তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক দিল্লি আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ডিজিটাল সংবাদ প্রকাশকদের আদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রকাশিত তথাকথিত মানহানিকর কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ দিয়েছে। মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর জারি হওয়া নোটিসে বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কার্যকর করা হয়নি। ফলে এখন ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে কনটেন্ট মুছে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকাশকদের বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মামলার পটভূমি:
এই মামলার সূত্রপাত সাংবাদিক পরাঞ্জয় গুহঠাকুরতার একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে। ২০১৭ সালে ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিকাল উইকলি এবং পরবর্তীতে দ্য ওয়্যার-এ প্রকাশিত তাঁর রিপোর্টে দাবি করা হয়, কেন্দ্র সরকারের কিছু নীতি পরিবর্তন ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ)-এর নিয়ম শিথিলের ফলে আদানি গ্রুপ বিপুল আর্থিক সুবিধা পেয়েছে এবং কর ফাঁকি দিয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানি গ্রুপ প্রথমে ইপিডব্লিউ এবং পরে দ্য ওয়্যার-কে মানহানির নোটিশ পাঠায়। ইপিডব্লিউ আর্টিকেল সরিয়ে ফেললেও দ্য ওয়্যার তা প্রত্যাহার করেনি। ফলে আদানি গ্রুপ আদালতের দ্বারস্থ হয়।
পরবর্তীতে দ্য ওয়্যার-এর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা হলেও, পরাঞ্জয় গুহঠাকুরতার বিরুদ্ধে মামলা চলতে থাকে। এমনকি ২০২১ সালে গুজরাটের একটি আদালত তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় ফৌজদারি মানহানির অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
সাম্প্রতিক রায় ও সরকারি পদক্ষেপ: Adani content removal order
চলতি মাসের শুরুতে দিল্লির রোহিণী আদালত আদানি এন্টারপ্রাইজেসকে অন্তর্বর্তী স্বস্তি দিয়ে সাংবাদিক ও কয়েকটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে নির্দেশ দেয়, তারা যেন পাঁচ দিনের মধ্যে “অযাচিত ও মানহানিকর” কনটেন্ট সরিয়ে নেয়। আদালতের নির্দেশ কার্যকর না হওয়ায় এবার সরাসরি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক হস্তক্ষেপ করেছে।
মন্ত্রকের উপসচিব (ডিজিটাল মিডিয়া) অর্পিতা এস-এর স্বাক্ষরিত নোটিসে বলা হয়েছে, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, গুগলসহ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলোকেও এই নির্দেশ মানতে হবে। ইতিমধ্যেই ২২১টি কনটেন্ট—১৩৮টি ইউটিউব লিংক এবং ৮৩টি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট—চিহ্নিত করা হয়েছে, যা দ্য ওয়্যার, এইচডব্লিউ নিউজ, নিউজলন্ড্রি এবং সাংবাদিক রবিশ কুমার, অজিত অঞ্জুম, পরাঞ্জয় গুহঠাকুরতা ও আকাশ বানার্জির সঙ্গে যুক্ত।
কেন এই নির্দেশ গুরুত্বপূর্ণ?
এই ব্যাপক কনটেন্ট অপসারণকে ঘিরে সংবাদমহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিক ও মিডিয়া সংগঠনগুলির মতে, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত এবং সমালোচনামূলক সাংবাদিকতাকে দমন করার প্রচেষ্টা। অন্যদিকে সরকারের দাবি, এটি আদালতের রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া, সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নয়।
আদালতের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, শুধুমাত্র “প্রমাণহীন ও মানহানিকর” বক্তব্য সরাতে হবে। নতুন করে অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ বা তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। ফলে সাংবাদিকরা এখনও তাঁদের দাবি প্রমাণের সুযোগ পাবেন বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।
শেষ কথা:
আদানি বনাম গুহঠাকুরতা মামলার সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপ দেখিয়ে দিল যে কর্পোরেট সংস্থার ক্ষমতা, আদালতের নির্দেশ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে সংঘাত আরও তীব্র হচ্ছে। এই মামলার পরিণতি ভবিষ্যতে ভারতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিধি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।