২০৩৬-এর আগে কি আসবে নবম বেতন কমিশন? কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের প্রত্যাশা

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য বেতন কমিশন সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সপ্তম বেতন কমিশনের মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে এবং অষ্টম বেতন কমিশন…

9th Pay Commission Could Central Govt Employees See Early Salary Hikes

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য বেতন কমিশন সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সপ্তম বেতন কমিশনের মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে এবং অষ্টম বেতন কমিশন ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এই কমিশন প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীদের বেতন, ভাতা এবং পেনশন সংশোধনের জন্য গঠিত হয়েছে। তবে, এখনই ইতিমধ্যে নবম বেতন কমিশন (9th Pay Commission) নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, ঐতিহাসিকভাবে প্রতি দশ বছর অন্তর গঠিত বেতন কমিশনকি এবার ২০৩৬-এর আগেই আসতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

অষ্টম বেতন কমিশন, যা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ঘোষিত হয়েছিল, ২০২৬ সাল থেকে বেতন ও পেনশন সংশোধনের জন্য কাজ শুরু করবে। এই কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫৭ থেকে বাড়িয়ে ২.৮৬ করার সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে ন্যূনতম বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে ৫১,৪৮০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। এছাড়া, মহার্ঘ ভাতা (ডিএ), গৃহভাড়া ভাতা (এইচআরএ) এবং পরিবহন ভাতা (টিএ) সংশোধনের প্রস্তাবও রয়েছে। তবে, এই পরিবর্তনগুলি এখনও চূড়ান্ত হয়নি, এবং কমিশনের চেয়ারপারসন ও সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রেক্ষাপটে, নবম বেতন কমিশন নিয়ে আলোচনা কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করছে।

   

প্রতি দশ বছর অন্তর বেতন কমিশন গঠনের ঐতিহ্য অনুসারে, নবম বেতন কমিশন ২০৩৬ সালে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতির হার এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেকে মনে করছেন যে এই কমিশন আগেই গঠিত হতে পারে। কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের ইউনিয়নগুলি ইতিমধ্যে সরকারের কাছে ২০% অন্তর্বর্তীকালীন ত্রাণ (ইন্টারিম রিলিফ) এবং ন্যূনতম বেতন ২৬,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছে। এই দাবিগুলি অষ্টম বেতন কমিশনের আলোচনার সময় উত্থাপিত হয়েছিল, এবং এটি নবম কমিশনের জন্যও প্রাসঙ্গিক হতে পারে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সরকারকে আরও ঘন ঘন বেতন সংশোধনের কথা ভাবতে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ডাঃ অ্যাক্রয়েড ফর্মুলার ভিত্তিতে, যা পরিবারের ন্যূনতম চাহিদা নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়, ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করা হয়। এই ফর্মুলা অনুসারে, বর্তমান বাজার মূল্য এবং মহার্ঘ ভাতার হার বিবেচনা করে নবম কমিশন ন্যূনতম বেতন ৬০,০০০ টাকার উপরে নিয়ে যেতে পারে। এছাড়া, পেনশন সংস্কার, পারফরম্যান্স-ভিত্তিক প্রণোদনা এবং নতুন ভাতার প্রবর্তনও নবম কমিশনের এজেন্ডায় থাকতে পারে।

কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের প্রত্যাশার মধ্যে রয়েছে উচ্চতর ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর, যা ৩.০ এর কাছাকাছি হতে পারে। এটি বেতন ও পেনশন বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হবে। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে লেভেল ১-এর একজন কর্মচারীর বেতন ১৮,০০০ টাকা, যা অষ্টম কমিশনের ২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরে ৫১,৪৮০ টাকায় উন্নীত হতে পারে। নবম কমিশনে এই ফ্যাক্টর ৩.০ হলে, বেতন আরও বাড়তে পারে, সম্ভবত ৬০,০০০ টাকার কাছাকাছি। এছাড়া, পেনশনভোগীদের জন্যও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যেমন পেনশনের ন্যূনতম পরিমাণ ৩০,০০০ টাকা থেকে ৭৫,০০০ টাকায় উন্নীত হতে পারে।

Advertisements

তবে, নবম বেতন কমিশনের সময়সীমা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। অষ্টম কমিশনের বাস্তবায়নও ২০২৬ সালের শেষ বা ২০২৭ সালের শুরুতে বিলম্বিত হতে পারে বলে জানা গেছে। এই বিলম্বের কারণে কর্মচারীদের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ দেখা দিতে পারে, তবে সরকার সাধারণত বিলম্বের জন্য বকেয়া প্রদান করে। নবম কমিশন যদি ২০৩৬-এর আগে গঠিত হয়, তবে এটি অর্থনৈতিক সংস্কারের একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। বিশেষ করে, ডিজিটাল অর্থনীতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব এবং পরিবর্তিত শ্রমবাজারের প্রেক্ষাপটে নতুন ধরনের ভাতা এবং সুবিধার প্রবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।

ইউনিয়ন নেতা শিব গোপাল মিশ্রের নেতৃত্বে গঠিত একটি ১৩ সদস্যের কমিটি অষ্টম কমিশনের জন্য একটি স্মারকলিপি তৈরি করছে, যা ২০২৫ সালের জুন মাসে চূড়ান্ত হবে। এই কমিটি নবম কমিশনের জন্যও প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করতে পারে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, নবম কমিশনের গঠন সম্ভবত ২০৩০-এর দশকের শুরুতে শুরু হতে পারে, যদি অর্থনৈতিক চাপ এবং কর্মচারীদের দাবি তীব্র হয়। তবে, সরকারের অর্থনৈতিক নীতি এবং রাজস্ব ঘাটতি এই সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

নবম বেতন কমিশন কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। তবে, এর বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা এখন অষ্টম কমিশনের সুপারিশের দিকে তাকিয়ে আছে, তবে নবম কমিশন নিয়ে আলোচনা ইতিমধ্যে তাদের মনে নতুন স্বপ্ন জাগিয়েছে।