নবজাতকের আধার আবশ্যক? জানুন সরকারের নির্দেশিকা

আজকের দিনে পরিচয়পত্র ছাড়া নাগরিক জীবনের কোনও ক্ষেত্রই প্রায় অচল। জন্মের পর থেকেই শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, টিকাকরণ কর্মসূচি, স্কুলে ভর্তি কিংবা সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্পে যোগদানের…

Baal Aadhaar

আজকের দিনে পরিচয়পত্র ছাড়া নাগরিক জীবনের কোনও ক্ষেত্রই প্রায় অচল। জন্মের পর থেকেই শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, টিকাকরণ কর্মসূচি, স্কুলে ভর্তি কিংবা সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্পে যোগদানের ক্ষেত্রে সঠিক নথিপত্র থাকা জরুরি। সেই প্রয়োজন পূরণে কেন্দ্র সরকার ও ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (UIDAI) চালু করেছে ‘বাল আধার’—যা বিশেষভাবে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য ইস্যু করা হয়। এই আধারকে আলাদা করে চেনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর নীল রঙের কার্ড।

কে আবেদন করতে পারবেন?
যে কোনও শিশু, এমনকি নবজাতকও, বাল আধারের জন্য নাম নথিভুক্ত করতে পারে। অভিভাবক বা অভিভাবকসুলভ অভিভাবকের উদ্যোগে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। শর্ত হল—সঠিক জন্ম সনদ এবং পিতামাতা বা অভিভাবকের আধার কার্ড উপস্থাপন করতে হবে।

   

কী কী নথি প্রয়োজন?
বাল আধারের জন্য মূলত তিন ধরনের নথি প্রয়োজন হয়—
1. শিশুর জন্ম সনদ
2. অভিভাবকের আধার কার্ড (মা বা বাবা, যেকোনও একজনের)
3. ঠিকানার প্রমাণ (অভিভাবকের আধার অনুযায়ী)
বাল আধারের মূল বৈশিষ্ট্য:
কেবলমাত্র ৫ বছরের নিচের শিশুদের জন্য ইস্যু করা হয়।
নীল রঙের কার্ডে প্রিন্ট করা থাকে, যাতে সহজে চেনা যায়।
শিশুর বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ বা চোখের আইরিস স্ক্যান) নেওয়া হয় না।
৫ বছর পূর্ণ হলে বায়োমেট্রিক আপডেট বাধ্যতামূলক এবং ১৫ বছরে আবারও আপডেট করতে হবে।
স্বাস্থ্য প্রকল্প, স্কুলে ভর্তি, বৃত্তি এবং অন্যান্য সরকারি সুবিধা গ্রহণের জন্য কার্যকর।

আবেদন প্রক্রিয়া:
অভিভাবকদের সবচেয়ে কাছের আধার নিবন্ধন কেন্দ্রেই আবেদন করতে হবে। প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ—
1. UIDAI ওয়েবসাইট বা কিউআর কোডের মাধ্যমে নিকটবর্তী আধার সেন্টারের তথ্য সংগ্রহ করুন।
2. শিশুর নাম ও বিবরণ সহ নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করুন।
3. জন্ম সনদ, পিতামাতার আধার এবং ঠিকানার প্রমাণ জমা দিন।
4. শিশুর একটি ছবি তোলা হবে।
5. সব নথি যাচাইয়ের পর বাল আধার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
6. সাধারণত ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে আধার কার্ড ডাকযোগে পৌঁছে যায়।

Advertisements

কেন বাল আধার গুরুত্বপূর্ণ?
১. স্বাস্থ্য ও কল্যাণমূলক প্রকল্প
শিশুর জন্মের পর থেকেই টিকাকরণ, পুষ্টি এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা পেতে বাল আধার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনেক সরকারি ভর্তুকি ও অনুদান কর্মসূচিও আধারের সঙ্গে যুক্ত।
২. শিক্ষাক্ষেত্রে সুবিধা
স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে সরকারি বৃত্তি—প্রায় সর্বত্র আধার এখন আবশ্যিক। ফলে ছোটবেলা থেকেই বাল আধার থাকলে পরবর্তী শিক্ষাজীবনে কোনও জটিলতা হয় না।
৩. প্রাথমিক পরিচয় প্রতিষ্ঠা
ডিজিটাল যুগে নাগরিক পরিচয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাল আধার একটি শিশুর প্রথম আনুষ্ঠানিক ডিজিটাল পরিচয় গড়ে তোলে।
৪. জাতীয় ডাটাবেসে সংযুক্তি
ভবিষ্যতে নিয়মিত আধার আপডেটের মাধ্যমে শিশুর পরিচয় সহজে সংরক্ষণ ও সংযুক্ত করা যায়। ফলে নাগরিক সেবা গ্রহণে কোনও সমস্যা হয় না।

আজকের দিনে একটি শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই তার প্রাথমিক পরিচয়পত্র তৈরি হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাল আধার সেই প্রয়োজন পূরণ করছে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সরকারি সুবিধা—সব ক্ষেত্রেই আধারের গুরুত্ব বাড়ছে। তাই শিশু জন্মানোর পর যত দ্রুত সম্ভব অভিভাবকদের বাল আধার করিয়ে নেওয়া উচিত। এর মাধ্যমে কেবল সরকারি সুবিধাই নয়, ভবিষ্যতের পরিচয় সম্পর্কিত নানা জটিলতা থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে।