৮ম বেতন কমিশনে পুরনো পেনশনভোগীরা বাদ পড়বেন? জানুন বিস্তারিত

অষ্টম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন (8th Pay Commission) সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় উন্নত করার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে প্রত্যাশিত। পেনশনভোগীদের জন্যও তাদের…

8th Pay Commission Update Will Pre-2026 Pensioners Miss Out on Benefits

অষ্টম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন (8th Pay Commission) সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় উন্নত করার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে প্রত্যাশিত। পেনশনভোগীদের জন্যও তাদের পেনশন বৃদ্ধির একই আশা রয়েছে। এই আসন্ন বেতন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় ৫০ লক্ষ কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীকে উপকৃত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, ১ জানুয়ারি, ২০২৬-এর আগে অবসর নেওয়া সরকারি পেনশনভোগীরা এই কমিশনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। এই বিষয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ স্পষ্টীকরণ দিয়েছেন।

   

পেনশন বৃদ্ধির প্রত্যাশা ও বিতর্ক

অনেক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, কেন্দ্র সরকার ২০২৫ সালের ফিনান্স বিলের সংশোধনীর মাধ্যমে অষ্টম বেতন কমিশনের অধীনে পেনশনভোগীদের জন্য দুটি শ্রেণি তৈরি করতে পারে—যারা ১ জানুয়ারির আগে অবসর নেবেন এবং যারা তার পরে অবসর নেবেন। এই জল্পনা তৈরি হয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেসের অভিযোগের পর। কংগ্রেস দাবি করেছে যে, কেন্দ্র সরকারের একটি ‘গোপন এজেন্ডা’ রয়েছে, যার মাধ্যমে ২০২৬-এর আগে অবসরপ্রাপ্তদের অষ্টম বেতন কমিশনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে।

এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে যখন লোকসভায় ২৫ মার্চ, ২০২৫-এ ফিনান্স বিল ২০২৫-এর অধীনে সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিসেস (সিসিএস) পেনশন নিয়মের বৈধতা এবং ভারতের সংযুক্ত তহবিল থেকে পেনশন ব্যয়ের নীতি পাস হয়। বিলে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের পেনশন নিয়মের অধীনে পেনশনভোগীদের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা রয়েছে এবং এই পার্থক্য কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে, বিশেষ করে অবসরের তারিখের উপর ভিত্তি করে করা যেতে পারে। এই আইন ১ জুন, ১৯৭২ থেকে কার্যকর করা হয়েছে, যা সিসিএস (পেনশন) নিয়ম, ১৯৭২, ২০২১ এবং ২০২৩-এর সমস্ত নির্দেশাবলীকে বৈধতা দেয়।

অর্থমন্ত্রীর স্পষ্টীকরণ

এই বিতর্কের জবাবে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ রাজ্যসভায় বলেন, “ফিনান্স বিলে পেনশন নিয়মের সাম্প্রতিক সংশোধনী কেবল বিদ্যমান নীতির বৈধতা প্রদান করে। এটি সিভিল বা প্রতিরক্ষা পেনশনভোগীদের সুবিধার কোনও পরিবর্তন করে না।” তিনি বিরোধীদের উপর পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, “কংগ্রেসের আমলে ষষ্ঠ বেতন কমিশনে ১ জানুয়ারি, ২০০৬-এর কাটঅফের ভিত্তিতে পেনশনভোগীদের মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারে সপ্তম বেতন কমিশন ২০১৬-এর আগে এবং পরে অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে সমতা নিশ্চিত করেছে। অষ্টম বেতন কমিশনও কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য বেতন ও সুবিধা আরও উন্নত করবে।”

অষ্টম বেতন কমিশনের প্রত্যাশা

অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ জমা পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ন্যাশনাল কাউন্সিল-জেসিএম-এর কর্মী পক্ষ মনে করেন, ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর কমপক্ষে ২ হওয়া উচিত। অনেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞরা ১.৯২, ২.০৮ বা ২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের পূর্বাভাস দিচ্ছেন। যদি এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরগুলির মধ্যে কোনওটি সরকারের অনুমোদন পায়, তবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন ১০০% বা তার বেশি বাড়তে পারে। পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রেও একই হবে।

বর্তমানে, সপ্তম বেতন কমিশনের অধীনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫৭। কর্মচারীদের জন্য সর্বনিম্ন মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা এবং পেনশনভোগীদের জন্য ৯,০০০ টাকা। যদি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২ হয়, তবে মূল বেতন এবং পেনশন ১০০% বেড়ে যথাক্রমে ৩৬,০০০ টাকা এবং ১৮,০০০ টাকা হবে।
যদি ২.০৮ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর অনুমোদিত হয়, তবে মূল বেতন ১০৮% বেড়ে ১৮,০০০ টাকা থেকে ৩৭,৪৪০ টাকায় উন্নীত হবে। পেনশনও ১০৮% বেড়ে ৯,০০০ টাকা থেকে ১৮,৭২০ টাকা হবে।

Advertisements

সবচেয়ে বড় চমক হবে যদি ২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর অনুমোদিত হয়। তবে কর্মচারীদের বেতন ১৮৬% বেড়ে ১৮,০০০ টাকা থেকে ৫১,৪৮০ টাকায় পৌঁছবে। পেনশনও ১৮৬% বৃদ্ধি পেয়ে ৯,০০০ টাকা থেকে ২৫,৭৪০ টাকা হবে।

পেনশনভোগীদের জন্য স্পষ্টতা

অর্থমন্ত্রী সীতারমণের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, ২০২৬-এর আগে অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার কোনও পরিকল্পনা নেই। তিনি বলেন, “সপ্তম বেতন কমিশনে ২০১৬-এর আগে এবং পরে অবসরপ্রাপ্তদের সমান সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এই নীতি অষ্টম বেতন কমিশনেও অব্যাহত থাকবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, সংশোধনীটি কেবল প্রক্রিয়াগত, এবং এটি পেনশনের অধিকারে কোনও পরিবর্তন আনে না।

বিরোধীদের অভিযোগ ও জনমত

কংগ্রেসের অভিযোগের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করেন, এটি পেনশনভোগীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা। তবে সরকারের স্পষ্টীকরণের পর অনেক পেনশনভোগী স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী বলেন, “আমরা আশা করি, সরকার আমাদের প্রতি ন্যায়বিচার করবে।”

অষ্টম বেতন কমিশন নিয়ে জল্পনা এবং প্রত্যাশা তুঙ্গে। ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর যাই হোক না কেন, এটি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জীবনে বড় পরিবর্তন আনবে। অর্থমন্ত্রীর আশ্বাসে স্পষ্ট যে, ২০২৬-এর আগে অবসরপ্রাপ্তরা বঞ্চিত হবেন না। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে কমিশনের প্রতিবেদন এবং সরকারের অনুমোদনের জন্য।