কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের বেতন ও ভাতার সংশোধনের জন্য প্রতি দশ বছর অন্তর গঠিত বেতন কমিশন ভারতের অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ৮ম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) গঠনের অনুমোদন দিয়েছে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এই কমিশন প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীদের জন্য বেতন, ভাতা এবং পেনশনের কাঠামো পর্যালোচনা করবে। এই প্রেক্ষিতে, সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নগুলি তাদের দাবিগুলি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। ন্যাশনাল কাউন্সিল-জয়েন্ট কনসালটেটিভ মেশিনারি (NC-JCM) এবং অন্যান্য ইউনিয়নগুলি একটি “সাধারণ মেমোরেন্ডাম” তৈরি করছে, যেখানে তাদের প্রধান দাবিগুলি তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে ৮ম বেতন কমিশনের জন্য সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নগুলির শীর্ষ ৫টি দাবি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
Read Hindi: 8th Pay Commission: सरकारी कर्मचारी यूनियनों की शीर्ष 5 मांगें उजागर
১. ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বৃদ্ধি
কর্মচারী ইউনিয়নগুলি ৮ম বেতন কমিশনের জন্য ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর হিসেবে ৩.৬৮ গুণ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে। ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর হলো একটি গুণক, যা বর্তমান মূল বেতনের উপর প্রয়োগ করে নতুন বেতন নির্ধারণ করা হয়। ৭ম বেতন কমিশনে এই ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭, যা ইউনিয়নগুলির দাবি ৩.৬৮-এর তুলনায় কম ছিল। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে ১৮,০০০ টাকা মূল বেতনের একজন কর্মচারীর বেতন ২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরে ৫১,৪৮০ টাকায় উন্নীত হতে পারে। ইউনিয়নগুলি মনে করে যে মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এই বৃদ্ধি প্রয়োজন।
২. ন্যূনতম মূল বেতন বৃদ্ধি
ইউনিয়নগুলি ন্যূনতম মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে ২৬,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকায় উন্নীত করার দাবি জানিয়েছে। মূল্যস্ফীতি, বাজারের ব্যয় এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে এই বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে তারা মনে করে। অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের (AITUC) সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কৌর বলেছেন, “এক দশক আগের তুলনায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।” এই দাবি ৮ম বেতন কমিশনের একটি মূল আলোচ্য বিষয় হবে।
৩. মহার্ঘ ভাতা (DA) এবং অন্তর্বর্তী স্বস্তি
কর্মচারী ইউনিয়নগুলি মহার্ঘ ভাতার (DA) নিয়মিত সংশোধন এবং ৮ম বেতন কমিশন বাস্তবায়নের আগে ২০% অন্তর্বর্তী স্বস্তি (Interim Relief) প্রদানের দাবি জানিয়েছে। ২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ১৮ মাসের জন্য DA এবং DR (Dearness Relief) স্থগিত রাখা হয়েছিল, যার বকেয়া এখনও পরিশোধ করা হয়নি। ইউনিয়নগুলি এই বকেয়া পরিশোধের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এছাড়া, নতুন বেতন কাঠামোর সঙ্গে DA পুনরায় শূন্যে রিসেট করার প্রস্তাবও রয়েছে।
৪. পেনশন সুবিধার সংশোধন
পেনশনভোগীদের জন্য ন্যূনতম পেনশন ৯,০০০ টাকা থেকে ২২,৫০০ থেকে ২৫,২০০ টাকায় বৃদ্ধির দাবি উঠেছে। ইউনিয়নগুলি পুরনো পেনশন স্কিম (OPS) পুনর্বহালের দাবিও জানিয়েছে, যা ২০০৪ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। NC-JCM-এর সদস্য সি. শ্রীকুমার বলেছেন, “লিভিং পেনশনের ধারণাটি পরিষ্কার করা উচিত।” পেনশন সংশোধনের এই দাবি পেনশনভোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ।
৫. মডিফাইড অ্যাসিওর্ড ক্যারিয়ার প্রোগ্রেশন (MACP) সংস্কার
ইউনিয়নগুলি মডিফাইড অ্যাসিওর্ড ক্যারিয়ার প্রোগ্রেশন (MACP) স্কিমে সংস্কারের দাবি জানিয়েছে, যাতে কর্মচারীদের কর্মজীবনে কমপক্ষে পাঁচটি প্রমোশন নিশ্চিত করা যায়। বর্তমানে, MACP-এর অধীনে ১০, ২০, এবং ৩০ বছরে তিনটি আর্থিক উন্নতি প্রদান করা হয়। ইউনিয়নগুলি এই স্কিমকে আরও নমনীয় এবং কর্মচারী-বান্ধব করার জন্য সংশোধনের দাবি জানিয়েছে।
অন্যান্য দাবি ও প্রভাব
এই শীর্ষ দাবিগুলি ছাড়াও, ইউনিয়নগুলি চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়মিতকরণ, সরকারি বিভাগে আউটসোর্সিং বন্ধ, এবং সহানুভূতিশীল নিয়োগের উপর ৫% সীমা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। ৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশগুলি বাস্তবায়িত হলে এটি অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। বিশেষজ্ঞ ডি.কে. শ্রীবাস্তব বলেছেন, “বেতন এবং পেনশন সংশোধন সাধারণত রাজস্ব ব্যয়ে বড় বৃদ্ধি ঘটায়।” ২০১৬-১৭ সালে ৭ম বেতন কমিশনের ফলে রাজস্ব ব্যয় ৯.৯% বৃদ্ধি পেয়েছিল।
৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশগুলি ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ঘোষণা করা হতে পারে। এই কমিশন কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য এই কমিশন আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করার একটি বড় সুযোগ।