২০২৬ সালে বেতন কমিশন কার্যকর হওয়ার আগে কি সরকার বকেয়া পরিশোধ করবে?

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য বেতন কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০২৫ সালে ৮ম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) গঠনের ঘোষণা হয়েছে, যা ২০২৬ সালের…

6th vs 7th vs 8th Pay Commission Which Brought the Biggest Salary Hikes for Government Employees?

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য বেতন কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০২৫ সালে ৮ম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) গঠনের ঘোষণা হয়েছে, যা ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এই নতুন বেতন কমিশনের আগমনের আগে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একটি বড় প্রশ্ন উঠেছে—কোভিড-১৯ মহামারীর সময় হিমায়িত ১৮ মাসের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) এবং মহার্ঘ স্বস্তি (ডিআর) বকেয়া কি পরিশোধ করা হবে? এই বকেয়া প্রায় ৪৮.৬৬ লক্ষ কর্মচারী এবং ৬৬.৫৫ লক্ষ পেনশনভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিবেদনে আমরা এই বকেয়ার সম্ভাবনা এবং ৮ম বেতন কমিশনের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ডিএ বকেয়ার পটভূমি
কোভিড-১৯ মহামারীর সময়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত, কেন্দ্রীয় সরকার তিনটি কিস্তিতে ডিএ এবং ডিআর বৃদ্ধি স্থগিত রেখেছিল। এই তিনটি কিস্তি ছিল ৪% (জানুয়ারি ২০২০), ৪% (জুলাই ২০২০), এবং ৩% (জানুয়ারি ২০২১), মোট ১১%। এই স্থগিতকরণের ফলে কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের প্রায় ৩৪,৪০২ কোটি টাকার বকেয়া জমা হয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে সরকার ডিএ পুনরায় শুরু করে এবং ১৭% থেকে ২৮% করা হয়, তবে বকেয়া পরিশোধের কোনো ঘোষণা আসেনি।

   

২০২৫ সালের আগস্টে, সরকার আবারও এই ১৮ মাসের বকেয়া পরিশোধের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে, যার কারণ হিসেবে কোভিড-১৯ এর আর্থিক প্রভাব উল্লেখ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে কর্মচারী সংগঠনগুলি, যেমন ন্যাশনাল কনফেডারেশন অফ সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স, তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের দাবি, এই বকেয়া পরিশোধ করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব, কারণ কর্মচারীরা মহামারীর সময়ও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।

৮ম বেতন কমিশন এবং বকেয়ার সম্ভাবনা
৮ম বেতন কমিশন গঠনের ঘোষণা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে হয়েছে, এবং এটি ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন বেতন কমিশন সাধারণত মূল বেতন এবং ভাতার কাঠামো পুনর্গঠন করে। অতীতের ইতিহাস অনুযায়ী, ৬ষ্ঠ এবং ৭ম বেতন কমিশনের সময় ডিএ মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত করা হয়েছিল, এবং নতুন কমিশনের অধীনে ডিএ গণনা শূন্য থেকে শুরু হয়। তবে, এই ১৮ মাসের বকেয়া একটি পৃথক বিষয়, কারণ এটি ৭ম বেতন কমিশনের অধীনে স্থগিত করা হয়েছিল।

কর্মচারী সংগঠনগুলি আশা করছে যে ৮ম বেতন কমিশনের আগে সরকার এই বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে। তবে, সরকারের সাম্প্রতিক অবস্থান অনুযায়ী, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এই বকেয়া পরিশোধ “অসম্ভব” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার যদি বকেয়া পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে এটি কয়েকটি কিস্তিতে পরিশোধ করা হতে পারে, যাতে আর্থিক চাপ কম হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৩৪,৪০২ কোটি টাকার বকেয়া তিন বছরে তিনটি কিস্তিতে পরিশোধ করা হলে প্রতি বছর প্রায় ১১,৪৬৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

বকেয়ার প্রভাব
যদি বকেয়া পরিশোধ করা হয়, তবে এটি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক স্বস্তি আনবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন কর্মচারীর মূল বেতন যদি ৩০,০০০ টাকা হয়, তবে ১১% ডিএ বৃদ্ধির জন্য ১৮ মাসে তিনি প্রায় ৫৯,৪০০ টাকার বকেয়া পাবেন। নিম্ন স্তরের কর্মচারীদের জন্য, যেমন ১৮,০০০ টাকা মূল বেতনের ক্ষেত্রে, বকেয়া হবে প্রায় ৩৫,৬৪০ টাকা। এই অর্থ জীবনযাত্রার ব্যয় মোকাবিলায় সহায়ক হবে, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির এই সময়ে।

Advertisements

এছাড়া, বকেয়া পরিশোধ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অতিরিক্ত আয় কর্মচারীদের হাতে এলে ভোগ্যপণ্য এবং পরিষেবার চাহিদা বাড়বে, যা খুচরা এবং অন্যান্য খাতে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। তবে, সরকারের জন্য এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ এটি অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাজেটের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

সরকারের অবস্থান এবং কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া
২০২৫ সালের আগস্টে সরকার বকেয়া পরিশোধের দাবি প্রত্যাখ্যান করায় কর্মচারী সংগঠনগুলি হতাশা প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করছে যে মহামারীর সময় কর্মচারীরা ফ্রন্টলাইন কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন, তাই তাদের এই বকেয়া পাওয়ার নৈতিক অধিকার রয়েছে। কিছু সংগঠন আইনি পথে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে, এবং আগামী মাসগুলিতে এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে ৮ম বেতন কমিশনের আগে সরকার একটি মধ্যবর্তী সমাধানের দিকে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বকেয়ার একটি অংশ এককালীন পেমেন্ট হিসেবে দেওয়া হতে পারে, অথবা নতুন বেতন কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরে এই বকেয়ার প্রভাব বিবেচনা করা হতে পারে। ৮ম বেতন কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ১.৮ থেকে ২.০ হতে পারে, যা মূল বেতন বাড়িয়ে কর্মচারীদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে।

৮ম বেতন কমিশনের আগমনের আগে ১৮ মাসের ডিএ/ডিআর বকেয়া পরিশোধ একটি জটিল বিষয়। সরকারের সাম্প্রতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে এই বকেয়া পরিশোধের সম্ভাবনা কম, তবে কর্মচারী সংগঠনগুলির চাপ এবং সম্ভাব্য আইনি পদক্ষেপ এই বিষয়ে নতুন মোড় আনতে পারে। ২০২৫ সালের শেষের দিকে সরকারের ঘোষণা এবং ৮ম বেতন কমিশনের কাঠামোর উপর নির্ভর করবে এই বকেয়ার ভবিষ্যৎ। কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, এবং তারা সরকারি ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করছেন। এই বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য অর্থ মন্ত্রক এবং ডিওপিটি-এর অফিসিয়াল চ্যানেলগুলির দিকে নজর রাখা উচিত।