অবশেষে বহু প্রতীক্ষার পর কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর। ৮ম পে কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি এক রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে, প্রায় ৩০-৩৪ শতাংশ বেতন ও পেনশন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে এই কমিশনের সুপারিশে। ব্রোকারেজ ফার্ম অ্যাম্বিট ক্যাপিটালের (Ambit Capital) গবেষণা রিপোর্টে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রসঙ্গত, ৭ম পে কমিশন (২০১৬) থেকে ৮ম পে কমিশনের (২০২৬) মধ্যে দীর্ঘ ১০ বছরের ব্যবধান। ৭ম কমিশনের সময় বেতন বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ, যা ১৯৭০ সালের পর সবচেয়ে কম। এবার ধারণা করা হচ্ছে, ৮ম কমিশনের সুপারিশে বেতন বৃদ্ধির হার অতীতের তুলনায় অনেক বেশি হবে।
কাদের উপর প্রভাব পড়বে?
অ্যাম্বিটের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৪৪ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও প্রায় ৬৮ লক্ষ পেনশনভোগী এই বেতন বাড়ার প্রত্যক্ষ উপকারভোগী হবেন। অর্থাৎ, মোট প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে এই নতুন পে কমিশন।
ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের (Fitment Factor) ভূমিকা:
বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ধরা হয় ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরকে। এটি মূলত বেসিক পে (Basic Pay) নির্ধারণে সহায়তা করে। ৭ম পে কমিশনে এই ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭, যার ফলে ন্যূনতম বেসিক পে ৭ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১৮ হাজার টাকা হয়েছিল।
তবে এবার ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ১.৮৩ থেকে ২.৪৬ এর মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ৭ম কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫৭ হলেও মোট বেতন ২.৫৭ গুণ বৃদ্ধি পায়নি। বরং কেবল বেসিক পেতেই এই বৃদ্ধির প্রভাব দেখা যায়।
বেতন কাঠামোর বিবরণ:
সরকারি চাকরির বেতন গড়ে কয়েকটি অংশ নিয়ে গঠিত হয় — বেসিক পে, ডিএ (Dearness Allowance), এইচআরএ (House Rent Allowance), টি.এ (Transport Allowance) এবং অন্যান্য ভাতা। এর মধ্যে ডিএ মূলত মুদ্রাস্ফীতি অনুযায়ী বছরে দুইবার পর্যালোচনা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, বেসিক পের অংশ হ্রাস পেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে, কারণ অন্যান্য ভাতা বা অ্যালাউন্সগুলো তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে বেসিক পে ও ডিএ-এর উপর ভিত্তি করে পেনশন হিসাব করা হয়। তবে তাঁরা এইচআরএ বা টি.এ পান না। নতুন পে কমিশন চালু হলে ডিএ পুনরায় শূন্যে সেট করা হয়, যা আগের কমিশনগুলিতেও দেখা গিয়েছে।
কার্যকর হওয়ার সম্ভাব্য সময় ও বিলম্ব:
যদিও ৮ম পে কমিশন কার্যকর হওয়ার আনুমানিক সময় জানুয়ারি ২০২৬ ধরা হয়েছে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য বিলম্বের আশঙ্কা করছেন। উদাহরণস্বরূপ, ৭ম কমিশন ২০১৪ সালে ঘোষণা হলেও কার্যকর হয়েছিল ২০১৬ সালে।
২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্তও ৮ম কমিশনের কোনো চেয়ারম্যান, সদস্য বা কার্যপরিধি (ToR) নির্ধারিত হয়নি। অর্থাৎ, কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু না হলে এই সময়সীমা পিছিয়ে ২০২৬-এর শেষ বা ২০২৭ সালের শুরুতে চলে যেতে পারে। এতে বকেয়া বেতন ও পেনশন সংক্রান্ত জটিলতা বাড়তে পারে।
অর্থনৈতিক চাপে প্রভাব:
সরকারের জন্য এটি একটি বড় আর্থিক চাপের বিষয়। এত বড় আকারে বেতন ও পেনশন বাড়ালে দেশের রাজকোষ ঘাটতি (Fiscal Deficit) আরও বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের আগে এবং বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের খরচের কথা মাথায় রেখে সরকারকে অত্যন্ত সাবধানে এগোতে হবে।
৬ষ্ঠ পে কমিশনে (২০০৬ সালে) প্রায় ৫৪ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি হয়েছিল। আর ৭ম পে কমিশনে এই বৃদ্ধি ছিল মাত্র ১৪.৩ শতাংশ। তাই এবার ৮ম কমিশন পূর্ববর্তী ইতিহাসের উর্দ্ধমুখী ধারা অনুসরণ করে বড়সড় বেতন বৃদ্ধির দিকে যেতে পারে বলে ধারণা।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে এক বিশাল প্রত্যাশার খবর। তবে সময়মতো কমিশন গঠন এবং সুপারিশ বাস্তবায়নের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। যদি কমিশন দ্রুত গঠন না হয়, তাহলে কর্মচারীদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে।
তবে একবার কমিশন কার্যকর হলে, দেশের প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতেও বড়সড় প্রভাব পড়তে পারে, কারণ এই বিশাল জনগোষ্ঠীর বর্ধিত ব্যয় ক্ষমতা সরাসরি বাজার চাহিদা ও ভোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
সবমিলিয়ে, ৮ম পে কমিশন নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। এখন দেখা যাক, সরকার কত দ্রুত এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে।