ভারতের ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি (UIDAI) আগামী দুই মাসের মধ্যে একটি নতুন প্রকল্প চালু করতে চলেছে, যার মাধ্যমে স্কুলের মাধ্যমে শিশুদের আধার (Aadhaar) বায়োমেট্রিক আপডেট করা হবে। এই পদক্ষেপটি ধাপে ধাপে সারা দেশে বাস্তবায়ন করা হবে। UIDAI-এর সিইও ভূবনেশ কুমার পিটিআই-কে জানিয়েছেন, বর্তমানে পাঁচ বছর অতিক্রমকারী প্রায় ৭ কোটিরও বেশি শিশু এখনো বাধ্যতামূলক বায়োমেট্রিক আপডেট (Mandatory Biometric Update – MBU) করেনি।
শিশুর বায়োমেট্রিক আপডেট বাধ্যতামূলক:
UIDAI-এর নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচ বছর বয়স অতিক্রম করার পর শিশুদের বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ, চোখের রেটিনা) আধার কার্ডে আপডেট করানো বাধ্যতামূলক। যদি সাত বছর বয়স পর্যন্তও এই আপডেট না করা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট আধার নম্বর নিষ্ক্রিয় (deactivate) হয়ে যেতে পারে। পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সের মধ্যে এই আপডেট সম্পূর্ণভাবে বিনামূল্যে হলেও, সাত বছর পর এর জন্য নির্ধারিত ১০০ টাকা ফি দিতে হয়।
স্কুলের মাধ্যমে পৌঁছনোই লক্ষ্য:
UIDAI এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি স্কুলে গিয়ে বায়োমেট্রিক আপডেটের কাজ করতে চায়। সিইও ভূবনেশ কুমার জানান, “আমরা একটি প্রযুক্তিগত সমাধানের ওপর কাজ করছি যাতে স্কুলের মাধ্যমে পিতামাতার সম্মতিতে শিশুদের বায়োমেট্রিক আপডেট করা যায়। বর্তমানে এর পরীক্ষামূলক পর্যায় চলছে, এবং আগামী ৪৫-৬০ দিনের মধ্যেই এটি প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”
UIDAI-এর লক্ষ্য, প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্কুলে সহজেই পৌঁছানো ও অভিভাবকদের সম্মতি নিয়ে শিশুদের আধার আপডেটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। এই প্রকল্পে প্রতিটি জেলায় বায়োমেট্রিক যন্ত্র পাঠানো হবে, যেগুলি এক একটি স্কুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্যবহার করা হবে।
কিশোরদের জন্য দ্বিতীয় আপডেটও স্কুলের মাধ্যমে:
UIDAI শুধুমাত্র শিশুদের নয়, ১৫ বছর বয়সে দ্বিতীয় বায়োমেট্রিক আপডেটের ক্ষেত্রেও স্কুল এবং কলেজগুলোর মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু করার পরিকল্পনা করছে। কারণ শিশুরা যখন কিশোর হয়, তখন তাদের শরীরের বৃদ্ধি ও পরিবর্তনের ফলে আগের বায়োমেট্রিক তথ্য অচল বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে পড়ে। এই পর্যায়েও একটি নতুন বায়োমেট্রিক আপডেট জরুরি হয়ে পড়ে।
জন্মের সময় আধার, কিন্তু বায়োমেট্রিক ছাড়াই:
বর্তমানে সদ্যোজাত শিশুদের আধার তৈরি হলেও তাদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হয় না। ফলে পাঁচ বছর বয়সে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এই কারণে বহু শিশুর আধার নম্বর অকার্যকর হয়ে পড়ছে, ফলে স্কুলে ভর্তি, স্কলারশিপ আবেদন, পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন কিংবা সরকারি ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (DBT) প্রকল্প থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
আধার আপডেট: সুবিধা ও প্রয়োজনে গুরুত্ব:
UIDAI জানিয়েছে, আধার নম্বর আপডেটের মাধ্যমে শিশুরা সহজেই বিভিন্ন সরকারি সুবিধা ও প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। স্কুলে ভর্তি, শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া, বিভিন্ন প্রমাণপত্র তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আধার একটি অপরিহার্য পরিচয়পত্র হিসাবে কাজ করে। আধার আপডেট থাকলে ওইসব পরিষেবার জন্য পুনরায় পরিচয়পত্র দিতে হয় না, ফলে সময় ও খরচ দুই-ই বাঁচে।
অভিভাবকদের সহযোগিতা ও সচেতনতা জরুরি:
এই প্রকল্প সফল করতে অভিভাবকদের সচেতনতা ও সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। UIDAI বারবার জানিয়েছে, পিতামাতার সম্মতি ছাড়া শিশুদের তথ্য আপডেট করা হবে না। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিভাবকদের আগে থেকেই তথ্য দেওয়া হবে এবং নির্দিষ্ট দিনে স্কুলে গিয়ে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলা হবে।
UIDAI আরও জানিয়েছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ শিশু আধার সংশ্লিষ্ট সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে এবং এক জাতীয় পরিচয়পত্রের সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হবে না।
UIDAI-এর এই নতুন পদক্ষেপ শিশু ও কিশোরদের আধার আপডেট সহজতর করবে। সরকারের এই প্রচেষ্টা দেশে ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থার ভিতকে আরও মজবুত করবে। বায়োমেট্রিক আপডেট যদি যথাসময়ে সম্পন্ন হয়, তাহলে ভবিষ্যতে শিশুরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সরকারি পরিষেবার পূর্ণ সুবিধা পাবে। এটি ডিজিটাল ভারত গঠনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।