কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর। কোটাক ইনস্টিটিউশনাল ইক্যুইটিজের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ৮ম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের প্রকৃত বেতন বৃদ্ধি হতে পারে প্রায় ১৩ শতাংশ। তবে এই বর্ধিত বেতন হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা এখনই নেই। রিপোর্ট অনুযায়ী, ৮ম বেতন কমিশনের রিপোর্ট ২০২৬ সালের শেষ অথবা ২০২৭ সালের শুরুতে কার্যকর হতে পারে।
বেতন বাড়বে, কিন্তু অপেক্ষা দীর্ঘ:
কেন্দ্রীয় সরকার জানুয়ারি ২০২৫-এ ৮ম বেতন কমিশন গঠনের অনুমোদন দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কমিশনের টার্মস অফ রেফারেন্স (ToR) নির্ধারিত হয়নি, এমনকি সদস্যদের নামও ঘোষণা করা হয়নি। অর্থাৎ, বাস্তবায়নের দিক থেকে এখনও অনেক পথ বাকি।
কোটাকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী ৬ষ্ঠ এবং ৭ম বেতন কমিশন গঠনের পর রিপোর্ট দিতে সময় নিয়েছিল প্রায় দেড় বছর। এরপর মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেতে এবং তা বাস্তবায়িত হতে আরও ৩ থেকে ৯ মাস সময় লেগেছিল। সেই হিসেবে এবারও পুরো প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে কমপক্ষে ১৮ থেকে ২৪ মাস সময় লাগবে।
নূন্যতম বেতন ১৮,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা:
এই কমিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হতে চলেছে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের পরিমার্জন। ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর হল একটি গুণনীয়ক, যা বেতন কাঠামোকে সংশোধনের জন্য ব্যবহৃত হয়। ৮ম কমিশনে এই ফ্যাক্টর ১.৮ নির্ধারিত হতে পারে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। এর ফলে ন্যূনতম মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০,০০০ টাকা হতে পারে।
কারা কতটা উপকৃত হবেন?
এই কমিশনের প্রভাব পড়বে প্রায় ৩৩ লক্ষ কেন্দ্রীয় কর্মচারীর উপর। এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই গ্রেড সি স্তরের কর্মী, যারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও, পেনশনভোগী প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষ এই কমিশনের আওতায় আসবেন।
অর্থনীতিতে প্রভাব: ব্যয়ের চাপ এবং চাহিদা বৃদ্ধির আশা:
কোটাকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৮ম বেতন কমিশনের কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে দেশের মোট জিডিপির ০.৬ থেকে ০.৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এই ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২.৪ থেকে ৩.২ লক্ষ কোটি টাকা।
কিন্তু এই ব্যয়ই একমাত্র দিক নয়। অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোটাক জানিয়েছে, বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধির ফলে অস্থায়ীভাবে ভোগব্যয়ের হার বেড়ে যায়। বিশেষ করে অটোমোবাইল, কনজিউমার স্ট্যাপলস, ইলেকট্রনিক্স, এফএমসিজি প্রভৃতি খাতে চাহিদা বাড়ে।
৭ম বেতন কমিশনের সময়, RBI-এর তথ্য অনুযায়ী, One Rank One Pension (OROP) স্কিম এবং কমিশনের বাস্তবায়নের ফলে FY17-এ GDP-তে প্রায় ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যোগ হয়েছিল।
সঞ্চয়ে প্রভাব: ব্যাঙ্ক এবং শেয়ার বাজার লাভবান:
বেতন বৃদ্ধির ফলে শুধুমাত্র ব্যয়ের দিকেই প্রভাব পড়ে না, বাড়ে সঞ্চয়ও। কোটাকের মতে, ৮ম কমিশনের ফলে প্রায় ১ থেকে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকার অতিরিক্ত সঞ্চয় হতে পারে, যার একাংশ ব্যাঙ্ক ডিপোজিট এবং শেয়ার বাজারে প্রবাহিত হতে পারে।
‘স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়া হয়েছে’: অর্থ মন্ত্রকের ব্যাখ্যা:
অন্যদিকে, ২১ জুলাই লোকসভায় এক লিখিত জবাবে অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী জানিয়েছেন, ৮ম কমিশনের প্রক্রিয়াকে দ্রুত সম্পন্ন করতে কেন্দ্র ইতিমধ্যেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, কর্মীবর্গ ও প্রশিক্ষণ বিভাগ এবং রাজ্য সরকারের কাছ থেকে মতামত আহ্বান করেছে।
তিনি বলেন, “সুপারিশ পাওয়ার পরে, সেগুলি সরকার গ্রহণ করলে তবেই বাস্তবায়ন শুরু হবে।”
প্রতিটি ১০ বছরে একবার বেতন পুনর্নির্ধারণ:
প্রসঙ্গত, প্রতি দশ বছরে একবার কেন্দ্রীয় সরকার তার কর্মচারীদের বেতন কাঠামো ও পেনশন কাঠামোকে পুনঃবিবেচনা করে। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতেই এই কমিশন গঠন করে সরকার।
২০২৫-এর জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভার তরফে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, এখনো অনেক কাজ বাকি। তবে আশা করা হচ্ছে, একবার এই কমিশন বাস্তবায়িত হলে লক্ষ লক্ষ কর্মচারী ও পেনশনভোগী সরাসরি উপকৃত হবেন।
সংক্ষেপে মূল দিকগুলি:
প্রস্তাবিত ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর: ১.৮
ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধি: ১৮,০০০ → ৩০,০০০ টাকা
প্রতিফলিত কর্মী সংখ্যা: ৩.৩ মিলিয়ন
প্রস্তাবিত খরচ: জিডিপির ০.৬–০.৮% (~২.৪–৩.২ লক্ষ কোটি টাকা)
বাস্তবায়ন সম্ভাব্য সময়: ২০২৬ সালের শেষ অথবা ২০২৭ সালের শুরু