এক কোটিরও বেশি কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারী ও পেনশনভোগীর জন্য এক আশার আলো দেখা যাচ্ছে। ৮ম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) গঠনের প্রক্রিয়া চললেও এখনও ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ (ToR) বা নির্দেশিকা চূড়ান্ত হয়নি, যা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের মধ্যে। অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী রাজ্যসভায় লিখিত বিবৃতিতে জানান, সরকার বিভিন্ন অংশীজনের (stakeholders) মতামত গ্রহণ করেছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তি “যথাসময়ে” প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, “৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই আসবে, সেই সময়সীমা নির্দেশিকা জারির পর নির্ধারিত হবে।”
গঠনের প্রক্রিয়ায় বিলম্ব:
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ৮ম বেতন কমিশনের গঠনের কথা ঘোষণা করা হলেও, গত ছয় মাসে তেমন কোনও দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে চলমান মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে। অর্থ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রক্রিয়াটি দ্রুত করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, কর্মীবিভাগ (DoPT) ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
মন্ত্রকের বক্তব্য অনুযায়ী, কমিশন গঠনের আগে সরকার প্রথমে টার্মস অব রেফারেন্স নির্ধারণ করবে, যা কমিশনের কাজের পরিধি নির্ধারণ করবে। ToR অনুমোদনের পর কমিশনের চেয়ারপারসন ও সদস্যদের নিয়োগ করা হবে।
পেছাচ্ছে টাইমলাইন:
সাধারণত প্রতি দশ বছর অন্তর সরকার কর্মচারীদের মূল বেতন ও পেনশন পুনঃনির্ধারণ করে থাকে। ৭ম বেতন কমিশন ২০১৬ সালে কার্যকর হয় (জনুয়ারি ১, ২০১৬ থেকে)। সেই হিসেবে ৮ম বেতন কমিশন ২০২৪-২৫ সালে কার্যকর হওয়ার কথা।
কিন্তু এইবার দেখা যাচ্ছে, ঘোষণার পরে প্রায় সাত মাস কেটে গেলেও সরকার এখনও কমিশনের আনুষ্ঠানিক গঠন করেনি।
কী বলছে কর্মী মহল?
সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন ও ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে দ্রুত কমিশন গঠন ও ToR প্রকাশের। তারা মনে করছে, সরকার যদি আরও বিলম্ব করে, তাহলে কর্মচারীরা বঞ্চিত হবেন ন্যায্য বেতন বৃদ্ধির থেকে।
একজন সিনিয়র কেন্দ্রীয় কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা জানি যে সরকারের আর্থিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বাড়ছে, তাতে নতুন বেতন কাঠামো ছাড়া আর চলা সম্ভব নয়।”
বেতন বৃদ্ধি কবে থেকে কার্যকর?
যদিও কমিশন এখনও গঠিত হয়নি, তবুও প্রত্যাশা রয়েছে যে ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হবে, যেমনটি ৭ম বেতন কমিশনের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছিল।
সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ToR প্রকাশের পর কমিশনের হাতে অন্তত ১২-১৮ মাস সময় লাগবে সুপারিশ জমা দিতে। তারপরেই তা কার্যকর হবে কেন্দ্রের অনুমোদনের পর।
আর্থিক প্রভাব:
সরকারি কর্মীদের বেতন ও পেনশন বৃদ্ধির ফলে সরকারের খরচ বাড়বে অনেকটা। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, এতে কর্মচারীদের মধ্যে ভোক্তা ব্যয় বাড়বে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশে “ডিয়ারনেস এলাউন্স” (DA) যুক্ত করে মূল বেতন বাড়ানোর বিষয়টি আরও কার্যকরভাবে বিবেচনা করা হতে পারে।
পেনশনভোগীদের প্রত্যাশা:
সরকারি পেনশনভোগীদের মধ্যেও এই কমিশন নিয়ে যথেষ্ট প্রত্যাশা রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, স্বাস্থ্যসেবা খরচ, ঔষধপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে পেনশনের পরিমাণ পুনঃনির্ধারণ একান্ত জরুরি। একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, “৭ম কমিশনের সুপারিশে ভালোই উপকার হয়েছিল। এখন সময় এসেছে আবার নতুনভাবে চিন্তা করার।”৮ম বেতন কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে কেন্দ্র সরকার যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, ততই স্বস্তি পাবেন কোটি কোটি কর্মচারী ও পেনশনভোগী।
যদিও সরকার আশ্বাস দিয়েছে যে প্রক্রিয়া চলছে এবং যথাসময়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পাবে, তবে বাস্তবিক অগ্রগতি না থাকায় কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার কবে ToR প্রকাশ করে ও কমিশন গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।
পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যেই যদি কাজ শুরু না হয়, তবে ২০২৬ সালের জানুয়ারির সময়সীমা কার্যকর করা কঠিন হয়ে উঠবে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
৮ম বেতন কমিশনের কার্যকারিতা শুধু কর্মচারীদের জন্য নয়, বরং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো কমিশন গঠনের মধ্যেই রয়েছে কোটি কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ আশা ও ভরসা।