IBPS-এ পরীক্ষার্থীদের পরিচয় যাচাইয়ে ব্যবহার হবে আধার, জানাল কেন্দ্র

প্রতারণা, ছদ্মবেশ এবং ভুয়া পরিচয় রুখতে বড় পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় সরকার। এবার থেকে ব্যাংকিং, আর্থিক পরিষেবা ও বীমা (BFSI) খাতে নিয়োগ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের পরিচয় যাচাইয়ে…

Aadhaar card Update Free Till June 14

প্রতারণা, ছদ্মবেশ এবং ভুয়া পরিচয় রুখতে বড় পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় সরকার। এবার থেকে ব্যাংকিং, আর্থিক পরিষেবা ও বীমা (BFSI) খাতে নিয়োগ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের পরিচয় যাচাইয়ে আধার ভিত্তিক যাচাইকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করবে ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংকিং পার্সোনেল সিলেকশন (IBPS)। এই নতুন পদক্ষেপ পরীক্ষার স্বচ্ছতা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা আরও মজবুত করতে সাহায্য করবে বলে মনে করছে সরকার।

এই সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি ভারতের গেজেটে প্রকাশ করা হয়েছে S.O.837 (পৃষ্ঠা ১৬১৪-১৫/সি) নম্বরে। এতে IBPS-কে ‘পাবলিক এক্সামিনেশন অথরিটি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা ‘Public Examination (Prevention of Unfair Means) Act, 2024’-এর আওতাভুক্ত।

   

এই নোটিফিকেশনটি আর্থিক পরিষেবা বিভাগ, অর্থ মন্ত্রক কর্তৃক Aadhaar Authentication for Good Governance (Social Welfare, Innovation, Knowledge) Rules, 2020-এর Rule 5 অনুসারে জারি হয়েছে। এর মাধ্যমে IBPS-কে পরীক্ষার্থীদের Yes/No কিংবা e-KYC-এর মাধ্যমে আধার যাচাইকরণের সুবিধা ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যদিও এটি সম্পূর্ণরূপে স্বেচ্ছামূলক (voluntary)।

UIDAI ও MeitY-র সম্মতিতে সিদ্ধান্ত:
এই সিদ্ধান্তের পূর্বে ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (UIDAI) এবং মিনিস্ট্রি অফ ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (MeitY)-র সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। সরকারের দাবি, এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র প্রতারণা রোধেই নয়, বরং সুশাসন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

পরীক্ষায় পরিচয় যাচাই আরও সহজ ও দ্রুত হবে:
আধার-ভিত্তিক এই যাচাইকরণ প্রক্রিয়া পরীক্ষার্থীদের পরিচয় দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করতে পারবে। এতে একদিকে যেমন প্রশাসনিক জটিলতা কমবে, তেমনই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ছদ্মপরিচয়ে বসা বা অন্যের হয়ে পরীক্ষা দেওয়ার প্রবণতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে।
সরকারের মতে, এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রকৃত ও যোগ্য প্রার্থীরা যাতে প্রতারণার শিকার না হন এবং প্রতিযোগিতায় স্বচ্ছতা বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করা হবে।

রেলের তৎকাল টিকিটেও আধার যাচাই বাধ্যতামূলক হচ্ছে:
অপরদিকে, শুধু নিয়োগ পরীক্ষা নয়, রেল পরিষেবাতেও আধার যাচাইকরণ চালু হতে চলেছে। সম্প্রতি ইউনিয়ন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ঘোষণা করেছেন, ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে IRCTC-র মাধ্যমে তৎকাল টিকিট বুকিংয়ের সময় আধার-ভিত্তিক OTP যাচাইকরণ বাধ্যতামূলক করা হবে।
এই নতুন ব্যবস্থা চালুর প্রধান উদ্দেশ্য হল দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা এবং সাধারণ যাত্রীরা যাতে সঠিকভাবে টিকিট পেতে পারেন তা নিশ্চিত করা।

Advertisements

রেলের দালাল ঠেকাতে আধার নির্ভরতা:
রেলমন্ত্রী বলেন, “অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, তৎকাল টিকিট ব্লক করে রাখে কিছু নির্দিষ্ট এজেন্ট বা দালাল, যারা পরে বেশি দামে তা বিক্রি করে। এই প্রবণতা বন্ধ করতেই আধার ভিত্তিক ওটিপি যাচাইকরণ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এতে একজন ব্যবহারকারী একটি নির্দিষ্ট আধার নম্বর দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্তই টিকিট কাটতে পারবেন।”
তাঁর মতে, এই ব্যবস্থা চালু হলে সাধারণ মানুষের কাছে টিকিট সহজলভ্য হবে এবং রেলের বুকিং ব্যবস্থার ওপর আস্থা বাড়বে।

একইসঙ্গে দু’টি ক্ষেত্রেই আধার যাচাইয়ের ব্যবহার:
এই দুটি পদক্ষেপের মাধ্যমে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে আধার ভিত্তিক যাচাইকরণ শুধু একটি পরিচয় পত্র হিসেবে নয়, বরং সুশাসনের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। একদিকে এটি যেমন পরীক্ষার ক্ষেত্রে ছদ্মবেশ রোধ করছে, অন্যদিকে রেল ব্যবস্থায় দালালচক্র ঠেকাতে ভূমিকা রাখছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরণের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ভবিষ্যতে অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষা বা সরকারি পরিষেবাতেও চালু হতে পারে। যদিও সব ক্ষেত্রেই এই যাচাইকরণ স্বেচ্ছাসেবী কিনা বা বাধ্যতামূলক হবে, তা ভবিষ্যৎ নির্দেশিকা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।

IBPS-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাকেন্দ্রিক সংস্থাকে ‘পাবলিক এক্সামিনেশন অথরিটি’ হিসেবে চিহ্নিত করা এবং আধার ভিত্তিক যাচাইকরণে তাদের অনুমোদন প্রদান নিঃসন্দেহে একটি বড় পদক্ষেপ। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আধুনিক হবে। একইভাবে, রেলের টিকিট বুকিং ব্যবস্থায় এই প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা প্রতারণার পথ বন্ধ করতে সহায়ক হবে।

যদি এই উদ্যোগগুলি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে ভারতীয় জনসাধারণ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে ডিজিটাল, বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর পরিষেবা ব্যবস্থার দিকে।