Aadhaar Verification: অবশেষে জুলাই ১ তারিখ থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও নিয়ন্ত্রক পরিবর্তন কার্যকর হতে চলেছে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে দেশের করদাতা, ব্যাংকের গ্রাহক, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী এবং রেলযাত্রীদের উপর। আধার যাচাই থেকে শুরু করে প্যান কার্ডের আবেদন, তৎকাল টিকিট বুকিং, এটিএম ফি, এবং ক্রেডিট কার্ডের বিভিন্ন সুবিধা—এই পরিবর্তনগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক তথ্য জানা ও আগাম পরিকল্পনা করা না হলে সাধারণ মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
প্যান কার্ড এবং তৎকাল টিকিটের জন্য আধার বাধ্যতামূলক
কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড (CBDT) ঘোষণা করেছে যে, জুলাই ১ থেকে নতুন প্যান কার্ডের আবেদন করতে গেলে বাধ্যতামূলকভাবে আধার যাচাই করতে হবে। আগে যেখানে ভোটার আইডি বা জন্ম সনদের মতো অন্য নথি ব্যবহার করে প্যান কার্ডের আবেদন করা যেত, এবার থেকে শুধুমাত্র আধার কার্ডের মাধ্যমে প্রমাণিত পরিচয় গ্রহণযোগ্য হবে। এর ফলে কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা বাড়বে এবং জালিয়াতি রোধ করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রেল মন্ত্রণালয়ও তৎকাল টিকিট বুকিংয়ে বড় পরিবর্তন আনছে। জুলাই ১ থেকে আইআরসিটিসি ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তৎকাল টিকিট বুক করতে হলে আধার ভিত্তিক যাচাই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো, এজেন্টদের দ্বারা টিকিটের অপব্যবহার রোধ করা ও সঠিক যাত্রীদের কাছে টিকিট পৌঁছে দেওয়া।
আরও এক ধাপ এগিয়ে জুলাই ১৫ থেকে তৎকাল বুকিংয়ে ওটিপি ভিত্তিক আধার যাচাইও চালু করা হবে। তা শুধু অনলাইন নয়, রেলওয়ের বুকিং কাউন্টার বা অনুমোদিত এজেন্টদের মাধ্যমেও প্রযোজ্য হবে। তাছাড়া, প্রথম ৩০ মিনিট পর্যন্ত কোনও এজেন্ট তৎকাল টিকিট বুক করতে পারবেন না।
আয়কর রিটার্নের সময়সীমা বাড়ল
করদাতাদের জন্য সুখবর হলো, CBDT ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ ৩১ জুলাই থেকে বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর করেছে। ফলে ৪৬ দিনের অতিরিক্ত সময় পেলেন বেতনভোগীরা। যদিও শেষ মুহূর্তে জমা দিলে সার্ভারের সমস্যার কারণে ঝামেলা হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিটার্ন ফাইল করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
SBI কার্ডের বড় পরিবর্তন
জুলাই ১৫ থেকে SBI কার্ড তাদের প্রিমিয়াম ক্রেডিট কার্ডগুলির এয়ার অ্যাক্সিডেন্ট ইনসুরেন্স সুবিধা বন্ধ করতে চলেছে। যেমন SBI Card ELITE, Miles ELITE, এবং Miles PRIME কার্ডের এক কোটি টাকার বিমা সুবিধা এবং SBI Card PRIME ও PULSE-এর ৫০ লাখ টাকার বিমা সুবিধা বাতিল করা হবে।
এছাড়াও, মিনিমাম এমাউন্ট ডিউ (MAD)-এর হিসাব করার নিয়ম পরিবর্তন হচ্ছে। এখন থেকে MAD-এ সম্পূর্ণ জিএসটি, ইএমআই, পূর্ণ ফি ও ফাইন্যান্স চার্জ, বাকি ব্যালেন্সের ২ শতাংশ এবং লিমিট ছাড়ানো টাকার পরিমাণ যোগ হবে। আগে যেখানে নির্দিষ্ট চার্জের ৫ শতাংশ বা ফাইন্যান্স চার্জের ১০০ শতাংশ—যেটি বেশি, সেটি হিসাব করা হতো, সেই নিয়ম এবার পরিবর্তিত হচ্ছে।
HDFC এবং ICICI ব্যাংকের ফি পরিবর্তন
HDFC ব্যাংকও তাদের ক্রেডিট কার্ডের ফি ও চার্জের কাঠামো জুলাই ১ থেকে পরিবর্তন করছে। এখন থেকে রেন্ট পেমেন্ট, গেমিং খরচ (যা মাসে ১০ হাজার টাকা অতিক্রম করছে), এবং ৫০ হাজার টাকার বেশি ইউটিলিটি বিলের উপর ১ শতাংশ ফি আরোপ করা হবে। ১০ হাজার টাকার বেশি ওয়ালেট রিচার্জের ক্ষেত্রেও একই ফি প্রযোজ্য হবে। তবে গ্রাহকরা এখন থেকে বীমা প্রিমিয়ামের পেমেন্টের জন্যও রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাবেন, যদিও তা মাসে সর্বোচ্চ ১০,০০০ পয়েন্ট পর্যন্ত সীমিত।
ICICI ব্যাংক তাদের ATM এবং অন্যান্য সার্ভিস ফি নিয়েও বড় পরিবর্তন আনছে। এখন থেকে, প্রতি মাসে পাঁচটি ফ্রি এটিএম লেনদেন থাকবে, তারপর প্রতি লেনদেনে ২৩ টাকা করে চার্জ করা হবে। অন্য ব্যাংকের এটিএমের ক্ষেত্রে মেট্রো শহরে তিনটি ফ্রি লেনদেন এবং নন-মেট্রোতে পাঁচটি ফ্রি লেনদেন থাকবে। অতিরিক্ত লেনদেনের জন্য ফাইন্যান্সিয়াল ট্রান্স্যাকশনে ২৩ টাকা এবং নন-ফাইন্যান্সিয়ালে ৮.৫০ টাকা চার্জ করা হবে।
আন্তর্জাতিক এটিএম লেনদেনের ক্ষেত্রেও খরচ বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি উইথড্রয়ালে ১২৫ টাকা, ৩.৫ শতাংশ কারেন্সি কনভার্সন ফি এবং ব্যালান্স চেক বা অন্য নন-ফাইন্যান্সিয়াল ট্রান্স্যাকশনের জন্য ২৫ টাকা চার্জ ধার্য করা হবে। IMPS ফি-তেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে লেনদেনের পরিমাণ অনুযায়ী ২.৫০ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত চার্জ প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া, নগদ জমার ক্ষেত্রেও নিয়ম কঠোর করা হয়েছে। মাসে তিনবারের বেশি নগদ জমায় প্রতি লেনদেনে ১৫০ টাকা ফি বসবে। মাসে এক লাখ টাকার বেশি জমার জন্য প্রতি হাজার টাকায় ৩.৫০ টাকা বা সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা—যেটি বেশি, সেটি দিতে হবে। তৃতীয় পক্ষের নগদ জমায় ২৫,০০০ টাকার সীমা অপরিবর্তিত থাকবে।
এইসব পরিবর্তনগুলির কারণে দেশের সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে। তাই সময়মতো আয়কর রিটার্ন দাখিল, রেল টিকিট বুকিং এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম-কানুন ভালোভাবে জেনে রাখা প্রয়োজন। সতর্ক না হলে অতিরিক্ত খরচ এবং নানা জটিলতায় পড়তে হতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা এবং তথ্যভিত্তিক পদক্ষেপই এই সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।