ইনকাম সার্টিফিকেট ইস্যুতে আধার বাধ্যতামূলক, ঘোষণা রাজস্ব দপ্তরের

দিল্লি সরকারের কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি থেকে প্রকৃত উপভোক্তাদের সঠিকভাবে সুবিধা পাইয়ে দিতে বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ইনকাম সার্টিফিকেট (Income Certificate) পাওয়ার জন্য আধার (Aadhaar)…

What Services Can Stop Without Aadhaar Card in India? Full List & Details Inside

দিল্লি সরকারের কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি থেকে প্রকৃত উপভোক্তাদের সঠিকভাবে সুবিধা পাইয়ে দিতে বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ইনকাম সার্টিফিকেট (Income Certificate) পাওয়ার জন্য আধার (Aadhaar) যাচাইকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা অনুমোদন দিয়েছেন। রাজস্ব দপ্তরের প্রস্তাব মেনে, আয় সার্টিফিকেট ইস্যুর প্রক্রিয়াকে আধার আইন, ২০১৬-এর ৭ নম্বর ধারার আওতায় আনা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে দিল্লির বহু নাগরিকের আয় সার্টিফিকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নতুন নিয়ম এবং শর্ত যোগ হয়েছে। তবে সরকারের দাবি, এর ফলে জালিয়াতি এবং ভুয়া দাবিকারীদের বিরুদ্ধে কড়া নজরদারি চালানো সম্ভব হবে এবং প্রকৃত উপকারভোগীরা উপযুক্ত সুবিধা পাবেন।

   

আধার যাচাইকরণের আইনি ভিত্তি:
আধার আইন ২০১৬-এর ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনও সরকার যদি কোনও পরিষেবা বা সুবিধা রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল থেকে পরিচালিত করে, তাহলে সেই পরিষেবার জন্য আধার ভিত্তিক প্রমাণীকরণ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এই ধারার আওতায়ই এবার দিল্লি সরকার আয় সার্টিফিকেট ইস্যুর ক্ষেত্রে আধার যাচাই বাধ্যতামূলক করল।

কেন গুরুত্বপূর্ণ আয় সার্টিফিকেট?
আয় সার্টিফিকেট হল এমন একটি নথি যা কোনও নাগরিকের বার্ষিক আয় কত, তা নির্ধারণ করে। এই সার্টিফিকেট ছাড়াই বহু সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যায় না। এর মধ্যে রয়েছে:

  • SC/ST/OBC ছাত্রদের টিউশন ফি রেয়াত বা ফেরত
  • বার্ধক্য ও প্রতিবন্ধী ভাতা
  • ‘দিল্লি অরোগ্য কোষ’ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা
  • বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ ও ভর্তির সুবিধা
  • এই নথি ছাড়া বহু দরিদ্র পরিবার সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। তাই সরকার চায়, প্রকৃত দরিদ্র মানুষরাই যাতে এই সুবিধাগুলি পান, এবং ভুয়া আয় দেখিয়ে কেউ যেন বেনিফিট না নেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া:
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত এই প্রস্তাবকে সমর্থন করে জানান, আধার বাধ্যতামূলক হলে স্বচ্ছতা আরও বাড়বে। “সরকারি সুবিধা শুধুমাত্র প্রকৃত দরিদ্র ও প্রাপ্য ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছানোর জন্য এই পদক্ষেপ অপরিহার্য,” বলেন তিনি।

সরল ও ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় উপকার:
রাজস্ব দপ্তরের মতে, আধার ভিত্তিক ই-ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় আর আলাদা করে পরিচয়পত্রের প্রয়োজন পড়বে না। এতে:

Advertisements
  • পরিষেবা পাওয়া সহজ হবে
    ভুয়া তথ্য দেওয়ার সম্ভাবনা কমবে
    অনলাইন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সুযোগ কমবে
    সেবা প্রদানের গতি বাড়বে
    এছাড়া, আধার থাকলে ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (DBT)-এর মাধ্যমে ভাতা ও অনুদান সরাসরি প্রাপকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে।
    যাঁদের আধার নেই, তাঁদের জন্য কী ব্যবস্থা?

যাঁদের এখনও আধার নম্বর নেই, তাঁদেরকে দ্রুত আধার নামাঙ্কনের জন্য আবেদন করতে হবে। এর জন্য UIDAI-এর নির্দেশিকা মেনে বিকল্প পরিচয়পত্র গ্রহণযোগ্য হবে। যেমন:

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য:
পাসপোর্ট
PAN কার্ড
কিষান ফটো পাসবুক
ড্রাইভিং লাইসেন্স
ব্যাঙ্ক পাশবুক
(এইগুলির সঙ্গে আধার এনরোলমেন্ট স্লিপ দিতে হবে)

অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য:
জন্ম সনদ
স্কুল আইডি (প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর সহ)
আধার এনরোলমেন্ট বা বায়োমেট্রিক আপডেট স্লিপ
সরকার আশ্বস্ত করেছে, আধার না থাকলেও প্রকৃত উপকারভোগীরা যাতে সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন, তার জন্য সবরকম সহযোগিতা করা হবে।

গণসচেতনতায় জোর:
নতুন নীতির মসৃণ বাস্তবায়নের জন্য লেফটেন্যান্ট গভর্নর রাজস্ব দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা ব্যাপক গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি নেয়। যাতে সাধারণ মানুষ এই নতুন নিয়ম সম্পর্কে অবগত হন এবং কারও কাছ থেকে অতিরিক্ত চার্জ বা হয়রানি না হয়।
পাশাপাশি বিভিন্ন CSC (Common Service Centre), সরকারী স্কুল, ওয়ার্ড অফিস, হাসপাতাল ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দিল্লি সরকারের এই পদক্ষেপ স্বচ্ছতা ও দক্ষতাকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে বলে মনে করছে প্রশাসন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তিগত ও ডকুমেন্টেশন সংক্রান্ত বাধা কাটিয়ে এই নিয়ম প্রয়োগ করতে গেলে তৃণমূল স্তরে কার্যকর প্রচার ও সহায়ক অবকাঠামো তৈরি জরুরি।
এই আধার-ভিত্তিক যাচাইকরণ শুধু দিল্লির রাজস্ব দপ্তরের কাজকে আধুনিকই করবে না, বরং বহু প্রকৃত উপকারভোগীর কাছে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।