সরকারি কর্মীদের জন্য আসছে ৮ম বেতন কমিশনের বিশাল সুবিধা

কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য সুখবর! অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission ) বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা আগামী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে…

8th Pay Commission Salary Hike

কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য সুখবর! অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission ) বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা আগামী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কমিশনের ফলে প্রায় ৪৭.৮৫ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৮.৬২ লক্ষ পেনশনভোগীর বেতন ও পেনশন বৃদ্ধি পাবে। শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারের কর্মচারীরাও এই কমিশনের সুবিধা পেতে পারেন। সম্প্রতি, অর্থ মন্ত্রণালয় ৮ম বেতন কমিশনের জন্য ৩৫টি পদে নিয়োগের ঘোষণা করেছে, যা এই প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই প্রতিবেদনে আমরা ৮ম বেতন কমিশনের মূল উপাদান, বেতন গণনার পদ্ধতি এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

Advertisements

৮ম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission ) জন্য নিয়োগ ঘোষণা

গত ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি সার্কুলার জারি করে জানিয়েছে যে, ৮ম বেতন কমিশনের জন্য ৩৫টি পদে নিয়োগ করা হবে। এই পদগুলো ডেপুটেশনের ভিত্তিতে পূরণ করা হবে এবং এই নিয়োগ কমিশন গঠনের তারিখ থেকে এর কার্যক্রম সমাপ্তি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, “৮ম সিপিসির জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিওপিটি)-এর নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে তাদের কর্মকর্তা ও কর্মীদের মধ্যে এই নিয়োগের তথ্য প্রচার করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।”

   

আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট ফরম্যাটে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে এবং সঙ্গে পাঁচ বছরের এপিএআর (অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স অ্যাপ্রাইজাল রিপোর্ট), ভিজিল্যান্স ক্লিয়ারেন্সসহ প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র পাঠাতে হবে নিম্নলিখিত ঠিকানায়:
রঞ্জিত কুমার ঝা, আন্ডার সেক্রেটারি (অ্যাডমিন ১), ডিপার্টমেন্ট অফ এক্সপেন্ডিচার, মিনিস্ট্রি অফ ফাইনান্স, রুম নং ২২৫-ই, নর্থ ব্লক, নিউ দিল্লি-১১০০০১।

৮ম বেতন কমিশনের মূল উপাদান

ক্লিয়ারট্যাক্সের মতে, ৮ম বেতন কমিশনে নিম্নলিখিত মূল উপাদানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে:
১. ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ও মূল বেতন: ৮ম সিপিসিতে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর, যা মূল বেতনের গুণক হিসেবে কাজ করে, বর্তমান ২.৫৭ থেকে বেড়ে প্রায় ২.৮৫-এ পৌঁছতে পারে। এর ফলে সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের সর্বনিম্ন মূল বেতন বৃদ্ধি পাবে।
২. ভাতা: মহার্ঘ ভাতা (ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স বা ডিএ), যা জীবনযাত্রার ব্যয় সমন্বয় হিসেবে বিবেচিত হয়, সম্প্রতি ২% বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫%-এ পৌঁছেছে। ৮ম সিপিসি কার্যকর হলে এই ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত হবে। এছাড়া, গৃহভাড়া ভাতা (এইচআরএ) এবং ভ্রমণ ভাতা (টিএ) নতুন মূল বেতনের ভিত্তিতে পুনঃগণনা করা হবে।
৩. পেনশন: পেনশনের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং অবসরোত্তর সুবিধার উন্নতি এই কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য। পেনশনের সমতা এবং সময়মতো পেনশন বিতরণের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে।

৮ম বেতন কমিশনের বেতন গণনা

৮ম সিপিসির অধীনে বেতন গণনার জন্য মূল বেতন ম্যাট্রিক্স, মহার্ঘ ভাতা, গৃহভাড়া ভাতা এবং ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বিবেচনা করা হবে। যদিও ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি, তবে এটি ২.৮৫-এর কাছাকাছি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে, ৭ম বেতন কমিশনের অধীনে ডিএ ৫০% ছাড়িয়ে যাওয়ায়, এইচআরএ হার সংশোধন করে এক্স শ্রেণির শহরে ২৭%, ওয়াই শ্রেণির শহরে ১৮% এবং জেড শ্রেণির শহরে ৯% করা হয়েছে। ডিএ ১০০% ছাড়িয়ে গেলে এইচআরএ যথাক্রমে ৩০%, ২০% এবং ১০%-এ উন্নীত হবে।

উদাহরণের মাধ্যমে বেতন গণনা:

ধরা যাক, একজন সরকারি কর্মচারীর মূল বেতন ৫০,০০০ টাকা এবং তিনি দিল্লিতে কর্মরত। দিল্লি মেট্রো শহর হওয়ায় এইচআরএ হবে ৩০%।
মহার্ঘ ভাতা (ডিএ): ০ (৮ম সিপিসিতে ডিএ মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত হবে)

গৃহভাড়া ভাতা (এইচআরএ): ৫০,০০০ টাকার ৩০% = ১৫,০০০ টাকা

Advertisements

গ্রস বেতন গণনা: (৫০,০০০ × ২.৮৫) + ০ + ১৫,০০০ = ১,৫৭,৫০০ টাকা (আনুমানিক)

এটি একটি উদাহরণ মাত্র। প্রকৃত বেতন নির্ভর করবে সরকারের চূড়ান্ত ঘোষণার উপর।

৮ম বেতন কমিশনের সময়সীমা

৮ম বেতন কমিশন পূর্ববর্তী কমিশনগুলোর মতোই প্রায় ১০ বছরের ব্যবধানে কার্যকর হবে। ৭ম বেতন কমিশন ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছিল। সেই হিসেবে, ৮ম সিপিসি ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার ইতিমধ্যে জানিয়েছে যে, ২০২৫ সালে এই কমিশনের সুপারিশগুলো বিবেচনা করা হবে।

সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রভাব

৮ম বেতন কমিশন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। বেতন ও পেনশন বৃদ্ধির পাশাপাশি, এটি জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে, চূড়ান্ত ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর এবং অন্যান্য ভাতার বিষয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা এই কমিশনের মাধ্যমে আর্থিক সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতার একটি নতুন দিগন্তের প্রত্যাশা করছেন। আগামী মাসগুলোতে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হবে, যা এই প্রক্রিয়ার গতিপথ নির্ধারণ করবে।