৮ম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হলেও, এখনো এটি গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারী ও পেনশনপ্রাপকদের মধ্যে এক কোটিরও বেশি মানুষ এই কমিশনের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন। আশা করা হচ্ছে, নতুন কমিশন কর্মচারীদের বেতন, পেনশন ও ভাতা পুনর্নির্ধারণ করবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—বর্তমানে আলোচিত ২.৮৬ গুণ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর কি ভারতের বর্তমান জীবনযাত্রার খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে?
ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর: কতটা বৃদ্ধি?
প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ৮ম বেতন কমিশন ২.২৮ থেকে ২.৮৬-এর মধ্যে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর নির্ধারণ করতে পারে। ৭ম বেতন কমিশনের সময় এই ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭। এবার যদি সর্বোচ্চ ২.৮৬ গুণ বৃদ্ধি হয়, তবে একজন কর্মচারীর বেসিক বেতন ২০,০০০ টাকা থেকে বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৫৭,২০০ টাকায়। এটি ১৮৬ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতীক।
তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, শুধু বেতন বৃদ্ধি যথেষ্ট নয়, সেই বেতনকে ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত ও টেকসই করতে হবে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে ক্রমাগত বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে।
ইতিহাস কী বলছে?
প্রতিটি বেতন কমিশন গড়ে প্রতি ১০ বছরে একবার করে গঠিত হয়। ২০০৬ সালে ৬ষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশে ন্যূনতম বেতন ২,৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭,০০০ টাকা করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ৭ম কমিশনে তা আরও বেড়ে হয়েছিল ১৮,০০০ টাকা। এই ধারাবাহিকতায় ৮ম কমিশনের দিকে কর্মচারীদের আশাবাদ অনেক বেশি।
কেন বাড়ছে খরচ?
গত আট বছরে ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, কয়েকটি খাতে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে:
- আবাসন ব্যয়: দিল্লি, জয়পুর, ভোপাল, লখনউ প্রভৃতি শহরে ভাড়াবাড়ির খরচ ৪০-৬০% পর্যন্ত বেড়েছে।
- শিক্ষা খরচ: প্রাইভেট স্কুলগুলির ফি গত ১০ বছরে প্রায় ৮০% বেড়েছে।
- ইন্ধন ও পরিবহণ: পেট্রোলের দাম ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১০০ টাকারও বেশি।
- চিকিৎসা খরচ: CGHS থাকা সত্ত্বেও মাসে ৩,০০০-১০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে।
- খাদ্যদ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি: চাল, গম, তেল, সবজি সহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি।
চণ্ডীগড়ের এক মধ্যস্তর সরকারি কর্মচারী জানান, “আমাদের বাড়তি বেতনের বেশিরভাগটাই বাড়ি ভাড়া আর স্কুল ফিতেই চলে যাবে।”
কবে গঠিত হবে ৮ম কমিশন?
সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও সময়সীমা জানায়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যেই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর, নতুন বেতন কাঠামো, ভাতা ও পেনশনের বিষয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ আসবে। এ ছাড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—কমিশন কি একটি “ইউনিফর্ম ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর” প্রস্তাব করবে? অর্থাৎ, সব স্তরের কর্মচারীদের জন্য একই ফিটমেন্ট রেট থাকলে তা সহজবোধ্য এবং ন্যায্য হবে।
ন্যাশনাল কাউন্সিল–জয়েন্ট কনসালটেটিভ মেশিনারির স্টাফ সাইডের সেক্রেটারি শিব গোপাল মিশ্র NDTV প্রফিট-কে বলেন, “আমরা আশা করছি, ৮ম বেতন কমিশনের টার্মস অফ রেফারেন্স খুব শিগগিরই সরকারের অনুমোদন পাবে।”
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেতন বাড়ানো একমাত্র সমাধান নয়, বরং বেতন কাঠামো এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে তা আগামী এক দশকের জন্য উপযোগী হয়। দেশের অর্থনীতি, মূল্যস্ফীতি, এবং শহরাঞ্চলে বাড়তি জীবনযাত্রার ব্যয় মাথায় রেখে কমিশনের সুপারিশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
৮ম বেতন কমিশনের সিদ্ধান্ত লক্ষ লক্ষ কর্মচারী ও পেনশনপ্রাপকদের জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি ন্যায়সঙ্গত, ভবিষ্যতমুখী ও বাস্তবসম্মত বেতন কাঠামো প্রয়োজন। এখন শুধু অপেক্ষা, সরকার কবে এই গুরুত্বপূর্ণ কমিশনের গঠন ও সুপারিশ চূড়ান্ত করে ঘোষণা করবে। তখনই স্পষ্ট হবে—নতুন বেতন কাঠামো কতটা বাস্তবসম্মত ও সহায়ক।