঙ্গা আর তার পাড়ের শিল্প ও সংস্কৃতি এখন এক নতুন মোড় নিচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের এই সাহসী সিদ্ধান্ত এবং কর্পোরেট সংস্থার অংশগ্রহণ আগামী দিনে কুমারটুলিকে ফিরিয়ে দেবে তার হারানো গৌরব। শুধু শিল্প বা সংস্কৃতি নয়, এই প্রকল্প শহরের আত্মাকে সংরক্ষণের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।