৮ম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন (৮ম সিপিসি) নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে। টার্মস অফ রেফারেন্স (ToR) প্রকাশের পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের সংগঠনগুলো বড় ধরনের সংশোধনের দাবি তুলেছে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তার আগে প্রায় এক কোটি কর্মচারী ও পেনশনভোগীর নজর এখন সরকারের প্রতিক্রিয়ার দিকে।
৮ম পে কমিশনের ToR নিয়ে অসন্তোষ:
সরকার চলতি মাসে ৮ম সিপিসির ToR প্রকাশ করার পর থেকেই কর্মচারী সংগঠনগুলো দাবি করছে— নতুন কমিশনের পরিধি থেকে প্রায় ৬৯ লক্ষ পেনশনভোগীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করার নির্দিষ্ট তারিখও সেখানে উল্লেখ নেই। আগের প্রতিটি কমিশনেই এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে লেখা থাকত। সেই কারণেই এবার ToR-এ এই বাদ পড়াকে ‘অভূতপূর্ব’ বলছে কর্মচারীরা।
কনফেডারেশন অফ সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ২৪ নভেম্বরের সার্কুলারে বলেছে, “৮ম সিপিসির ToR-এ কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের পারিশ্রমিক সংশোধন এবং অন্যান্য বিষয়ে স্টাফ সাইডের পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
ডিএ মর্জার, পেনশন সুবিধা ও ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর নিয়ে প্রশ্ন: 8th Central Pay Commission ToR
লোকসভা ও রাজ্যসভায় ইতিমধ্যেই ৮ম পে কমিশন সম্পর্কিত শতাধিক প্রশ্ন জমা পড়েছে। সাংসদরা ToR-এর অসঙ্গতি, ডিএ মर्जার, ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর থেকে শুরু করে বহু পুরনো দাবি তুলতে পারেন। এমপি আনন্দ ভদৌরিয়া দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট উত্তর চেয়েছেন— ৮ম সিপিসি কি আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়েছে? এবং ডিএ কি অবিলম্বে বেসিক পে-তে মিশিয়ে দেওয়া উচিত?
৭ম পে কমিশন ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি কার্যকর হয়েছিল। সাধারণত প্রতি ১০ বছরে একটি নতুন কমিশন গঠিত হয়, তাই ২০২6 সালই স্বাভাবিক সময়। কিন্তু ToR-সংক্রান্ত বিতর্ক, প্রশাসনিক জটিলতা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিলম্বের কারণে বাস্তবায়ন দুই বছর পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।
ওল্ড পেনশন স্কিম চালুর দাবিতেও জোর:
ToR সংশোধনের পাশাপাশি কর্মচারীরা আরও কয়েকটি বড় দাবিও তুলেছেন— ওল্ড পেনশন স্কিম (OPS) পুনর্বহাল, ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর উন্নত করা, পে ম্যাট্রিক্সে স্থবিরতা দূর করা, মহামারির সময়ের ১৮ মাসের ডিএ/ডিআর বকেয়া মুক্তি, সহানুভূতিশীল নিয়োগের সীমা তুলে নেওয়া এবং সরকারি শূন্যপদ পূরণ।
কনফেডারেশন বলেছে, “৫০% ডিএ/ডিআর বেসিক পে/পেনশনে যুক্ত করুন, ১.১.২০২৬ থেকে ২০% ইন্টারিম রিলিফ দিন, NPS/UPS বাতিল করে OPS ফের চালু করুন।”
ডিএ মর্জার নিয়ে চাপ আরও বাড়ছে। কর্মচারী সংগঠনগুলোর দাবি, চলতি তিন দশকে প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় ডিএ বাড়েনি। বর্তমানে ডিএ এমন স্তরে পৌঁছেছে যে ঐতিহাসিকভাবে এই পরিস্থিতিতে স্বয়ংক্রিয় মর্জার হত। শেষবার ডিএ মর্জার হয়েছিল ২০০৪ সালে, যা বেতন ও পেনশন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছিল।
শেষ কথা:
আগামী সপ্তাহে সংসদের অধিবেশন শুরু হলে এই বিতর্কে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান জানা যাবে। প্রায় এক কোটি কর্মচারী ও পেনশনভোগীর ভবিষ্যৎ বেতন, ভাতা ও অবসর সুবিধা অনেকটাই নির্ভর করছে সেই জবাবের ওপর। ৮ম সিপিসি এখন সরকারি কর্মীদের জন্য সবচেয়ে নজরকাড়া বিষয় হয়ে উঠেছে।
