অষ্টম বেতন কমিশনে রাজ্যভিত্তিক প্রভাব, কারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন?

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন (8th Pay Commission) ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে, যা প্রায় ৫০ লক্ষ কর্মচারী…

State-Wise Impact of 8th Pay Commission: Which States Benefit Most from Salary Hikes?

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন (8th Pay Commission) ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে, যা প্রায় ৫০ লক্ষ কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীর জন্য বেতন ও পেনশন বৃদ্ধির নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। এই কমিশনের ঘোষণা রাজ্যভিত্তিক প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে যেসব রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীর সংখ্যা বেশি। ন্যাশনাল কাউন্সিল–জয়েন্ট কনসালটেটিভ মেশিনারি (এনসি-জেসিএম) ইতিমধ্যেই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর, ন্যূনতম মজুরি, ভাতা এবং পেনশন সুবিধার উপর একটি সাধারণ স্মারকলিপি তৈরির কাজ শুরু করেছে। এই প্রতিবেদনে আমরা দেখব কোন কোন রাজ্য এই বেতন বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।

অষ্টম বেতন কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.২৮ থেকে ২.৮৬ এর মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সপ্তম বেতন কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭, যার ফলে ন্যূনতম মূল বেতন ৭,০০০ টাকা থেকে ১৮,০০০ টাকায় উন্নীত হয়েছিল। অষ্টম বেতন কমিশনের ফলে ন্যূনতম মূল বেতন ৪১,০০০ থেকে ৫১,৪৮০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এই বৃদ্ধি মহার্ঘ ভাতা (ডিএ), গৃহভাড়া ভাতা (এইচআরএ), এবং পরিবহন ভাতা সহ মোট বেতনকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলবে। পেনশনভোগীদের জন্যও ন্যূনতম পেনশন ৯,০০০ টাকা থেকে ২৫,৭৪০ টাকায় উন্নীত হতে পারে।

   

রাজ্যভিত্তিক প্রভাবের দিকে তাকালে, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলি সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। দিল্লিতে প্রায় ৪ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী রয়েছেন, যারা এই বেতন বৃদ্ধির ফলে উপকৃত হবেন। উত্তর প্রদেশে, যেখানে বৃহৎ সংখ্যক কেন্দ্রীয় সরকারি অফিস, রেলওয়ে, এবং প্রতিরক্ষা কর্মী রয়েছেন, সেখানে প্রায় ৮ লক্ষ কর্মচারী এবং পেনশনভোগী এই সুবিধা পাবেন। মহারাষ্ট্রে, বিশেষ করে মুম্বাই এবং পুণেতে, পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিংস (পিএসইউ) এবং ব্যাঙ্কিং সেক্টরের কর্মচারীরা বেতন সংশোধনের ফলে উপকৃত হবেন। পশ্চিমবঙ্গে, কলকাতা এবং আশেপাশের এলাকায় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ, যারা এই বেতন বৃদ্ধির ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারবেন।

অন্যান্য রাজ্য যেমন তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, এবং গুজরাটও উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হবে। তামিলনাড়ুর চেন্নাই এবং কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে কেন্দ্রীয় সরকারি অফিস এবং পিএসইউ-এর বড় উপস্থিতির কারণে এই রাজ্যগুলিতে বেতন বৃদ্ধির প্রভাব ব্যাপক হবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি, যেমন আসাম এবং মেঘালয়, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, সেখানেও বেতন বৃদ্ধি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উদাহরণস্বরূপ, আসামে প্রায় ২ লক্ষ কর্মচারী এবং পেনশনভোগী এই সুবিধা পাবেন।

Advertisements

অষ্টম বেতন কমিশন শুধু বেতন বৃদ্ধির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি ভাতা সংশোধন, পেনশন সুবিধা বৃদ্ধি, এবং কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে। বর্তমানে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মূল বেতনের ৫৫%। অষ্টম বেতন কমিশন কার্যকর হলে ডিএ শূন্যে নেমে আসবে এবং নতুন বেতনের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হবে। গৃহভাড়া ভাতা এবং পরিবহন ভাতাও নতুন বেতনের ভিত্তিতে পুনঃনির্ধারিত হবে। এছাড়া, মডিফায়েড অ্যাসিওরড ক্যারিয়ার প্রোগ্রেশন (এমএসিপি) স্কিমের প্রস্তাবিত সংস্কার কর্মচারীদের কর্মজীবনে কমপক্ষে পাঁচটি প্রমোশন নিশ্চিত করবে।

এই বেতন বৃদ্ধি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কর্মচারীদের ব্যয় ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে, যা স্থানীয় বাজার এবং খুচরা খাতকে উৎসাহিত করবে। দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, এবং মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতে এই প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় হবে। তবে, কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাজেটে অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য কোনও নির্দিষ্ট বরাদ্দের উল্লেখ না থাকায় বাস্তবায়নে বিলম্ব হতে পারে। তবে, সরকার সাধারণত বিলম্বের ক্ষেত্রে বকেয়া প্রদান করে, যা কর্মচারীদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে দেয়।

শ্যামল দাসের মতো নিম্ন বিভাগের ক্লার্করা, যাঁরা কোচবিহারে কাজ করেন, এই বেতন বৃদ্ধির ফলে তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারবেন। শ্যামল বলেন, “এই বেতন বৃদ্ধি আমার পরিবারের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।” অষ্টম বেতন কমিশন শুধু আর্থিক সুবিধাই নয়, সরকারি কর্মচারীদের মনোবল বাড়ানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।