কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের জন্য একটি বড় সুখবর এসেছে। ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি ইউনিয়ন ক্যাবিনেট অষ্টম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন (8th Pay Commission) অনুমোদন করেছে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এই কমিশন প্রায় ৫০ লাখ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লাখ পেনশনভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে চলেছে। বিশেষ করে গ্রুপ বি এবং গ্রুপ সি কর্মচারীরা, যারা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীবাহিনীর একটি বড় অংশ, তাদের জন্য এই বেতন কাঠামোর পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। নতুন ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর, সংশোধিত ভাতা এবং মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) রিসেটের মাধ্যমে এই কর্মচারীদের হাতে আসা বেতন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, এই বেতন বৃদ্ধির প্রকৃত প্রভাব নির্ভর করবে চূড়ান্ত ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর। এই প্রতিবেদনে আমরা গ্রুপ বি এবং গ্রুপ সি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং এর সাথে জড়িত চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণ করব।
ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর এবং বেতন বৃদ্ধির সম্ভাবনা
অষ্টম বেতন কমিশন ১.৮৩ থেকে ২.৮৬ এর মধ্যে একটি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর প্রবর্তন করতে পারে, যা বর্তমান মূল বেতনের উপর প্রয়োগ করা হবে। এটি সপ্তম সিপিসি-র ২.৫৭ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের তুলনায় একটি উন্নতি, যা ২০১৬ সালে ন্যূনতম মূল বেতন ৭,০০০ টাকা থেকে ১৮,০০০ টাকায় উন্নীত করেছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, বেতন ২০-৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, এবং কিছু বিশ্লেষণ, যেমন অ্যাম্বিট ক্যাপিটালের মতে, কার্যকরভাবে হাতে আসা বেতনে ৩০-৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি হতে পারে।
গ্রুপ সি কর্মচারী: লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক, কনস্টেবল, জুনিয়র ক্লার্কের মতো পদ (লেভেল ১-৫) এই শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা আনবে। উদাহরণস্বরূপ:
- লেভেল ১ (যেমন, পিয়ন, অ্যাটেনডেন্ট): বর্তমান মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা ১.৮৩ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরে ৩২,৯৪০ টাকা বা ২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরে ৫১,৪৮০ টাকায় উন্নীত হতে পারে। এটি ১৪,৯৪০ থেকে ৩৩,৪৮০ টাকা বৃদ্ধি।
- লেভেল ২ (যেমন, লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক): বর্তমান মূল বেতন ১৯,৯০০ টাকা ৩৬,৪৬৭ টাকা বা ৫৬,৯১৪ টাকায় বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ১৬,৫৬৭ থেকে ৩৭,০১৪ টাকা বৃদ্ধি।
- লেভেল ৩ (যেমন, কনস্টেবল, দক্ষ কর্মী): বর্তমান মূল বেতন ২১,৭০০ টাকা ৩৯,৭১১ টাকা বা ৬২,০৬২ টাকায় বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ১৮,০১১ থেকে ৪০,৩৬২ টাকা বৃদ্ধি।
- লেভেল ৪ (যেমন, গ্রেড ডি স্টেনোগ্রাফার, জুনিয়র ক্লার্ক): বর্তমান মূল বেতন ২৫,৫০০ টাকা ৪৬,৬৬৫ টাকা বা ৭২,৯৩০ টাকায় বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ২১,১৬৫ থেকে ৪৭,৪৩০ টাকা বৃদ্ধি।
- লেভেল ৫ (যেমন, সিনিয়র ক্লার্ক, টেকনিক্যাল স্টাফ): বর্তমান মূল বেতন ২৯,২০০ টাকা ৫৩,৪৩৬ টাকা বা ৮৩,৫১২ টাকায় বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ২৪,২৩৬ থেকে ৫৪,৩১২ টাকা বৃদ্ধি।
- গ্রুপ বি কর্মচারী: এই শ্রেণির কর্মচারীরা, যেমন অ্যাকাউন্টস অফিসার বা ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট (লেভেল ৬-৯), তুলনামূলকভাবে কম বৃদ্ধি পেতে পারেন, তবে উচ্চ মূল বেতনের কারণে তাদের বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হবে:
- লেভেল ৬ (যেমন, অ্যাসিস্ট্যান্ট, জুনিয়র অফিসার): বর্তমান মূল বেতন ৩৫,৪০০ টাকা ৬৪,৭৮২ টাকা বা ১,০১,২৪৪ টাকায় বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ২৯,৩৮২ থেকে ৬৫,৮৪৪ টাকা বৃদ্ধি।
- লেভেল ৭ (যেমন, সেকশন অফিসার): বর্তমান মূল বেতন ৪৪,৯০০ টাকা ৮২,১৬৭ টাকা বা ১,২৮,৪১৪ টাকায় বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ৩৭,২৬৭ থেকে ৮৩,৫১৪ টাকা বৃদ্ধি।
- লেভেল ৮ (যেমন, সিনিয়র অফিসার): বর্তমান মূল বেতন ৪৭,৬০০ টাকা ৮৭,১০৮ টাকা বা ১,৩৬,১৩৬ টাকায় বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ৩৯,৫০৮ থেকে ৮৮,৫৩৬ টাকা বৃদ্ধি।
ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা
অষ্টম সিপিসি শুধু মূল বেতন বাড়াবে না, বরং হাউস রেন্ট অ্যালাউন্স (এইচআরএ), ট্রাভেল অ্যালাউন্স (টিএ), এবং মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) পুনর্বিন্যাস করবে। বর্তমানে ডিএ ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা অষ্টম সিপিসি-র বাস্তবায়নের সময় রিসেট হয়ে ০ শতাংশে নামতে পারে। এটি প্রাথমিকভাবে হাতে আসা বেতনে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে, তবে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের বৃদ্ধি এই ক্ষতি পূরণ করবে। এইচআরএ, যা বর্তমানে ২৭ শতাংশ (শহর), ১৮ শতাংশ (অর্ধ-শহর), এবং ৯ শতাংশ (গ্রামীণ), তা ৩০-৩৫ শতাংশে বাড়তে পারে, যা গ্রুপ বি এবং সি কর্মচারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
সম্ভাব্য প্রভাব
গ্রুপ সি কর্মচারীদের জন্য, যাদের বেতন তুলনামূলকভাবে কম এবং খরচের চাপ বেশি, এই বেতন বৃদ্ধি জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন লেভেল ১ কর্মচারীর মোট বেতন (মূল বেতন + ভাতা) বর্তমানে প্রায় ৩০,০০০ টাকা, যা ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬ হলে ৬০,০০০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। গ্রুপ বি কর্মচারীদের জন্য, যাদের বেতন বেশি, বৃদ্ধির পরিমাণও বেশি হবে, যা তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়াবে। এই বেতন বৃদ্ধি ভারতের অর্থনীতিতে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়াতে পারে, কারণ সরকারি কর্মচারীরা তাদের বাড়তি আয় ব্যয় করবেন।
চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
অষ্টম সিপিসি-র বাস্তবায়নের পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ নির্ধারণ করবে। দ্বিতীয়ত, ডিএ রিসেট হওয়ায় প্রাথমিকভাবে হাতে আসা বেতনে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, সরকারি বাজেটের উপর অতিরিক্ত চাপ এই বেতন বৃদ্ধির বাস্তবায়নকে জটিল করে তুলতে পারে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, গ্রুপ বি এবং সি কর্মচারীদের জন্য ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫৭-এর নিচে থাকলে বেতন বৃদ্ধির প্রভাব সীমিত হবে। তবে, সরকার যদি ২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর গ্রহণ করে, তবে এটি কর্মচারীদের জন্য একটি বড় আর্থিক সুবিধা হবে।
অষ্টম বেতন কমিশন গ্রুপ বি এবং সি কর্মচারীদের জন্য একটি নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে। বেতন বৃদ্ধি, ভাতার সংশোধন এবং ডিএ-র পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। তবে, এই প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য সরকারকে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। গ্রুপ বি এবং সি কর্মচারীরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন, কীভাবে এই কমিশন তাদের আর্থিক ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করবে। এই পরিবর্তন ভারতের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তবে এর সফলতা নির্ভর করবে কার্যকর বাস্তবায়ন এবং নীতিগত স্থিতিশীলতার উপর।