কেন্দ্রীয় সরকার অবশেষে ৮ম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) বাস্তবায়নের জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছে। ২০২৬ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে এই কমিশন কার্যকর হবে বলে জানা গেছে। এই সিদ্ধান্তে উপকৃত হবেন দেশের প্রায় ৪৮.৬২ লক্ষ সরকারি কর্মচারী ও ৬৭.৮৫ লক্ষ পেনশনভোগী। নতুন কমিশনের অধীনে তারা পাবেন উন্নত বেতন কাঠামো, সংশোধিত ভাতা এবং বাড়তি পেনশন সুবিধা।
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেতন হালনাগাদ:
৮ম বেতন কমিশনের মূল উদ্দেশ্য হল বর্তমান মূল্যবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং কর্মীদের প্রয়োজন অনুযায়ী বেতন ও কল্যাণ নীতিতে পরিবর্তন আনা। কমিশনের প্রস্তাবিত ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ৩.০০, যা ইঙ্গিত করছে যে সর্বনিম্ন বেতনে প্রায় ৩৪.১ শতাংশ বৃদ্ধি হতে পারে। এর ফলে সর্বনিম্ন মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ২১,৬০০ টাকা হওয়া সম্ভাবনা।
ডিএ (ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স) সংযোজন:
প্রতিবছরের মূল্যবৃদ্ধি অনুযায়ী, ২০২৬ সালের শুরুর দিকে ডিএ-এর হার ৭০ শতাংশে পৌঁছতে পারে বলে ধারণা। ৮ম কমিশনের অধীনে এই ডিএ মূল বেতনের সাথে একত্রিত করা হবে। এর ফলে বেতন কাঠামো হবে আরও সহজবোধ্য ও স্বচ্ছ। নতুন গঠিত কাঠামোয়, সরকারি কর্মীদের বেতন ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকার মধ্যে দাঁড়াতে পারে, যা তাদের হাতে পাওয়া বেতনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে।
পেনশনের অঙ্কেও বড় বৃদ্ধি:
পেনশনভোগীদের জন্যও রয়েছে বড়সড় সুখবর। অনুমান করা হচ্ছে, ন্যূনতম পেনশন বেড়ে ২০,৫০০ টাকা হতে পারে। বর্তমান পেনশন ব্যবস্থা অনুযায়ী এই বৃদ্ধি একটি বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কীভাবে হিসাব করবেন নতুন বেতন?
কর্মীদের সুবিধার্থে নতুন বেতনের একটা সরল হিসাব পদ্ধতি তুলে ধরা হল:
1. বর্তমান মূল বেতন (৭ম বেতন কমিশন অনুযায়ী) জেনে নিন।
2. নতুন মূল বেতন = বর্তমান মূল বেতন × ৩.০০
3. ডিএ হিসাব = নতুন মূল বেতন × ০.৫০
4. এইচআরএ (ঘর ভাড়া ভাতা) হিসাব:
মেট্রো শহরে: নতুন বেতনের ২৭ শতাংশ
টায়ার-২ শহরে: ২০ শতাংশ
টায়ার-৩ শহরে: ১০ শতাংশ
5. ট্রাভেল অ্যালাউন্স (TA) সংযোজন করুন — শহর ও কর্মপদের ভিত্তিতে
6. গ্রস বেতন = নতুন মূল বেতন + ডিএ + এইচআরএ + TA – স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন
উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো বর্তমান মূল বেতন হয় ১৮,০০০ টাকা:
নতুন বেতন = ১৮,০০০ × ৩ = ৫৪,০০০ টাকা
ডিএ = ২৭,০০০ টাকা
এইচআরএ (মেট্রো শহরে) = ১৪,৫৮০ টাকা
ধরুন TA = ৩,৬০০ টাকা
মোট বেতন = ৫৪,০০০ + ২৭,০০০ + ১৪,৫৮০ + ৩,৬০০ = ৯৯,১৮০ টাকা (প্রায়)
ইতিহাসে বেতন কমিশনের প্রভাব:
ভারতের বেতন কমিশনের ইতিহাসে প্রতিটি কমিশন সরকারি কর্মীদের জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। নিচে কমিশনভিত্তিক কিছু তথ্য দেওয়া হল:
৪র্থ বেতন কমিশন (১৯৮৬): ২৭.৬ শতাংশ বৃদ্ধি, সর্বনিম্ন বেতন: ৭৫০ টাকা
৫ম কমিশন (১৯৯৬): ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি, সর্বনিম্ন বেতন: ২,৫৫০ টাকা
৬ষ্ঠ কমিশন (২০০৬): ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি, ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর: ১.৮৬, সর্বনিম্ন বেতন: ৭,০০০ টাকা
৭ম কমিশন (২০১৬): ১৪.২৯ শতাংশ বৃদ্ধি, ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর: ২.৫৭, সর্বনিম্ন বেতন: ১৮,০০০ টাকা
৮ম কমিশন (২০২৬): প্রত্যাশিত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি, ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর: ৩.০০, সর্বনিম্ন বেতন: ২১,৬০০ টাকা
সরকারি ঘোষণার জন্য নজর রাখুন:
কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা সরকারি ঘোষণা ও নীতিমালা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন Department of Personnel and Training-এর ওয়েবসাইটে: https://dopt.gov.in/
৮ম বেতন কমিশনের বাস্তবায়ন সরকারি কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্তদের আর্থিক নিরাপত্তা ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। মূল্যবৃদ্ধির যুগে এই ধরনের পদক্ষেপ কর্মীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে বড় ভূমিকা নেবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা—২০২৬ সালে বাস্তবায়নের পর এর বাস্তব প্রভাব দেখতে পাওয়া যাবে।